কলকাতা: WBCS মেনসের একাধিক বিষয় থাকে। মূল বিষয়গুলির পাশপাশি আরও একটি দিক রয়েছে। যা হল অপশনাল বা ঐচ্ছিক। তবে তার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। কারা পড়বেন অপশনাল? WBCS পরীক্ষায় অপশনালের গুরুত্ব কতটা? কতটাই বা স্কোরিং অপশনাল? তা নিয়েই এবিপি লাইভে আলোচনা করলেন WBCS অফিসার নির্মাল্য পাল। যিনি বর্তমানে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ডিস্ট্রিক্ট এমপ্লয়িমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত।


এবিপি লাইভ: কারা পড়বেন অপশনাল সাবজেক্ট?


নির্মাল্য পাল: মূলত A,B,C, D এই চারটি গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে সিলেকশন হয়। A, B গ্রুপে যাঁরা টার্গেট করবে তাঁদের জন্য অপশনাল সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক। যাঁরা C, D টার্গেট করবেন তাঁরা অপশনাল পরীক্ষা নাও দিতে পারেন। তবে অনেক সময় দেখা ছাত্রছাত্রীরা ভাবেন যে প্রথমবার C  বা D টার্গেট করব। পরে A বা B গ্রুপের জন্য টার্গেট করব। তাঁদের জন্য আমার সাজেশন, একদম শুরু থেকেই অপশনালের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। সবারই শেষ লক্ষ্য এক্সিকিউটিভ সার্ভিস বা ডিএসপি। শুরু থেকেই অপশনালের প্রস্তুতি নিলে বাকি পথটাও মসৃণ হবে। ২০১৬ সালে অপশনালের প্রস্তুতি নিতে আমিও ভয় পেয়েছিলাম। তাই Group C –এর জন্য পড়া শুরু করি। পরে অবশ্য সেই ভয় কাটিয়ে অপশনালের প্রস্তুতি নিই। এমনকি A Group এর জন্য ইন্টারভিউ কলও পেয়েছিলাম। তার পরের বার A Group এর জন্য নির্বাচিত হয়।


এবিপি লাইভ: WBCS এ অপশনালের গুরুত্ব ঠিক কতটা?


নির্মাল্য পাল: WBCS মেনসে Paper 1, Paper 2 মিলিয়ে ৪০০ নম্বর আছে। A, B Group এর জন্য অপশনাল শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, এটা ডিসাইডিং ফ্যাক্টর। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থী নির্বাচিত হবেন কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করছে অপশনালে প্রাপ্ত নম্বরের উপর। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে যে MCQ পেপারে যাঁরা সিরিয়াস ক্যান্ডিডেট তাঁরা কম বেশি কাছাকাছি নম্বরই পাচ্ছে। এই অপশনাল পেপারটাই অ্যাডভান্টেজ দেবে।


এবিপি লাইভ: মূলত কোন কোন বিষয় থাকে অপশনালের তালিকায়?


নির্মাল্য পাল: প্রায় ৩৭টার মতো বিষয় রয়েছে। যা থেকে অপশনাল বেছে নেওয়া যায়। যেমন ভাষা বিষয়ক যে বিভাগের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, সংস্কৃত, উর্দু, তুলনামূলক সাহিত্য রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে আছে অঙ্ক, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বোটানি, জুলজি, ফিজিওলজি, এগ্রিকালচারের মতো বিষয়। কলা বিভাগের ক্ষেত্রে আছে ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড যাঁদের তাঁদের জন্য রয়েছে, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। সমাজ  বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে আছে, সোশিওলজি, অ্যান্থ্রোপলজি, সাইকোলজির মতো বিষয়।


এবিপি লাইভ: এক্ষেত্রে Aspirants কাছে কোন কোন সাবজেক্ট স্কোরিং হতে পারে?


নির্মাল্য পাল: আসলে এটা পুরোটা ব্যক্তি বিষয়ে নির্ভর করে। কারোর হয়ত স্নাতক স্তরে ফিজিক্স ছিল, কিন্তু অপশনাল অ্যান্থ্রোপলজি বেছে নিল। এবার দেখা যায় যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে তাঁর বায়োলজি বিষয়টা ভাল লাগত না। সেক্ষেত্রে অপশনাল নেওয়ার পর দেখা যায় সেটা আর ভাল লাগছে না। স্কোরিং না হয় উল্টোটা হতে পারে। কারো হয়ত ব্যাকগ্রাউন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু ছোট থেকে ইতিহাস পড়তে ভাল লাগত, এবার সে অপশনাল হিসেবে ইতিহাস বেছে নিলে হয়ত ভাল নম্বর পেতে পারে। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য যে বিষয়ই নিই না কেন তাতে যেন আগ্রহ থাকে। তাহলেই কিন্তু ওই বিষয় থেকে জ্ঞানটা নিতে পারব। আর তার প্রতিচ্ছবি খাতায় থাকবে।


এবিপি লাইভ: কীভাবে বেছে নেবেন অপশনাল?


নির্মাল্য পাল: এই বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক রকম সাজেশন আসে। যে পরীক্ষা দিচ্ছে সে খুব দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হল, আমারও কিছু স্ট্র্যাটেজিগত ঘাটতি ছিল। প্রথমবার যখন পরীক্ষা দেব বলে ঠিক করি এক সিনিয়র গাইড করেন, সোশিওলজি নিতে পারি। যেহেতু আমি চাকরিও করতাম, ফলে সময় বিশেষ পেতাম না। সিলেবাস কম হওয়ায় সোশিওলজি বেছে নিই। ২০১৬, ২০১৭ দুবছরই প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিই। ২০১৬ সালে A Group –এ ইন্টারভিউ কল পেলও সিলেক্ট হইনি। ওই বছরই অ্যান্থ্রোপলজি নিয়ে অনেকেই সিলেক্ট হয়েছিলেন। অথচ বাকি অপশনাল বিষয়ের সিলেবাস দেখিনি। একাধিক বিষয়ের সিলেবাস দেখে, এরপর অ্যান্থ্রোপলজি নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করি। ২০১৮ সালের পরীক্ষা অ্যান্থ্রোপলজি নিয়ে দিই। এই ভুলটা না করলে ঠিক পথে যেতে পারতাম। অনেকটা সময় ব্যয় হত না। তাই অপশনাল বেছে নেওয়ার আগে, নিজের পছন্দ বা পরিস্থিতিকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি সিলেবাসটাও খুঁটিয়ে দেখতে হবে।


এবিপি লাইভ: এক্ষেত্রে কি কোনও নিয়ম আছে?


নির্মাল্য পাল: এক্ষেত্রে পর্যালোচনার করার জায়গা আছে। সেটা ধাপে ধাপে করতে হবে। নিজের যে স্নাতক স্তরের বিষয় রয়েছে তাকে প্রাধান্য দেওয়া ভাল। কারণ ৩ বছর স্নাতক বা পরবর্তীকালে স্নাতকোত্তর স্তরেও সেই বিষয় থাকলে বিষয়ের সঙ্গে পরিচিতি হয়ে যায়। অন্যদিকে স্নাতক স্তরের পর আইটিতে কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে লেখাপড়ার একটা গ্যাপ তৈরি  হয়ে যায়। ৪ বছরের পড়া সাধারণত মনে থাকে না। অনেকে আবার দেরিতে প্রস্তুতি শুরু করে। GS পেপারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যে বিষয় আছে যেমন ইতিহাস, ভূগোল, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ইকোনমিকস বেছে নেওয়া যেতে পারে। তাতে দুটি ক্ষেত্রে একইসঙ্গে প্রস্তুতি সম্ভব। আরেকদিকে কিছু অপশনাল আছে যা সবাই বেছে নেয়, সোশিওলজি, অ্যান্থ্রোপলজি, সাইকোলজির মতো বিষয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বই নিয়ে পড়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যেতে পারে কোন বিষয়  আমার পড়ার জন্য ভাল। এক্ষেত্রে দু-তিন বিষয়ের বই নিয়ে পর্যালোচনা করলে অপশনাল বেছে নিতে সুবিধা হবে।


এবিপি লাইভ: অপশনালের প্রস্তুতি কীভাবে শুরু করা উচিত ?


নির্মাল্য পাল: প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্ট্য়াটেজি থাকা উচিত। প্রথমেই মনে রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিলেবাস যেন জানা থাকে। তাহলে কোনটা বাদ দেব, কোনটা দেব না। অথবা কোনটা আগে বা পরে পড়ব সেই সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। বিষয় বেছে নেওয়ার পর ওই বিষয় সংক্রান্ত যে বই বা নোটস রয়েছে তা সংগ্রহ করতে হবে। তুলনামূলকভাবে সিলেবাসের সহজ অংশ বলে যেটা মনে হচ্ছে সেখান থেকে পড়া শুরু করা উচিত। যেমন অ্যান্থ্রপলজির ক্ষেত্রে পেপার টু-এর যে সহজ জায়গা রয়েছে তা থেকে পড়লে পড়াটা সহজ হবে। গুরুত্বপূর্ণ কোন অংশ তা বুঝতে গেলে পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন দেখতে হবে। তবে সিলেবাস পুরোটাই শেষ করতে হবে এটা মাথায় রাখতে হবে। এর পাশাপাশি নোটসও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেসব জায়গায় ম্যাপ, ফ্লোচার্ট, ডায়াগ্রাম দেওয়া যেতে পারে, সেখানে দিতে হবে। পাশাপাশি সময়ও বাঁচবে। কারেন্ট অ্যাফায়ার্স সম্পর্কিত বিষয় যদি খাতায় লিখতে পারি তাতেও কিন্তু ভাল নম্বর পাওয়ার জায়গা থাকে। ধরা যাক প্রশ্ন এসেছে আদিবাসীদের জন্য সরকারের কী কী প্রকল্প রয়েছে?  এক্ষেত্রে পড়ার বাইরে সাম্প্রতিককালে এরকম কোনও প্রকল্প সরকারের থাকলে তাও লিখে দেওয়া যেতে পারে। তাতে পার্থক্য তৈরি হবে। একইসঙ্গে প্রতিদিন উত্তর লেখার অভ্যেস রাখতে হবে যাতে পরীক্ষার সময় সব প্রশ্নের উত্তর লেখা যায়।


এবিপি লাইভ: WBCS এর ইন্টারভিউতে কি Optional Subject নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়?


নির্মাল্য পাল: মেনসের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গেই ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতিও নেওয়া উচিত। অপশনাল সাবজেক্ট সম্পর্কিত বিষয় ইন্টারভিউতে জানতে চাওয়া হয়। মূলত বেসিক কিছু প্রশ্নই আসে। অন্যদিকে কিছু কমন প্রশ্নও আসে, যেমন হয়ত কারোর ব্যাকগ্রাউন্ড ফিজিক্স, কিন্তু অপশনাল সাবজেক্ট অ্যান্থ্রপলজি। জানতে চাওয়া হয় কেন এই বিষয় বেছে নিল তা জানতে চাওয়া হয়? সেটা ঠিকভাবে উত্তর দিতে হবে। আরেকটা দিক আমার অপশনাল সাবজেক্ট কীভাবে কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে?


এবিপি লাইভ: ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনও সাজেশন?


নির্মাল্য পাল: প্রথমেই মনে রাখতে হবে স্ট্র্যাটেজিগত গ্যাপ না থাকে। বিষয় বেছে নেওয়ার আগে পর্যালোচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা সময়সাপেক্ষ হলেও এই পদ্ধতি বেছে নেওয়া ভাল। আরেকটা বিষয় হল অপশনাল বিষয় পড়ার জন্য একটা গ্রুপ করে অনেকে একসঙ্গে পড়লে পড়া সহজ হবে। এই পদ্ধতি আমিও অবলম্বন করেছিলাম। তাতে আমি নিজেও উপকৃত হয়েছিলাম।


আরও পড়ুন: WBCS Exam Preparation: WBCS পরীক্ষায় লক্ষ্য়ভেদ! ভয় নয় গল্পের ছলেই পড়া শুরু হোক ইতিহাস


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI