কলকাতা: সাহিত্যে রোম্যান্টিসিজমের ছোঁয়া এনেছিল একজনের কলম। চেহারায় সাহেবিয়ানার ছাপ থাকলেও, আপনভোলা মন আখর হয়ে ফুটে উঠত লেখায়। না জানি কত যুগ আগে, সাহেব কবির সেই লেখা পৌঁছে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের গৃহবধূর হাতে। অচেনা কবিকে তাই হয়ত নাতির মধ্যেই বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। তাই গ্রাম বাংলার, পল্লিসমাজে থেকেও সাহস করে নাতির নাম রাখতে পেরেছিলেন সাহেব কবি লর্ড বায়রনের নামে। এত বছর পর সাহেব কবির নেমসেক, সেই বায়রনই বঙ্গ রাজনীতির চর্চার মূল বিষয় (Byron Biswas)।


বায়রনই বঙ্গ রাজনীতির চর্চার মূল বিষয়


বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের (Sagardighi Bypolls) ফল প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতে সব হিসেব-নিকেশ উল্টে দিয়েছেন এই বায়রন, বায়রন বিশ্বাস। জোড়াফুল আর পদ্মের দাপাদাপির মাঝে পিষে যেতে যেতে, মাথা তুলে দাঁড়ানো  কংগ্রেসের প্রার্থী তিনি। জোটের শর্ত মেনে তাঁকে পিছন থেকে সমর্থন জুগিয়েছে বামেরাও। আর তাতেই বছর দুয়েক আগে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে আসা তৃণমূলকে ধরাশায়ী করলেন তিনি। ২২ হাজার ৯৮০ ভোটে সাগরদিঘিতে জিতলেন বায়রন।


এই জয় শুধুমাত্র বায়রনের নয়, বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া কংগ্রেসেরও ফিরে আসার আখ্যান। বায়রনের হাত ধরেই ফের বিধানসভায় প্রবেশের অধিকার আদায় করে নিল তারা। স্বভাবতই নেপথ্য় নায়ককে ঘিরে কৌতূহলের শেষ নেই। সবার আগে প্রশ্ন জাগছে বাঙালি ছেলের সাহেবি কেতার নাম। কে দিলেন এই নাম, আসল রহস্য কী, উঠে আসছে হাজারো প্রশ্ন। এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে নিজেই খোলসা করলেন তিনি।


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: জোট হবে মানুষের সঙ্গে, '২৪-এ কারও হাত ধরবে না তৃণমূল, জানিয়ে দিলেন মমতা


জয়ের পর বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন বায়রন। বাঙালি সমাজে এমন ব্যাতিক্রমী নাম কোথা থেকে জোটালেন, জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই, ঈষৎ অস্বস্তির সুর ধরে রেখেই জানালেন, তাঁর নাম রেখেছিলেন ঠাকুমা। কবিতা পড়তে পছন্দ করতেন অসম্ভব। সেই সূত্রেই নাতির নাম রেখেছিলেন প্রিয় কবির নামে। জন্মসূত্রে পাওয়া পদবী জুড়ে হয়েছেন বায়রন বিশ্বাস।


বৃহস্পতিবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন বায়রন


কিন্তু রোম্যান্টিক যুগের কবির নামে নামকরণ হলেও, আপনভোলা মোটেও নন বায়রন। তাই গণনা শেষ হওয়ার আগে নিজেই জানিয়ে দেন, যাতে হাত দেন, তা-ই সোনা হয়ে যায়। সাগরদিঘিতে যে তিনিই জিতছেন, সে ব্য়াপারে নিশ্চিন্ত ছিলেন। শাসকদলের মুখে গ্রাস কেড়ে নেওয়া বায়রন, জয়ী হয়ে পরে শাসকদলে ভিড়ে যাবেন না তো! এমন সন্দেহও প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। সেখানেও সপাট জবাব বায়রনের। ফুলের প্রতীক কি আর এ রাজ্যে একটিমাত্র! স্মরণ করিয়ে দিলেন, নিজস্ব ভঙ্গিতেই।