নয়াদিল্লি: পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতন্ত্র ভারত। বহু ভাষাভাষী, বহু ধর্মের মানুষের বাস। জনসংখ্যা নয় নয় করে প্রায় ১৪০ কোটি। এহেন দেশে নির্বাচন করানো মুখের কথা নয়। কিন্তু বৈচিত্রপূর্ণ ভারতে নির্বাচন আদৌ উৎসব, নাকি পেশিশক্তি (Muscle Power) এবং অর্থই (Money Power) নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে, সেই প্রশ্ন নতুন নয়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন কমিশনও অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের পথে পেশিশক্তি এবং অর্থই সবচেয়ে বড় বাধা বলে  মেনে নিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।


রাজনৈতিক দলগুলি ঢের আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করে দিলেও, শনিবারই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন। সেখানেই গণতন্ত্রের উৎসব যে নির্বাচন, তার মাথায় পেশিশক্তি এবং অর্থের খাঁড়া ঝুলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। অবাধ এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের পথে 4Ms মূল প্রতিবন্ধকতা বলে জানান তিনি। এই 4Ms-এর মধ্যে প্রথমটিকেই পেশিশক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (Lok Sabha Elections 2024)


নির্বাচন মানেই বেশ কিছু রাজ্যে হিংসা, আস্ফালনের কথা উল্লেখ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, নির্বাচনে হিংসা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। দেশের কোনও প্রান্তে হিংসার খবর মিললে, কমিশন কঠোর পদক্ষেপ করবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।


পেশিশক্তির মোকাবিলা করতে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন, যা হল-



  • পেশিশক্তির মোকাবিলা করতে যথেষ্ট সংখ্যায় CAPF মোতায়েন করবে কমিশন।

  • ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হবে জেলায় জেলায়। স্পর্শকাতর ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি ডিজিটাল সম্প্রচার হবে।

  • গুরুত্ব বুঝে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে।

  • অস্ত্রশস্ত্র সমর্পণ করাতে হবে।

  • অপরাধমূলক কাজকর্মের রেকর্ড রয়েছে যাঁদের, তাঁদের উপর বাড়ানো হবে নজরদারি।

  • দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চেকপোস্ট বসানো হবে।

  • সীমানা এলাকাগুলিতে ড্রোনের মাধ্যমে চলবে নজরদারি।


আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2024 Date : EVM বিকৃতির অভিযোগে শায়েরি-খোঁচা ! কী বার্তা রাজীব কুমারের ?


কিন্তু কমিশনের এই উদ্যোগ আদৌ কার্যকর হবে কি না সেই নিয়ে সন্দিগ্ধ বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ নির্বাচনী রাজনীতিতে পেশিশক্তি বলতে শুধুমাত্র মারদাঙ্গা বোঝায় না। ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া, নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করাও বোঝায়। যে কারণে অপরাধ মামলায় নাম থাকা লোকজনও বুক ঠুকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, যা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিকাঠামোরই পরিপন্থী।


এই পেশিশক্তির সঙ্গে যখন অর্থ যুক্ত হয়, নির্বাচনে আর কোনও স্বচ্ছতা থাকে না।  নির্বাচন কমিশন এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলিরও আর কিছু করার থাকে না বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।  কমিশন যদিও জানিয়েছে, অপরাধ মামলায় নাম থাকা ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হলে, তার উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে রাজনৈতিক দলগুলিকে। তাঁদের অপরাধমূলক কাজকর্মের রেকর্ডও কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পারবেন সাধারণ মানুষ। তূে বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষিত নাগরিক সমাজ এর বিরুদ্ধে একজোটে রুখে না দাঁড়ালে পেশিশক্তির প্রকোপ থেকে ভারতীয় রাজনীতির মুক্তি নেই।