নয়াদিল্লি: কেন্দ্রে ফের নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রত্যাবর্তন ঘটছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে বুথফেরত সমীক্ষায়। কিন্তু সেই সমীক্ষার রিপোর্ট কার্যতই উড়িয়ে দিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। তাঁর সাফ বক্তব্য, "এটাকে বুথফেরত সমীক্ষা বলে না, এটাকে মোদি-মিডিয়ার সমীক্ষা বলা উচিত। এটা আসলে মোদিজির কল্পনার সমীক্ষা।" বুথফেরত সমীক্ষায় I.N.D.I.A জোট ১৮০টির মতো আসন পেতে পারে বলে যে রিপোর্ট এসেছে, তাও খারিজ করে দেন রাহুল। জানান, I.N.D.I.A জোট ২৯৫টি আসন পেতে চলেছে। 


লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণায় এখনও দু'দিন বাকি, তার আগে সমস্ত বুথফেরত সমীক্ষায় কেন্দ্রে ফের মোদি সরকারের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। মোটামুটি ভাবে ৪০০-র কাছাকাছি আসন নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোট কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় ফিরছে বলে ধরা পড়েছে একাধিক সমীক্ষাতেই। কিন্তু এই বুথফেরত সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোট। তাদের মতে, ফলাফল ঘোষণার আগেই বিজেপি জিতছে বলে দেশবাসীর মনে ধারণা বদ্ধমূল করে তোলার চেষ্টা চলছে। বুথফেরত সমীক্ষার সঙ্গে বাস্তব ফলাফলের ফারাক ৪ জুনই বোঝা যাবে বলে দাবি করছে I.N.D.I.A জোট। 



শনিবার সপ্তম তথা শেষ দফায় লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ছিল, তা মিটতেই সন্ধের পর থেকে একের পর এক বুথফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট সামনে আসে। গোড়ায় বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে চাইলেও, বিকেলের কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাড়িতে জোটের বৈঠকের পর অংশ নিতে রাজি হয় সব পক্ষ। কিন্তু রিপোর্ট সামনে আসার পর একযোগে সকলেই মোদি সরকারের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে।  রাহুলের পাশাপাশি জোটের অন্য শরিকরাও একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। 



কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, "এই বুথফেরত সমীক্ষা ভুয়ো। I.N.D.I.A জোট ২৯৫-এর কম আসন পাবে না। এই বুথফেরত সমীক্ষা ভুয়ো, কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলতে নেমেছেন। আজলে বিরোধী দল, নির্বাচন কমিশন, গণনাকর্মী, রিটার্নিং অফিসারদের উপর চাপসৃষ্টি করতে চাইছেন ওঁরা। আবারও ওঁরাই ক্ষমতায় ফিরছেন বলে ধারণা তৈরি করছেন, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি একেবারে আলাদা।"



I.N.D.I.A জোটের শরিক, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, 'ক্রোনোলজিটা বুঝতে হবে। বিরোধীরা প্রথমেই বলেছিল, বিজেপি ৩০০-র বেশি আসন পাবে বলে দেখানো হবে, যাতে কারচুপির সুযোগ পাওয়া যায়। এই বুথফেরত সমীক্ষা কয়েক মাস আগেই তৈরি করে রাখা হয়েছিল। এই সমীক্ষা সামনে এনে আসলে মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে। এই বুথফেরত সমীক্ষাকে সামনে রেখে সোমবারের শেয়ারবাজারের লাভের গুড় ঘরে তুলতে চায় বিজেপি'।


অখিলেশ আরও লেখেন, 'বিজেপি বুঝে গিয়েছে, গোটা দেশের ফলাফল চণ্ডীগড় পুরভোটের মতো পাল্টে ফেলা যাবে না। কারণ এবার বিরোধীরা অনেক বেশি সচেতন এবং মানুষের আক্রোশও চরমে পৌঁছেছে। বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানো দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকরাও আদালতের রায় দেখে আর সাহস পাচ্ছেন না। মানুশের ক্ষোভের মুখে পড়তে চাইছেন না তাঁরা। I.N.D.I.A জোটের সমস্ত কর্মী, পদাধিকারী এবং প্রার্থীদের বলব, EVM পাহারায় কোনও গাফিলতি চলবে না। I.N.D.I.A জোট জিতছে। তাই সতর্ক থেকে ভোগগণনা করান, জয়ের প্রমাণপত্র হাতে নিয়ে উৎসবে শামিল হোন'।



একই সুর শোনা যায় উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতের গলায়। তাঁর কথায়, "গোটাটাই কর্পোরেটের খেলা। কাল যদি আমরা ক্ষমতায় আসি, আমাদের হাতেও যদি প্রচুর টাকা থাকে, তাহলে আমরাও যা ইচ্ছে পরিসংখ্যান তুলে ধরতে পারি। ২৯৫ থেকে ৩১০ আসনে জিতে I.N.D.I.A জোট সরকার গঠন করতে চলেছে। মহারাষ্ট্রে ৩৫টির বেশি আসন পাব আমরা।"



DMK-র মুখপাত্র শ্রবণণ আন্নাদুরাই বলেন, "গতকাল যে বুথফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে বিজেপি ৩৫০-এর বেশি আসন পাবে বলে দাবি করা হয়েছে, তা আসলে বড় প্রতারণা, নির্লজ্জতা।  বিজেরপি জিতছে বলে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা চলছে। I.N.D.I.A জোট ২৯৫টির কাছাকাছি আসন জিততে চলেছে। আমরা বলে আসছি, পোস্টাল ব্যালটের গণনা আগে হওয়া উচিত, পরে গণনা হোক EVM.  কে জিতবে তা ৪ জুনই বোঝা যাবে, I.N.D.I.A-ই জিতবে।"



তৃণমূলের কুণাল ঘোষও এ ব্যাপারে একমত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, 'বাংলায় ৩০টির বেশি আসনে জিতছে তৃণমূল। বুথফেরত সমীক্ষার তথাকথিত রিপোর্টে বাস্তব প্রতিফলিত হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পিত ভাবে অবাস্তব তথ্য ছড়ানো হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকরা বিভ্রান্ত হবেন না। গণনার দিন এজেন্টরা শেষ পর্যন্ত সক্রিয় থাকুন। মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছেন'। বুথফেরত সমীক্ষা যা-ই বলুক না কেন, I.N.D.I.A জোট ২৯৫ আসন পেয়ে জয়ী হবে বলে দাবি বিরোধীদের।