জলপাইগুড়ি:  প্রথম দফার ভোট ১৯ এপ্রিল। কাল বাদে পরশু। আর ওই দিনই জলপাইগুড়িতে ভোট। উনিশের থেকে চব্বিশের প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। যার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। প্রস্তুত কুশীলবেরাও। চব্বিশের শেষ হাসি হাসবে কে প্রশ্ন সবার মুখে। যদিও চেষ্টায় ত্রুটি রাখেনি কোনও দলই। চলুন ভোটের আগে দেখে নেওয়া যাক, পদ্ম-ঘাসফুলের মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কে ? কী ভেবেই বা তাঁদের টিকিট দিল দল ? ওদিকে বাম-কংগ্রেসের মুখই বা কে ? কী বলছে জলপাইগুড়ির অতীত ? কোন ফুলে ছেয়ে যেতে পারে জলপাইগুড়ি ? নাকি বাজিমাত বাম-কংগ্রেসের ?

  

একনজরে 

জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র (Jalpaiguri Loksabha Constituency) ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ৫৪৩ টি লোকসভা (সংসদীয়) কেন্দ্রের একটি।জলপাইগুড়ি জেলায় মোট ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র। যথাক্রমে মেখলিগঞ্জ, ধুপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি, রাজগঞ্জ, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, মাল। তথ্য বলছে, এই লোকসভা কেন্দ্রে সর্বপেক্ষা সফল দল সিপিআইএম। ৯ বার বিজয়ী তাঁরা। এই লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোট দাতা ১৩,৫১,৪৫৯।

২০০৯

সাল ২০০৯। এই কেন্দ্র ছিল বামেদের ঘাঁটি। সেবার সিপিএম-র হয়ে জয় এনেছিলেন মহেন্দ্রকুমার রায়। প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬১৩। ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ২৪২ ভোট পেয়ে কংগ্রেসকে দ্বিতীয় স্থানে এনেছিলেন সুখবিলাস বর্মা। ৯৪ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। সেবার বিজেপির প্রার্থী ছিলেন দ্বীপেন্দ্রনাথ প্রামাণিক। 

২০১৪ 

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে রং বদলায়। ওড়ে সবুজ আবির। ৪ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭৭৩ টি ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে জয় এনে দেন বিজয় চন্দ্র বর্মণ। প্রায় ৭০ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়ে বামেরা সেবার। প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ লক্ষ ২৫ হাজার । তবে চোদ্দর লোকসভা ভোটে, অপেক্ষাকৃত ভাল ফল আসে গেরুয়া শিবিরের। ২ লক্ষ ২১ ভোটে তৃতীয় স্থান নেয় বিজেপি। প্রার্থী ছিলেন সত্যলাল সরকার। উপরে ওঠা এই শুরু। 

২০১৯ 

উনিশের লোকসভা ভোটে বড়সড় পাল্টি। বড় ব্যবধানে ভোটে শিখরে উঠে আসে বিজেপি। ৭ লক্ষ ৬০ হাজার ১৪৫ ভোটে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র গেরুয়া রঙের ঝড় তোলেন জয়ী বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত কুমার রায়। বেশ অনেক ভোটেই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ১৪১ টি ভোট পেয়েছিলেন সেবার  জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থীবিজয় চন্দ্র বর্মণ। ব্যবধানটা প্রায় ২ লক্ষ। ৭৬ হাজার ১৬৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আসে বামেরা। প্রার্থী ছিলেন ভাগীরথ চন্দ্র রায়। ২৮ হাজার ৫৬২ ভোট পান কংগ্রেসের প্রার্থী। 

 ২০১৯ জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল

রাজনৈতিক দল প্রার্থীর নাম প্রাপ্ত ভোট ভোটের শতাংশ নেটফল
বিজেপি ডা: জয়ন্ত কুমার রায় ৭৬০,১৪৫ ৫০.৬৫% বিজয়ী
তৃণমূল বিজয় চন্দ্র বর্মণ  ৫৭৬,১৪১ ৩৮.৩৯% পরাজিত
সিপিএম ভাগীরথ চন্দ্র রায় ৭৬,১৬৬ ৫.০৭ %  পরাজিত
কংগ্রেস মণি কুমার   ২৮,৫৬২ ১.৯০ % পরাজিত

২০২৪  

চব্বিশে জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ?

জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে এবার তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন নির্মল চন্দ্র রায়। উনিশ থেকে চব্বিশের মাঝে একটা ট্যুইস্ট আছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ধূপগুড়ি দখল করে নিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন বিষ্ণুপদ রায়।  বিধানসভা অধিবেশন সবে শুরু হয়েছে তখন। ধূপগুড়ি থেকে কলকাতায় পৌঁছন তিনি। এরই মাঝে ছন্দপতন।  এদিকে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাবার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু আচমকাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হাসপাতালে ভর্তি করেও শেষ রক্ষা হয় না। প্রয়াত হন ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়। কিন্তু লোকসভা ভোটের প্রার্থীর প্রসঙ্গের মাঝে একুশের কথা উঠছে কেন ? উঠছে, কারণ প্রাসঙ্গিক তাই। এবার শিকড়ে যাওয়া যাক। বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের প্রয়াণে, উপনির্বাচন হয় ধূপগুড়িতে। তবে বরাবর উপনির্বাচনে শাসকদলের জয়ের তত্বে ছন্দপতন এনেছিল সাগরদিঘি। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আর ভুল করেনি তৃণমূল। অবশেষে অভিজ্ঞতার জয়।৪ হাজার ৩৮৩ জয় আনেন তৃণমূল প্রার্থী নির্মল চন্দ্র রায়। আর পেশায় শিক্ষক এই নির্মল চন্দ্র রায়কেই এবার জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ধূপগুড়িটা যেমন প্রভাব ফেলেছে তৃণমূলকে, ঠিক তেমনই দাগ কেটে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরকেও।

জলপাইগুড়িতে এবারের বিজেপি প্রার্থী কে ?

 বহুদিন ধরেই প্রশ্নটা জিইয়ে ছিল কে হবেন এবারের জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ? গতবারের জয়ী প্রার্থী, পেশায় চিকিৎসক জয়ন্ত কুমার রায়কেই কি টিকিট দেবে বিজেপি ? এনিয়ে কম জল্পনা হয়নি। এমনকি শেষমুহূর্তে জলপাইগুড়ি লোকসভা আসন নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রিপোর্ট তলবের পর করা হয়েছিল সমীক্ষাও। এদিক বাংলায় ভোট ঘোষণার আগেই, ২ মার্চ শনিবার প্রথম দফায় ২০ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ্যে এনেছিল। ওই তালিকায় ছিল না জলপাইগুড়ি। বলাইবাহুল্য, নজর ছিল সবার এই কেন্দ্রে। চর্চায় এসেছিলেন সৌমেন রায়। তবে তা ক্ষণিকের জন্যই। সম্প্রতি গেরুয়া শিবিরের এক সভায় রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মুখে 'ডাক্তার বাবুর' প্রশংসা শোনা গিয়েছিল। আর সেটা ছিল ভোটের আগে যথেষ্ট পজেটিভ ভাইবস্। অবশেষ বাংলায় দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতেই প্রকাশ্যে এল নাম। বিজেপি প্রার্থী হলেন সেই জয়ন্ত কুমার রায়। 

 জলপাইগুড়িতে লোকসভা ভোটে বামেদের তরুণ মুখ 

জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে এবার বামেদের প্রার্থী হয়েছেন দেবরাজ বর্মণ। আর এই কেন্দ্রে জোট নিয়ে কম জল গড়ায়নি। কংগ্রেস সূত্রে খবর, বামফ্রণ্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থীকে তাঁরা সমর্থন করেছেন।  দেবরাজ বামেদের আরও এক তরুণ মুখও বটে।  

২০২৪ জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রে কারা পেলেন টিকিট ? 

রাজনৈতিক দল প্রার্থীর নাম
তৃণমূল কংগ্রেস শিক্ষক  নির্মল চন্দ্র রায়
বিজেপি ডাক্তার জয়ন্ত কুমার রায়
বাম  দেবরাজ বর্মণ

অভিযোগ

জলপাইগুড়ির বিজেপি প্রার্থীকে নিয়ে সেই অর্থে কোনও দুর্নীতি অভিযোগে প্রকাশ্যে আসেনি। শুধু তাঁকে 'এলাকায় দেখা যায়নি' বলে একটা অভিযোগ উঠেছিল। যদিও এই অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই বলেই জানিয়েছিলেন জয়ন্ত রায়। এটা 'শাসকদলের চক্রান্ত' বলেই দাবি জানিয়েছিল বিজেপি। 

সম্ভাব্য জয়ী হবে কে ? কে পিছিয়ে ? কী বলছে সি ভোটার সমীক্ষা ?

 ১৯ এপ্রিল জলপাইগুড়িতে লোকসভা ভোট। সম্ভাব্য জয়ী হবে কে ? কে পিছিয়ে ? এনিয়ে জল্পনা বেড়েই চলেছে। ঠিক এমন সময়েই সামনে এসেছে এবিপি সি ভোটারের সমীক্ষা। মূলত এরাজ্যের ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে, সমীক্ষা চালিয়েছিল এবিপি সি ভোটার। এই সমীক্ষা চলেছে গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সবমিলিয়ে মোট ১ লক্ষ ১১ হাজার ২৫৬ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন সমীক্ষকরা।জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়ের সমর্থনে জনসভা করে গিয়েছেন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদি। পাশাপাশি এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা শিক্ষক নির্মলচন্দ্র রায়ও বেশ পরিচিত মুখ। অপরদিকে ভোটের আগের জোরদার প্রচার করেছেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী দেবরাজ বর্মনও। এবিপি সি ভোটারের সমীক্ষা বলছে, এখনও পর্যন্ত সম্ভাব্য জয়ী বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়। 

আরও পড়ুন, বাংলায় এতটাই ভাল ফল, ২০২৬ পর্যন্ত টিকবে না TMC সরকার, BJP-র এই দাবিতে আপনি সহমত ? কী বলছে সমীক্ষা ?

তথ্যসূত্র : Election Commission of India, jalpaiguri.gov.in

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।