অর্ণব মুখোপাধ্য়ায়, সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায় ও সুমন ঘরাই, কলকাতা: গত ১ মাস ধরে রাজ্যে ভোট সন্ত্রাসে মৃত্যুমিছিল। ৩৫ দিনে রাজ্যে মৃত্যু হল ৪৭ জনের। এর মধ্যে যেমন বিরোধী দলের কর্মীরা রয়েছেন, রয়েছেন তৃণমূলের কর্মীরাও। ভোটগণনার দ্বিতীয় দিনেও মৃত্যু হল ৭ জনের। 


মৃত্যুমিছিল...
এ যেন লাশের পাহাড়। ভোট ঘোষণার পর মৃত্য়ু! মনোনয়ন পর্বে মৃত্য়ু! ভোটের দিন মৃত্য়ু! গণনার পরও মৃত্য়ু! অন্তহীন মৃত্য়ুমিছিল! হিসেব বলছে, সব মিলিয়ে গত ৩৫ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বললেন, 'কয়েকটা মাত্র জেলায় গণ্ডগোল হয়েছে। বিরোধী পক্ষ জোট বেধে মেরেছে। আমাদের বেশী কর্মী মারা গেছে। রাম-বাম-শ্য়াম আরেকটি দল মিলে অশান্তি করেছে। মৃতদের পরিবারকে আমরা ২ লক্ষ টাকা করে দেব এবং হোমগার্ডের চাকরি দেব।' কিন্তু তাতে প্রিয়জন চলে যাওয়ার যন্ত্রণা কতটা কমবে? ভোটগণনার দ্বিতীয় দিনও প্রাণহানির ঘটনা আটকানো যায়নি। এদিন ভাঙড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ২ জন আইএসএফ কর্মীর। সন্ত্রাসের ভাঙড়ে খুন হতে হয় এক সাধারণ গ্রামবাসীকেও। আইএসএফের দাবি, জেলা পরিষদের ৮৩ নম্বর আসনে তাদের প্রার্থী জাহানারা খাতুন জিতে যাওয়ায় পুনর্গণনার দাবি তোলে তৃণমূল। অভিযোগ, জয়ের শংসাপত্র দিতে টালবাহানা শুরু করেন বিডিও। এর পর জোর করে তৃণমূল প্রার্থী খাদিজা বিবিকে জিতিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়ে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে গন্ডগোল চরমে ওঠে। সেইসময় গণনা কেন্দ্রেই ছিলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে হাকিমুল। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় আইএসএফ কর্মীদের। শুরু হয় বোমাবাজি। গুলিও চলে। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান দুই আইএসএফ কর্মী হাসান মোল্লা, রেজাউল গাজি। একই সময়ে প্রাণ হারান রাজু মোল্লা। পরিবারের দাবি, রাজু ক্তি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন না। একই দিনে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর কথা জানা যায়। চাঁদপাশা এলাকার পুকুর থেকে বছর ৪০-এর তৃণমূল কর্মী বিপ্লব হালদারের ক্ষতবিক্ষত দেহ  উদ্ধার হয়। মথুরাপুর ২ নম্বর ব্লকের কাশীনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদপাশা এলাকার ১০৫ নম্বর বুথের বাসিন্দা ছিলেন বিপ্লব। এই বুথে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হন। অভিযোগ, তারপর থেকেই তৃণমূল কর্মীকে হুমকি দিচ্ছিল বিজেপি। এতেই শেষ নয়। 
তা ছাড়াও মালদার রতুয়ায় ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের শিকার হন এক কংগ্রেস কর্মী।  রামপুর গ্রামে তাঁকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, চাঁচলে খুন হন তৃণমূল কর্মী। আবার, বুধবারই আপ্রাণ লড়াইয়ের পর এসএসকেএমে মারা গেলেন সাগরদিঘির আক্রান্ত কংগ্রেসকর্মী রাজেশ শেখ। ভোটের দিন জখম হয়েছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে গণনার দ্বিতীয় দিনও রাশ পরানো গেল না মৃত্যুমিছিলে।


আরও পড়ুন:মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরিয়েছিলেন রাজু, ভাঙড়ে প্রাণ গেল গোলাগুলিতে !