কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ্য়মন্ত্রী পদে পছন্দ অধিকাংশ রাজ্যবাসীর। নানা ইস্যুতে গত ১০ বছরের তৃণমূল জমানায় রাজ্যবাসীর একাংশের মনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। একাধিক দুর্নীতির ইস্যু, গণতন্ত্র হত্যার অভিযোগ তুলে লাগাতার শাসক দল, সরকারকে কোণঠাসা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে উঠে আসা বিজেপি। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন জিতে তারা এবার ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে পালাবদল ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে। এপ্রিলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট শেষ করে ফেলতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। ভোট-যুদ্ধের দামামা প্রায় বেজেই গিয়েছে। অপেক্ষা এখন দিনক্ষণ ঘোষণার। এই পরিস্থিতিতে বাংলার মানুষ কী ভাবছে, তার আভাস পেতে সি-ভোটার সংস্থার চালানো জনমত সমীক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতার ভূমিকায় সংখ্য়াগরিষ্ঠ মানুষই খুশি বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেল। তাতে দেখা যাচ্ছে, নবান্নের মসনদে বসে মমতা যেভাবে রাজ্য সামলেছেন, তাতে তাঁর ওপর খুব সন্তুষ্ট ৪৩ শতাংশ। আংশিক সন্তুষ্ট ৩২ শতাংশ। দুটির যোগফল হয় ৭৫ শতাংশ। আবার আমফান ত্রাণ বন্টনে দুর্নীতি, সারদা-নারদা কেলেঙ্কারির মতো ইস্যুতে জনমানসে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে তাঁর পারফরম্যান্সে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সমীক্ষায় মতামত দেওয়া ২২ শতাংশ। ৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না এ ব্যাপারে। অর্থাত্ দেখা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা সম্পর্কে রাজ্যবাসীর একেবারে স্পষ্ট মতামত রয়েছে এবং তা অনেকটা মমতার অনুকূলেই। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখনও মমতার বিকল্প সম্ভবত তাঁরা কারও মধ্যেই খুঁজে পাচ্ছেন না।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই শাসক দলে ভাঙনের পর্ব চলছে। শুভেন্দু অধিকারী সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা, বিধায়ক, এমপি শিবির বদলে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। তার প্রভাব কতটা ভোটবাক্সে পড়বে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার পারফরম্যান্স কতটা মানুষ বিবেচনার মধ্যে রাখবেন, সেদিকে কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
জনপ্রিয়তার নিরিখে দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান কোথায়? কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কি খুশি? এখনই দেশে লোকসভা ভোট হলে কে জিতবে বলে মনে করছে মানুষ? এমনই নানা বিষয়ে দেশবাসী কী ভাবছে, তার আভাস পেতে দেশের সমস্ত রাজ্যে ঘুরে ঘুরে সমীক্ষা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমীক্ষক সংস্থা সি ভোটার। দেশের ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রেই গিয়েছেন সমীক্ষকরা। খুঁটিয়ে কথা বলেছেন ৩০ হাজারের বেশি ভোটারের সঙ্গে। দীর্ঘ ১২ সপ্তাহ ধরে চলেছে এই সমীক্ষা।

এই সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের জনপ্রিয়তম মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় মমতা সাত নম্বরে। একে রয়েছেন ওড়িষার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। তারপর অরবিন্দ কেজরিবাল, জগনমোহন রেড্ডি, পিনারাই বিজয়ন, উদ্ধব ঠাকরে, ভূপেশ বাঘেল প্রমুখ। কিন্তু, এই তালিকায় এক থেকে সাতে একজনও বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নেই। বিজেপি খাতা খুলেছে আট নম্বরে। তাও সদ্য দল ভাঙিয়ে কংগ্রেসের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মধ্যপ্রদেশে। আর যে বাংলাকে গুজরাত বানানোর কথা বলছে বিজেপি, সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জনপ্রিয়তার নিরিখে রয়েছেন দশ নম্বরে। দেশের প্রথম ১০ জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ৭ জনই বিজেপি বিরোধী দলের। দেশের সবচেয়ে কম জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ৭ জনই বিজেপি অথবা তার শরিক দলের।