নয়াদিল্লি : নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত 'ক্যারিশ্মা' কি ফিকে হচ্ছে ? ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের ফল সামনে আসার পর অন্তত এনিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে যেখানে BJP একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করেছিল, এবার সেই সাফল্য ধরে রাখতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে তারা। এবার এককভাবে ২৪০টি মতো আসন পেয়েছে বিজেপি। অথচ, ম্যাজিক ফিগার ২৭২। কাজেই, NDA-র শরিক দলগুলির উপর নির্ভর করে থাকতে হবে তাদের। আর এখানেই তেলুগু দেশম পার্টি ও জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর মতো শরিকদের গুরুত্ব বাড়তে চলেছে জাতীয় রাজনীতিতে। 'কিং মেকার' হতে পারেন চন্দ্রবাবু নায়ডু ও নীতিশ কুমাররা। অন্যদিকে, যে বারাণসী কেন্দ্রে এর আগের দু'বার মোদি বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন, সেখানে এবার তাঁর তিন গুণের বেশি ভোট কমেছে। একের পর এক সভায় মোদি '৪০০ পার'-এর স্লোগান তুললেও তা কার্যত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শরিক-নির্ভরতা বাড়তে বাধ্য বিজেপির। কিন্তু, জোট সরকার গড়লে তাতে স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়বে টানাপোড়েন। এ ক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে আসছে, NDA-র শরিক দলগুলি শেষ পর্যন্ত BJP-র সঙ্গে থাকবে তো ? 'শর্ত' নিয়ে টানাপোড়েন কোন দিকে যায় সেদিকে তাকিয়ে দেশবাসী।


তেলুগু দেশম পার্টি-


১৯৯৬ সালে প্রথমবার NDA-তে যোগ দেয় TDP। সেইসময় তরুণ নেতা ছিলেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। তাঁর হতে ধরে সেইসময় কার্যত IT-প্রশাসনের সূত্রপাত হয়। ২০১৮ সালে TDP NDA ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর অনেক সমস্যায় পড়েছে। ২০১৮ সালে তেলঙ্গানা বিধানসভায় তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২টিতে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় ২৩টিতে। এরপর ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে UPA-তে যোগ দেয় TDP। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফের NDA-তে প্রত্যাবর্তন করে দল। এই পরিস্থিতিতে এবার বিধানসভা নির্বাচনে অন্ধ্রপ্রদেশে ১৭৫টি আসনের মধ্যে কার্যত ১৩৪টিতে এগিয়ে থেকেছে TDP। অন্যদিকে, রাজ্যে ১৬টি লোকসভা আসনেও এগিয়ে চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল। প্রায় দুই দশক পর কার্যত 'কিং মেকার'-এর ভূমিকা নিতে চলেছেন নায়ডু।


এদিকে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, I.N.D.I.A ব্লকের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ফোন গেছে নায়ডুর কাছে। এই পরিস্থিতিতে BJP-কে সরকার গঠনে সাহায্য করতে একাধিক মন্ত্রকের দাবি করতে পারে TDP। অন্তত, দু'টি কারণ নিয়ে চাপ রয়েছে এক্ষেত্রে। প্রথমত, রাজ্য ভেঙে যাওয়ার পর এবং ওয়াই এস রেড্ডির প্রয়াণের পর দল ভেঙে যাওয়ার পর অন্ধ্রপ্রদেশে এখনও পর্যন্ত হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পায়নি কংগ্রেস। দ্বিতীয়ত, নায়ডু রাজ্যজুড়ে প্রচারে মোদির এবং বিজেপির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী জনাদেশ পেয়েছেন। এবার সেই পথে না হাঁটলে ভবিষ্যতে রাজ্য এবং জাতীয় রাজনীতিতে তার ফল ভুগতে হতে পারে।


 জনতা দল (ইউনাইটেড)-


নীতিশ কুমারের ক্রমাগত অবস্থান বদল জাতীয় রাজনীতিতে এক চর্চার বিষয়। একসময় বিরোধী মঞ্চে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে অন্যতম দাবিদার হিসাবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু, ক্রমাগত শিবির বদলে সেই চর্চা ফিকে হয়েছে। অটল বিহারী বাজপেয়ি জমানায় NDA-তে অন্যতম মুখ ছিলেন নীতিশ। তাঁর মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থেকেছেন। ২০১৪ লোকসভা ভোটের সময় থেকে অবশ্য তিক্ততা তৈরি হয়। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে 'ধর্মনিরেপেক্ষতার' ভাবমূর্তির অভাবে অভিযোগ তুলে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের বিরোধিতাও করেছিলেন। সেই তত্ত্বে ২০১৩ সালে তিনি NDA ছাড়েন। একসময় তাঁর "সুশাসন বাবু" ভাবমূর্তিকে কেন্দ্র করে অনেকে তাঁকে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদে অন্যতম দাবিদার বলে তুলে ধরতে থাকেন। 


২০১৫ সালে বিহার লোকসভা ভোটে মহাগাঁঠবন্ধন তৈরি হয়। সেই সময় তাঁর ভাবমূর্তি আরও মজবুত হয়। এই শিবিরে একমঞ্চে আসে কংগ্রেস, আরজেডি, জেডি(ইউ) ও বাম দলগুলি। একা পড়ে যায় বিজেপি। ২০১৭ সালে সেই জোট ভেঙে দেন নীতিশ। একসময়ে তাঁর কট্টর বিরোধী লালু প্রসাদের দলের সঙ্গে মিলেজুলে কাজ করতে ব্যর্থ হন। ২০২২ সালে আবার সেই মহাগাঁঠবন্ধনে ফিরে আসনে তিনি। ২০২৪ সালে ফের যোগ দেন NDA-তে।


বারংবার এই শিবির বদলে নীতিশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন বলে ধারণা তৈরি হয়। কিন্তু, বিহারের ১২টি আসনে এগিয়ে থেকে সেই ধারণায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছেন নীতিশ। এখন তিনি চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতোই 'কিং মেকার' হয়ে উঠতে পারেন। বিজেপিরও প্রয়োজন জেডি(ইউ)-র সমর্থন। কারণ, ফলের নিরিখে NDA-তে তারা তৃতীয় বৃহত্তম শরিক। কিন্তু, নীতিশের রেকর্ড অনুযায়ী, তাঁর সমর্থন স্থায়ী নাও হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। এমনকী I.N.D.I.A ব্লকে গেলে তাঁর দাবিদাওয়া বাড়তে পারে বলে অনেকের অনুমান।