কলকাতা: আঙুলে লাগানোর সময় কালো। আর পরক্ষণেই বেগুনি। ভোটের দিন বেশ ভারিক্কি মেজাজই থাকে ভোটের কালির। থাকবেই না বা কেন ? এই একটা দিন বুথে ভোটসংখ্যার পরিসংখ্যান দেখাতে তার জুড়ি মেলা যে ভার। পশ্চিমবঙ্গ যখন প্রথম দফার ভোটের জন্য কোমর বেঁধে প্রস্তুত, তখন ভোটের কালি নিয়ে জানা-অজানা তথ্য আর একবার দেখে নেওয়া যাক।


কেন আঙুলে কালি ? 
ভুয়ো ভোট আটকাতে, ভূতুড়ে ভোট থামাতে, এক ব্যক্তির একাধিক ভোট এড়াতে এবং প্রত্যেকের ভোট নিশ্চিত করতে ভোটের কালির গুরুত্ব অনেক। দিন দশেক আঙুলে অস্তিত্ব জাহির করে ভোটের কালি। পরে আস্তে আস্তে মুছে যায়। 


কবে শুরু ? 
তথ্য বলছে, ১৯৬২ সালে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় সরকার। নির্বাচন কমিশন, আইন মন্ত্রক, ন্যাশনাল ফিজ়িক্যাল ল্যাবরেটরি অফ ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল রিসার্চ ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন একযোগে একটি চুক্তি করে। চুক্তি হয়  মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেডের। চুক্তি মোতাবেক, মুছে যায় না, এমন বিশেষ ধরনের কালি তৈরির বরাত পায় এই কোম্পানি। যে কোনও ভোটে ভোটের কালি তৈরির বরাত একমাত্র এদের এক্তিয়ারেই। 
মাইসোর পেইন্টস তৈরি হয় ১৯৩৭ সালে। প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা কৃষ্ণরাজা ওয়াদিয়ার IV। শুধু ভারত নয়, না না করে ২৫ টি দেশে ভোটের কালি সরবরাহ করে এই কোম্পানি। বিশ্বাস, এই কালি তৈরি হয় গোপনে। এতে নাকি থাকে সিলভার নাইট্রেট।


নিয়ম অনুযায়ী, বুথে নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোট কর্মী প্রত্যেক ভোটারের বাঁ হাতের তর্জনীতে ভোটের কালি লাগাবেন। নখের শুরু থেকে আঙুলের প্রথম গিঁট পর্যন্ত কালি লাগানো হবে। ভোটার ভোট দেওয়ার আগে কন্ট্রোল ইউনিটের ইন-চার্জ যিনি, তিনি পরীক্ষা করে নেবেন কালি ঠিকমতো লাগানো হয়েছে কি না। 


আগামীকাল ভোট শুরু বাংলায়, অসমে। এই দুই রাজ্য সমেত আরও বাকি তিনরাজ্যে ভোটের জন্য ভোটের কালি সরবরাহ করছে মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় ভোট ৩০ আসনে। সকাল সাতটা থেকে শুরু হবে ভোট। 


তথ্য বলছে, রাজ্যের প্রথম দফার ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি কেন্দ্র- দাঁতন, কেশিয়াড়ি, মেদিনীপুর, শালবনি, গড়বেতা, খড়্গপুর গ্রামীণে ভোটার ১৪,৮৬,৭০৮ জন। প্রার্থীর সংখ্যা ৩৫ জন। বুথের সংখ্যা ২,০৮৯টি। বাহিনী মোতায়েন হয়েছে ১২৫ কোম্পানি। রাজ্য পুলিশ থাকবে প্রায় ৪ হাজার। প্রথম দফায় পুরুলিয়ায় ভোটগ্রহণ হবে বান্দোয়ান, বলরামপুর বাঘমুণ্ডি, জয়পুর, পুরুলিয়া, মানবাজার, কাশীপুর, পারা ও রঘুনাথপুরে। জেলার মোট ভোটার ২২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৩৭ জন । ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ২ হাজার ৪৯১টি। মোতায়েন থাকছে ১৮৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রথম দফায় পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, ভগবানপুর, খেজুরি, রামনগর ও এগরা বিধানসভায় ভোটগ্রহণ হবে। মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৮২৫ জন। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ৪৩৭টি। পূর্ব মেদিনীপুরে মোতায়েন থাকছে ১৪৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রথম দফায়, বাঁকুড়ার চারটি কেন্দ্রে ভোট কাল। শালতোড়া, ছাতনা, রানিবাঁধ, রাইপুরে ভোট নেওয়া হবে। চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ভোটার ৯ লক্ষ ৫০ হাজার ৪৮২জন। ১ হাজার ৩২৮টি বুথে নেওয়া হবে ভোট। এই চার আসনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকছে ৯২ কোম্পানি। নতুন ঝাড়গ্রাম জেলায় নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, বিনপুর ও ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে ভোট। ঝাড়গ্রামে মোট ভোটার ৯ লক্ষ ১১ হাজার ৬৫৪জন। মোট বুথের সংখ্যা ১,৩০৭টি। মোট ১৪৪ কোম্পানি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে জেলায়। 


এদিকে, নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে নির্বাচনী চার রাজ্য ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে আগামীকাল ২৭ মার্চ সকাল ৭টা থেকে ২৯ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কোনওরকম বুথ ফেরত সমীক্ষা করা ও প্রকাশ নিষিদ্ধ।