গন্ডগোল এবারও হয়েছে। রক্ত এবারও ঝরেছে। তবুও ভাঙড়বাসীর কাছে এবারের ভোট যেন একটু আলাদা ঠেকছে। কারণ, এতদিন এই মানুষগুলো শাসক বনাম বিরোধীর লড়াই দেখেছেন। এবার সেই দ্বন্দ্বের আগুন শাসকের ঘরে। মার খাচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থীর অনুগামীরা। আবার অভিযোগও উঠছে তৃণমূলেরই বিরুদ্ধে।
তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের অনুগামীদের বিরুদ্ধে মারধরের এই অভিযোগ যাঁরা করছেন, তাঁরা কিন্তু বিরোধী দলের কেউ নন! এরা তৃণমূলেরই কর্মী! রেজ্জাক মোল্লার অনুগামী। শনিবার সকালে ভোট শুরুর পরই, ভাঙড়ের সাতুলিয়ায় একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষ বাধে। জখম হন চারজন তৃণমূল সমর্থক।
এরপরই কার্যত বোমা ফাটান ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী রেজ্জাক মোল্লার অনুগামী ওই জখম তৃণমূলকর্মীরা। তাঁদের দাবি, আরাবুল ইসলামের লোকজনই তাঁদের মারধর করেছে। সান্টু মোল্লা নামে এক জখম তৃণমূলকর্মী দাবি করেন, আরাবুল তলে তলে চাইছে আমাদের প্রার্থী হেরে যাক। তাঁর অভিযোগ, আরাবুলের লোকেরা মেরেছে। একই সুর আহত তৃণমূলকর্মীর পরিবারের গলাতেও। আর খোদ রেজ্জাক মোল্লার গলাতেই দলীয় সতীর্থ আরাবুল সম্পর্কে শ্লেষের সুর! তিনি বলেন, আরাবুল আগে ফ্যাক্টর ছিল। এখন ট্র্যাক্টর।
অনেকে কটাক্ষের সুরে বলছেন, রেজ্জাকের গলায় এটা শ্লেষ, না কি অর্ন্তঘাতের আশঙ্কার প্রচ্ছন্ন সুর? আর তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভাঙড়ে ভোট হচ্ছে, তাঁর ভূমিকা নিয়ে এত কথা হচ্ছে, অথচ আরাবুল ইসলামকে দিনভর চোখেই পড়ল না! রেজ্জাক দৌড়চ্ছেন! তিনি উধাও! শুধু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আরাবুল দাবি করছেন, এই ঘটনায় আমার অনুগামীরা জড়িত নয়। সিপিএম পরিকল্পনামাফিক এই কাজ করেছে।
এই আরাবুলের উপরই একদা জাতশত্রু রেজ্জাক মোল্লাকে জেতোনার দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! তাও কেন আরাবুল ঘরবন্দি? তাহলে কি রেজ্জাক রং পাল্টে সবুজ হলেও, আরাবুলের চোখে এখনও তিনি লাল? রেজ্জাক বলছেন, ইচ্ছে হয়েছে ঘরে বসে আছে। দলের বিরোধিতা করলে দল শাস্তি দেবে।
কিন্তু, ভাঙড়ে দাঁড়িয়ে কি আরাবুলকে উপেক্ষা করা সম্ভব রেজ্জাকের? না কি, অনুগামীদের মন যাতে ভেঙে না যায়, তাই এই সাহসী মন্তব্য? আরাবুল নেই দেখেই কি কমিশনের বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাঙড়ের হাতিশালা, ভোজেরহাট, পাকুড়াইয়ের মতো এলাকায় কর্মীদের সঙ্গে মোটরবাইকে চক্কর কাটলেন ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী? চক্কর তো কাটলেন, টক্করে পারলেন কি? উত্তর মিলবে ১৯ মে।