কলকাতা: ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাম-কংগ্রেস জোট। ঘাসফুলের দাপটে জোট বেঁধেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাম ও কংগ্রেস। এবার আইএসএফ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েও জোটের হাল ফেরাতে পারল না তারা। উল্টে রক্তক্ষরণ হতে হতে এবার তারা রক্তশূন্য হয়ে পড়ল।


মালদা-মুর্শিদাবাদে ভরাডুবির পর বাম-কংগ্রেসের গড় বলে আর কিছু থাকল না।সেখানেও এবার ঘাসফুলের দাপট। রাজ্য়ে কার্যত অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে গেল কংগ্রেস ও বামদলগুলি।


ভোটের আগে আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে হাত মিলিয়ে ব্রিগেড সমাবেশে ভিড় হল। কিন্তু, ভোটের বাক্সে বিন্দুমাত্র ডিভিডেন্ট পেল না বাম ও কংগ্রেস।উল্টে তাতে বাম-কংগ্রেসের আখেরে ক্ষতি হল কি না, সেই প্রশ্ন জোরালভাবে উঠে গেল।


২০১৬-র বিধানসভা ভোটে রাজ্যের ৭৭টি আসনে জিতেছিল বাম-কংগ্রেস জোট। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফলের নিরিখে কংগ্রেস ৯টি আসনে এগিয়ে ছিল। বামেরা একটিও আসনে এগিয়ে ছিল না। এবার বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ তিন দলের মোট আসন এসে ঠেকল দুইয়ে।


বৃদ্ধতন্ত্রের খোলস ঝেড়ে সিপিএম এবার একঝাঁক নতুন মুখকে প্রার্থী করলেও, লাগাতার প্রচারের পরও তাঁরা কেউই জিততে পারেননি। মীনাক্ষী মুখোপাধ্য়ায, ঐশী ঘোষ, সৃজন, দীপ্সিতা, সায়নদীপ, পৃথা তা-দের কেউই সাফল্য় পেলেন না।


উল্টে মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের মতো গড়ও বাম-কংগ্রেসের হাত থেকে পিছলে গেছে।


২০১১ এবং ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে ল্যান্ডস্লাইড ভিকট্রি পেলেও তৃণমূলের কাছে অধরা ছিল মালদা। এমনকী, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ছেড়ে আসা, গণি খানের পরিবারের সদস্য মৌসম বেনজির নুরকে প্রার্থী করেও  মালদার মন জিততে পাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারের প্রচারে সেই আক্ষেপ ঝরে পড়েছিল তৃণমূলনেত্রীর গলায়। মালদার সভায় মমতা বলেছিলেন, আমার একটাই দুঃখ। আমি মালদায় প্রতিবার আসি। মুখ দেখে আনন্দ লাগে। দেখে মনে হয় গ্রহণ করেছেন। ফিরে দেখি লোকসভায় জিরো, বিধানসভায় নেই বললেই চলে। মালদা কি আমরা পাব না? এবারের ভোটে মালদা দেবেন তো? ফজলি আম দেবেন তো? আম ও আমসত্ত্ব দু’টোই চাই।


অবশেষে ভোটের ফলে তৃণমূলকে মিষ্টিমুখ করাল মালদা। কঠিন লড়াইয়ে ঢেলে আসন দিয়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিল মালদা-মুর্শিদাবাদ।মালদার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সবক’টিতে জিতল তৃণমূল। এমনকী, সুজাপুর কেন্দ্রে তৃণমূলের কাছে হারলেন গণি খানের ভাইয়ের ছেলে ইশা খান চৌধুরী।


বরকত গণি খান চৌধুরীর মালদার মতোই, অধীর চৌধুরীর মুর্শিদাবাদেও চোখে পড়ার মতো ভাল ফল করল তৃণমূল। ভাগীরথীর পাড়ের মতোই কংগ্রেসের গড়ে ভাঙন ধরিয়েছে।মুর্শিদাবাদের সবক’টি আসন এবার জিতে নিয়েছে তৃণমূল।এমনকী, অধীর চৌধুরীর খাসতালুক বহরমপুরে কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী হেরে গেছেন তৃণমূলের কাছে। পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী বলেন, হারজিত লড়াইয়েরই অঙ্গ।


একই ছবি উত্তর দিনাজপুরেও। কংগ্রেসের একদা গড় এই জেলাতেও এবার ফুটেছে ঘাসফুল। অর্থাত বাম-কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক পুরোপুরি চলে গেল তৃণমূলের দিকে।


এর পাশাপাশি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, দু’বছর আগে লোকসভা ভোটে বামেদের ভোট যেভাবে রামে গেছিল...অর্থাত বিজেপিতে...ঠিক উল্টোভাবে এবার বিজেপি আটকাতে দু’দলের ভোট চলে গেল তৃণমূলে।