কলকাতা: করোনাকালে প্রায় ২০ মাস পরে খুলছে স্কুল-কলেজ। আগামী ১৬ নভেম্বর থেকে রাজ্যে খুলছে স্কুল। উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আপাতত অনলাইনেই চলবে পঠনপাঠন।


স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কী বলছেন রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসকেরা? 


এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, 'আমাদের কাছে বহু প্রতীক্ষিত সিদ্ধান্ত। খানিকটা পড়াশোনা অনলাইন হয়েছে। অনলাইন পড়াশোনা হলেও তাতে অনেক সমস্যা ঘটেছে। আবার দৈনন্দিন স্কুল কলেজ চালু করা জরুরি হয়েছিল। এটা মুখ্যমন্ত্রীর খুব ভাল সিদ্ধান্ত। একেবারে নষ্ট হতে বসেছিল পড়াশোনা। শুধু তাই নয়, শিশুদের শৈশব নষ্ট হয়ে গিয়েছে অনেকটা।' 


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, 'এই নির্দেশকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। কারণ আমি সবসময় মনে করেছি যে অনলাইনে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা অনেকসময় দূর-দূরান্তে থাকেন, সমাজের নিচু তলা থেকেও অনেকে আসেন। তাঁদের পক্ষে ডিজিটাল ডিভাইস রাখা সম্ভবপর হয় না। ফলে তাঁরা অনলাইন ক্লাস করতে পারেন না। অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। এখন যেহেতু অতিমারীর রাশটা একটু কমছে, রাজ্য সরকারের বিধি মেনে স্কুল কলেজ খুললে আমার মনে হয় ছাত্রছাত্রীদেরও সুবিধা হবে এবং মাস্টারমশাইদেরও সুবিধা হবে।'


প্রায় একই বক্তব্য শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারেরও। তিনি বলেন, 'সকলকে স্বাগত জানাই। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। সামাজিক, মনোস্তাত্ত্বিক নানারকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শিক্ষকেরা চাইছিলেন এবং ছাত্রছাত্রীরাও হয়তো চাইছিল। ফলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।' 


অন্যদিকে চিকিৎসক কুণাল সরকারের বক্তব্য, 'সর্বতভাবে আমার মনে হয় এটা ঠিক সিদ্ধান্ত। আমাদের সকলের জন্য বেঁচে থাকাটা যেমন দরকার, তেমনই একইভাবে প্রয়োজন শিক্ষাও। গত ২ বছর ধরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড পুরো গুঁড়িয়ে গেছে। যেখানে আমাদের ডিজিট্যাল কানেক্টিভিটি খুব বেশি হলে ১০-১১ শতাংশে, সেখানে আমরা অনলাইন এডুকেশন করে কিছু পুতুল খেলা করেছি। বিশেষ করে যাঁরা শহরতলি, গ্রাম ও জেলার ছেলেমেয়েরা, তাঁদের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যহত হয়েছে। ঠিক যেন তিন পা এগিয়ে চার পা পিছিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। তাই এই ব্যাপারটা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা প্রয়োজন।'


স্কুল খোলার খবর শুনে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর তাৎক্ষণিক অনুভূতি ঠিক যেন 'অনেকদিন পর বৃষ্টি' হওয়ার মতো। তাঁর মতে, 'আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে, অনেকদিন পরে যেন বৃষ্টি এল। সামগ্রিকভাবে যদি ভাবা যায়, আমার মনে হয় স্কুল-কলেজ খুলতে হবে। গত দেড় বছর ধরে বাচ্চাদের যে লোকসান হয়েছে তা মেরামত করতে হবে খুব দ্রুত। এটি ভীষণ প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত। শিশুদের শিক্ষার ক্ষতি, দীর্ঘদিনের তাঁদের ভাবনার ক্ষতি, হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের ক্ষতি। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। তবে স্কুল খোলার পর কিছু শিশু আক্রান্ত হতে পারে, সেই ব্যাপারেও আমাদের তৈরি থাকতে হবে।'


এ বিষয়ে চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, 'আমরা যদি বিজ্ঞানের দিকে তাকিয়ে দেখি, ৬৭ শতাংশ ১৮ বছরের বয়সের নীচে থাকা শিশু বা কিশোরদের মধ্যে সেরো পজিটিভিটি আছে। আশা করা যায় এতদিনে সেটা একটু বেড়েছে। প্রত্যেকটা শিশুই ভ্যাকসিন না নিয়ে পুজোর সময় বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ঘুরে বেড়িয়েছে। আজ তাঁরা প্রাইভেট টিউশনেও যাচ্ছেন। সেখানে স্কুল খোলাটা প্রয়োজনীয়। কারণ স্কুল না খুললে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আটকে যাবে।'


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI