কলকাতা: একুশের বিধানসভা (Assembly Election) ভোটের মুখেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তার পর থেকে টানা শাসকদলের সমালোচনায় সরব নন্দীগ্রামের (Nandigram) বিজেপি বিধায়ক। তা সত্ত্বেও একুশের বঙ্গযুদ্ধে তৃণমূলের ঝড়ের মুখে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল গেরুয়া শিবির। সেই নির্বাচনের পর অবশ্য সংগঠন গোছাতে বছরদুয়েক সময় পেয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থা সি ভোটার, তাদের জনমত সমীক্ষায় (Opinion Poll 2023) জানতে চেয়েছিল, বিধানসভায় বিপর্যয়ের পর পঞ্চায়েত ভোট কি শুভেন্দুর কাছে অস্তিত্বের লড়াই? উত্তরে ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন, হ্যাঁ। ২৬ শতাংশের মতে, না। আর ১৯ শতাংশ, এই ব্যাপারে জানিয়েছেন, কিছু বলতে পারবেন না।
প্রেক্ষাপট...
একুশের বিধানসভা ভোটে স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই ফলাফল নিয়ে আইনি লড়াই হলেও জোড়াফুল শিবিরের নিরঙ্কুশ জয়ের রেকর্ডে তা কাটা হয়ে বিঁধেছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতার অন্যতম সহযোগী, শুভেন্দু যে নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়েই তৃণমূলনেত্রীকে 'কাঁটে কা টক্কর' দিতে পারেন, সেটি সুকৌশলে বার বার তুলে ধরতে চেয়েছে গেরুয়া শিবির। পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসেবে কখনও নিয়োগ-দুর্নীতি, কখনও কয়লা-চুরি, কখনও গরু-চুরি নিয়ে প্রাক্তন সহকর্মীদের নাগাড়ে আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাজ্য়ে বিজেপির সংগঠনের অন্দরে যে চিড়, তা মেরামতে ঠিক কতটা কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে নন্দীগ্রামের বিধায়কের? ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষের জায়গায় সুকান্ত মজুমদার আসার পর থেকে গেরুয়া শিবিরের ফাটল বড় বেশি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকে। গত বছর অক্টোবরেই যেমন, বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, ‘অযোগ্যদের মাথায় রেখে রাজনীতি করা কঠিন। যে দুজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা ২০১৯-এর আগে রাজনীতি করেছেন বলে জানা নেই।’ তবে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হল, দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্যই করেছিলেন সৌমিত্র। তাঁর আক্রমণের নিশানায় ছিলেন সুকান্ত মজুমদার যার পাল্টা জবাবও দেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। এতেই শেষ নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূলে যোগ দেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে তৃণমূলে যোগদান করেন সুমন কাঞ্জিলাল। সুমন কাঞ্জিলালের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন অভিষেক স্বয়ং। সার্বিক ভাবেই রাজ্য়ে দলের সংগঠনের জোর নানা স্তরেই প্রশ্নের মুখে। তার উপর আগামী বছর লোকসভা ভোট। তার আগে এটাই শেষ বড় পরীক্ষা।
অন্তর্দ্বন্দ্বের জল্পনা উড়িয়ে দুর্নীতি-প্রসঙ্গে জনমতকে এক করে আখেরে কি ভোটবাক্সে ছাপ ফেলতে পারবেন শুভেন্দু? বলবে সময়। তবে সি ভোটারের সমীক্ষা বলছে, বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন পঞ্চায়েত ভোট নন্দীগ্রামের বিধায়কের কাছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এক্ষেত্রে একটি বিষয় কখনওই ভুললে চলবে না। জনমত সমীক্ষা হোক বা বুথফেরত সমীক্ষা, কোনওটিই সাধারণত নির্ভুল হয় না। গণতন্ত্রে শেষ কথা বলেন মানুষই। সমীক্ষা স্রেফ তাঁদের মনোভাবের আন্দাজ দিতে পারে। আখেরে কী হবে, তা জানা যাবে ১১ জুলাই।
আরও পড়ুন:পঞ্চায়েত ভোটে কোন দিকে ঝুঁকে মুর্শিদাবাদ? কী বলছে C-Voter-র জনমত সমীক্ষা?