একাগ্রতা আর কঠোর পরিশ্রম। সাফল্য পেতে এর কোনও বিকল্প নেই। সাফল্যের শীর্ষস্তরে পৌঁছতে নেই কোনও শর্টকার্ট। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মুখেই নানা সময়ে উঠে এসেছে এই কথা। প্রতিযোগিতা যেখানে চরম, সেখানে সফল হতে যে পরিশ্রমের চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছতে হবে তা আর নতুন কী ! আর সেই প্রতিযোগিতার নাম যদি হয় IAS,তাহলে প্রস্তুতির জন্য পরিশ্রম ঠিক কতটা হতে হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি ? তবে, নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে IAS-র দরজা পেরোতে সফল হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের নিজমুখে লড়াইয়ের গল্প শুনলে শক্ত রাস্তাটা সুগম হয়ে যেতে পারে। আজ থাকল IAS রীতিকা জিন্দালের সংগ্রাম কাহিনি। 


রীতিকা জিন্দাল। বাড়ি পঞ্জাবের মোগা। ছোট্ট এলাকা। সবসময় সব চাহিদা পূর্ণ হত না। কিন্তু ভবিষ্যতে চূড়ান্ত সফল হওয়ার লড়াইটা যেন নিজের জন্মস্থান আর শৈশবে বেড়ে ওঠা থেকেই অর্জন করে নিতে পেরেছিলেন রীতিকা। ক্লাস টেন ও টুয়েলভে ভালো ফল করেন। CBSE-র নর্দার্ন জ়োন টপার। পরে পড়াশোনার জন্য পাড়়ি দেন দিল্লি। শ্রীরাম কলেজে ভর্তি হন কমার্স নিয়ে। সেখানেও সাফল্যের ধারা বজায় ছিল। ২০১৭ সালে টপ হয়েই কলেজের পড়াশোনার পাট চোকান রীতিকা। 


স্বপ্ন ছিল IAS-হওয়ার। সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতেও দেরি করেননি। তবে, প্রস্তুতি যত কঠিন হচ্ছিল, পাল্লা দিয়ে কঠিন হচ্ছিল তাঁর জীবনের সঙ্গে লড়াইও। রীতিকার বাবা স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করতেন। মা গৃহবধূ। মুখের ক্যান্সার ধরা পড়ে বাবার। গোটা পরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। না ভেঙে পড়েননি রীতিকা। যে বছর গ্র্যাজুয়েট হন, সে বছরই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসতে মনোস্থির করেন। বাবার অসুস্থতা, কষ্ট, নিজের আবেগকে প্রস্তুতিতে বাধা হতে দেননি। তিনটি স্টেজ সফলভাবে পেরিয়ে়ও যান। তবে চূড়ান্ত তালিকায় নিজের নাম খোদাই করে ফেলতে পারেননি। 


না, হাল ছাড়েননি রীতিকা। দ্বিতীয়বারের জন্য ফের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। এবার লড়াই আরও কঠিন ছিল। মুখের ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেলেও নতুন করে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন রীতিকার বাবা। সেবার কষ্ট ভোগ করেন আরও বেশি। বাবা লড়াই করছেন রোগের সঙ্গে। আর রীতিকার লড়াই নিজের সঙ্গে। আসলে দু'জনেই দু'জনের থেকে সাপোর্ট পেতেন তখন- শেয়ার করছিলেন রীতিকা। শেষমেশ IAS-পরীক্ষার আগল ভাঙেন রীতিকা। সারাদেশে র‌্যাঙ্ক ৮৮। 


রীতিকার ৩ টিপস


১. ভবিষ্যৎ পরীক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি টিপস শেয়ার করেছেন রীতিকা। যতই কঠিন পরিস্থিতি সামনে আসুক না কেন, ঘাবড়ানো চলবে না। ভয় পেয়ে পিছিয়ে এলে চলবে না। জীবনে কখন কী হবে, তাতে কারও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই কিন্তু সেই পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই যে কোনও পরিস্থিতি হাসিমুখে সামলাতে হবে।   


২. নিজের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সকে বুঝেশুনে ব্যবহার করতে হবে। যত চাপই আসুক না কেন, পড়াশোনার ট্র্যাক থেকে ছিটকে গেলে চলবে না। খুশিমনে পড়া চালিয়ে যেতে হবে। খুশি থাকলে কী পড়েছেন সহজে মনে রাখা যাবে আর কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে।


৩. রীতিকার তিন নম্বর উপদেশ হল, ব্যর্থতায় হার না মানার। তাঁর মতে, যখন আমরা অসফল হই, আমাদের কাছে দুটি বিকল্প থাকে। এক, হতাশ হয়ে দুঃখে আকুল হয়ে দিন কাটানো। আর দুই, উঠে দাঁড়িয়ে নতুন উদ্যমে ফের শুরু করা। লড়াই লড়তে নেমে ব্যর্থতা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই হতাশ না হয়ে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে এগোনো দরকার। কান্নাকাটি করে সময় নষ্ট করলে আখেরে লাভের লাভ কিছুই হবে না। 


তথ্যসূত্র - এবিপিলাইভ হিন্দি


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI