বসিরহাট: লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে ফের সরব হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে বাংলা বনাম বাংলা বিরোধীদের মধ্যেকার লড়াই বলে উল্লেখ করেছেন অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজের ১০ পয়সাও বাংলাকে দেয়নি কেন্দ্র। তাই এত আস্ফালন সত্ত্বেও শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারছে না তারা। (Abhishek Attacks BJP)


বুধবার বসিরহাটে দলের হয়ে সভা করেন অভিষেক। তিনি বলেন, "এই নির্বাচন তৃণমূলকে জেতানোই শুধু লক্ষ্য হলে হবে না। ১০ বছর ধরে যারা কেন্দ্রে ক্ষমতায়, ২০১৪ সাল থেকে যারা বলেছিল অচ্ছে দিন আসবে, তাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ডটা কোথায়? ১৪ তারিখ জলপাইগুড়িতে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসতে বলেছিলাম। আপনারাই বলুন, ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি, মানুষকে রিপোর্ট কার্ড দেখানো উচিত কি না?"


অভিষেক আরও বলেন, "প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ দিনে পাঁচ বার বাংলায় এসেছেন। উনি বলেছেন, আবাসে কেন্দ্র রাজ্যকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। আমি শুনে বললাম, বাহ্, দেশের প্রধানমন্ত্রী এভাবে মিথ্যে বলতে পারেন, জানা ছিল না। আমি বিজেপি-কে চ্যালেঞ্জ করেছি, ২০২১ সালে বাংলায় হেরে যাওয়ার পর ২০২৪ সাল পর্যন্ত আবাসে কোনও টাকা দিয়েছে বলে যদি প্রমাণ করতে পারে, আমি রাজনীতির আঙিনা পা রাখব না।"


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee News : লোকসভা ভোটের আগে অভিষেকের সুপ্রিম-স্বস্তি, এই তারিখ অবধি দিল্লিতে ডাকতে পারবে না ED


অভিষেক জানান, ২০২১ সালের বিধানসভায় হেরে যাওয়ার পর ১০০ দিন হোক বা আবাস যোজনা, ১০ পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র। তাঁর দেওয়া চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারেনি বিজেপি। অভিষেকের কথায়, "বড়, মেজো, সেজো, ছোট কারও ক্ষমতা হয়নি শ্বেতপত্র প্রকাশের। এরা বাংলার মানুষকে গ্য়ারান্টি দিচ্ছে। টাকা দিয়ে থাকলে কাগজ দেখান। ক্ষমতা থাকলে আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন টাকা দিয়েছেন। আমি বলেছি, বাংলায় হারার পর থেকে ১০ পয়সাও দেয়নি। শ্বেতপত্র প্রকাশ করে দেখাতে পারলে রাজনীতিতে পা রাখবে না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। চিরতরে বিদায় নেবে রাজনীতি থেকে।"

বিজেপি-কে এদিন বাংলা-বিরোধী বলেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। বলেন, "বিশ্বের সবচেয়ে বড় দল বলে নিজেদের দাবি করে বিজেপি। যারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দল, যাদের সঙ্গে ইডি, সিবিআই, বিচারব্যবস্থার একাংশ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, নির্বাচন কমিশন, আধা সামরিক বাহিনী, টাকা, সংবাদমাধ্যমের একাংশ রয়েছে, তাদের ক্ষমতা হচ্ছে না আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার? চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারছে না কারণ ওরা বাংলার টাকা আটকে রেখেছে। তাই বিজেপি-কে বাংলা বিরোধী বলছি আমরা। বাংলার গরিব মানুষের, কৃষকের, মানুষের মাথার উপর ছাদের, সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা যারা আটকে রাখে, তারা বাংলা বিরোধী।  আমরা ওদের পাপের টাকা মিটিয়েছি। এই বাংলা বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, উচিত শিক্ষা দিতে হবে। এই নির্বাচন কেন্দ্রের সরকার নির্বাচিত করার নির্বাচন নয়, এই নির্বাচন বাংলা বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই।"


প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা, বছরে ২ কোটি চাকরি, যাঁর আমলে মূল্যবৃদ্ধি চরমে, যাঁর আমলে ভারত জুড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, মানুষ তাঁর গ্যারান্টি নেবেন, না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে বিশ্বাস করবেন, সেই সিদ্ধান্ত মানুষের উপর ছাড়লেন বলেও এদিন জানান অভিষেক। সন্দেশখালি নিয়েও এদিন সরব হন অভিষেক। জানান, ED বা CBI নয়, সন্দেশখালিকাণ্ডে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশই। অভিষেক জানান, সারদাকাণ্ডে সুদীপ্ত সেনকেও ED-CBI ধরেনি, রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা অন্যা করে থাকলে, কাউকে রেয়াত করা হয় না। কেন্দ্রীয় সরকার যেমন মহিলা কুস্তীগীরদের শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণকে সংসদে বসিয়ে রেখেছিল, রাজ্যের সরকার তা করেনি। সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারকে কেন CBI হেফাজতে নিচ্ছে না, প্রশ্ন তোলেন অভিষেক।