মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান :   দেখে বোঝার উপায় নেই বিশ্বকর্মা নগরী না ভূতের রাজত্ব। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্নের শহর দুর্গাপুর। কিন্তু সে-সসয় আজ অতীত।  রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এম.এ.এম.সি (Mineral & Allied Machinery Corporation (MAMC) র ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও প্রশ্ন তুললেন দুর্গাপুরের মানুষ। প্রতিবার ভোটের আগেই এখানে এই ইস্যুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি খোলার বিষয়ে কোনও আশার আলো দেখাতে পারলেন না বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। উল্টে তাঁর নিশানায় তৃণমূল , সিপিএম। 


এদিকে  সিপিএম এবং তৃণমূলের অভিযোগ, ২০২৯ থেকে  বর্ধমান-দুর্গাপুরে বিজেপির সাংসদ থাকা সত্ত্বেও এমএএমসি কারখানা খোলার বিষয়টি সংসদে ওঠেনি। কারখানা খোলার বিষয়ে প্রশ্ন করেননি আলুওয়ালিয়া। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের সামনে উঠতেই, তিনি কারখানা বন্ধের দায় ঠেললেন তৃণমূল আর সিপিএমের উপর। দিলীপের কথায়, এ কারখানার এই করুণ পরিণতির কারণ, 'ধান্দাবাজি আর ইউনিয়নবাজি' !


খনির যন্ত্রাংশ তৈরির লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালে দুর্গাপুরে গড়ে উঠে রাষ্ট্রায়ত্ত মাইনিং অ্যালাইড মেশিনারী কর্পোরেশন (এমএএমসি)। প্রায় সাড়ে সাত হাজার শ্রমিককে নিয়ে শুরু হয় কারখানার উৎপাদন। শ্রমিকদের এবং আধিকারিকদের বসবাসের জন্য তৈরি হয় এমএএমসি নগরী। সেই সময় বিশ্বকর্মা নগরী হিসেবেও নাম দেওয়া হয়। দুর্গাপুরের অন্যতম প্রাণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে এই এমএএমসি নগরী। ২০০২ সালে আচমকা ঝাঁপ নামে কারখানার। শ্রমিকদের অনেককে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়, আবার অনেকে কাজও হারান। ২০০৭ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, বিইএমএল, সিআইএল ও ডিভিসি অংশীদারিতে কনসোর্টিয়াম গড়ার জন্য মৌ স্বাক্ষরও হয়। ২০১০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে নিলামে কারখানার দায়িত্ব পায় এই কনসোর্টিয়াম। কথা হয় উৎপাদিত খনি যন্ত্রাংশ কিনবে সিআইএল। কিন্তু উৎপাদন তো শুরুই হয়নি  উল্টে ২০২২ সালে সম্পূর্ণরূপে বন্ধই হয়ে যায় কারখানা। তারপর থেকে যখনই নির্বাচন আসে তখনই এই কারখানা খোলার দাবিতে সরব হয় রাজনৈতিক দলগুলি।


গত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কারখানার সামনেই আন্দোলনে নেমেছিল বাম শ্রমিক সংগঠন সিটু। তারা দাবি তুলেছিলেন দ্রুত কারখানা পুনরায় চালু করতে হবে। তৃণমূল  কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লাভজনক সমস্ত  সংস্থাকে রুগ্ন করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয়। ২০১৯ সালে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভার সাংসদ হন বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিংহ আলুওয়ালিয়া। তিনি কেন রুগ্ন রাষ্ট্রায়াত্ত কারখানা নিয়ে একটাও প্রশ্ন তোলেননি সংসদে, কেন দুর্গাপুরের মানুষের কথা একবারের জন্যও ভাবেননি, প্রশ্ন তুলে তৃণমূল ও সিপিএম কর্মীদেরা আনন্দোলন দেখায়।


সামনে আবারও একটা লোকসভা ভোট। এবার এই কারখানা বন্ধের জন্য, তৃণমূল আর সিপিএম শ্রমিক সংগঠনকে দায়ী করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ' রাজ্যে অনেক রুগ্ন কারখানা আছে। যারা ধান্দাবাজি, ইউনিয়ন বাজি করে বন্ধ করেছে তাঁদের দায়িত্ব কী আছে। তখন তো রাজ্যে সিপিএম ক্ষমতায় ছিল । ১২ বছর তৃণমূল ক্ষমতায় । তাঁরা কী করেছে?' 


দিলীপের দাবি, 'বিজেপির পলিসি আছে সেই পলিসিতেই চলে। মানুষের ট্যাক্সের টাকাতে কারখানা চালানো তো উদ্দেশ্য নয়। কারখানায় লাভ না হলে চলবে কী করে।' পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি,"কেন্দ্রীয় সংস্থা রাজ্য অধিগ্রহন করতে পারে না। যে সময় এমএমসি কারখানা বন্ধ হয়েছিল তখন অটল বিহারী বাজপেয়ী  প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ... রাজ্যের কাছে দু'হাত তুলে আত্মসমর্পণ করে দিন দেখুন সব কলকারখানা খুলে যাবে।'


বিজেপি আর তৃণমূলকে একযোগে কটাক্ষ করে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ' যে সময়  এই কারখানা বন্ধ হয়েছিল সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ওঁদেরই মন্ত্রী। ওই কারখানা যখন বন্ধ হয়েছিল তখন কয়েক হাজার চিঠি পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।' দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে বাম নেতা আরও বলেন, 'ওনার, জেনে রাখা উচিত কেন্দ্রের কোন কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারকেই নিতে হয়।' 


আরও পড়ুন - Poila Boisakh 2024: পয়লা বৈশাখের আগে চৈত্রেই ঘর সাফ করা জরুরি, কী কী না করলেই নয় ? 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।