বেঙ্গালুরু: জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হলেও, এতটা আশা করতে পারেননি কেউই। কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে (Karnataka Election Results 2023) বিজেপি-কে (BJP) পিছনে ফেলে 'ফার্স্ট বয়' হয়েছে কংগ্রেস। এই জয়ের নেপথ্যে রাহুল গাঁধী থেকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে মানছে রাজনৈতিক মহল। একই সঙ্গে উঠে আসছে আরও এক ব্যক্তির নাম। তিনি হলেন সুনীল কানুগোলু (Sunil Kanugolu)। কংগ্রেসের (Congress) হয়ে কর্নাটকে এ বার নির্বচনী কৌশল সাজিয়েছেন পেশায় ভোটকুশলী এই সুনীল।
সুনীলের নেতৃত্বেই দফায় দফায় সমীক্ষা কর্নাটকে
২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে কাজ করেছিলেন সুনীল। এ বারে কংগ্রেসের হাত ধরেন তিনি। তাঁর উদ্যোগেই কর্নাটক প্রায় ফুঁড়ে ফেলে কংগ্রেস। কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে বিগত আট মাস ধরে কর্নাটকে দফায় দফায় সমীক্ষা চালানো হয় দলের তরফে। সেই সমীক্ষার উপর নির্ভর করেই অধিকাংশ আসনে প্রার্থী ঠিক করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, ওই আট সমীক্ষার উপর ভর করেই কমপক্ষে ৭০টি আসনকে চিহ্নিত করা হয়। সেই মতো অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সদস্যদের জমি জরিপে পাঠানো হয়। গোটা দেশ থেকে পর্যবেক্ষকরা এসে পৌঁছন সেখানে। প্রত্যেক বিধনসভা কেন্দ্রে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন, অভাব-অভিযোগ শোনেন। সেই মতো প্রার্থিচয়ন করা হয়।
গত বছর মে মাসেস, তদানীন্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী সুনীলের নাম প্রথম সামনে আনেন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের টাস্ক ফোর্সে সুনীলের নাম যুক্ত করেন। ওই টাস্ক ফোর্সে রয়েছেন পি চিদম্বরম, মুকুল ওয়াসনিক, জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপাল, অজয় মাকেন, প্রিয়ঙ্গা গাঁধী বঢরা, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও। এ বারে কর্নাটকে কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক ছিলেন রণদীপ।
সনিয়া খোদ সুনীলের নাম প্রস্তাব করেন!
কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোড়ায় ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকেই পছন্দ ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বের। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে মতবিরোধ হয় তাঁর। এর পর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন কিশোর। তার পরই সুনীলের নাম প্রস্তাব করেন সনিয়া। প্রশান্তর মতো সোশ্যাল মিডিয়য় সক্রিয় নন সুনীল, লোকচক্ষুও এড়িয়ে চলেন। তাঁদের কাজের ধরনও সম্পূর্ণ আলাদা। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির লোকসভা নির্বাচনের কৌশল রচনায় লিপ্ত ছিসেন সুনীল। সেই সময় প্রশান্তর সঙ্গে একজোটেই কাজ করেন তিনি। পরে আলাদা হয়ে যান।
প্রশান্তর থেকে আলাদ হয়ে যাওয়ার পর, নিজের মতো করে আলাদা যাত্রা শুরু করেন সুনীল। ২০১৬ সালে তামিলনাড়ুতে এমকে স্ট্যালিনের জয়ের নেপথ্যে তাঁর কৌশলই ছিল। স্ট্যালিনের হয়ে 'নামাক্কু নামে' ক্যাম্পেন শুরু করেন। ভোটবাক্সে তেমন রদবদল না হলেও, সে বারই প্রথম জননেতা হিসেবে উঠে আসেন স্ট্যালিন।
এর পর দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে বেশ কিছু দিন কাজ করেন সুনীল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিজেপি-র সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং কর্নাটকে কাজ করেন। ৩০০ জনের একটি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের স্ট্যালিনের শিবিরে চলে আসেন সুনীল। রাজ্যে ৩৯টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৩৮টিতে সে বার জয়ী হয় স্ট্যালিনের DMK.
২০১৯ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে প্রশান্তর দ্বারস্থ হন স্ট্যালিন। তাতে AIADMK শিবিরে গিয়ে ওঠেন সুনীল। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত হয় AIADMK. ওই বছরই সুনীলের 'মাইন্ডশেয়ার অ্যানালিটিক্স'-কে কর্নাটকের জন্য় নিযুক্ত করে কংগ্রেস। তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন সনিয়া এবং রাহুল গাঁধী। রাজনৈতিক মহলে শোনা যায়, সুনীল নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না কোনও দলের উপর। যেমন নির্দেশ আসে, শুধু তা পালন করে যান। নিজের সাফল্যের কৃতিত্বও দাবি করেন না।
সুনীল রাজনৈতিক মলে পরিচিত হলেও, জনসমক্ষে সে ভাবে দেখা যায় না তাঁকে। এমনকি সুনীলের ভাইয়ের ছবিকেও অনেকে সুনীল বলে চালিয়ে দেন। চেন্নাইয়েই মূলত পড়াশোনা সুনীলের। পরে আমেরিকা চলে যান। সেখাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। তার পর অর্থনীতিতে এমএস এবং এমবিএ, দু'টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন সুনীল। ২০০৯ সালে আমেরিকা থেকে দেশে ফেরেন। পর্দার আড়ালে থেকেই কাজ করতে পছন্দ করেন সুনীল। তার জন্যই তাঁকে সনিয়া এবং রাহুলের পছন্দ হয় বলে মত কংগ্রেসের একাংশের। কংগ্রেসের 'ভারত জোড়ো যাত্রা', 'PayCM'-এর নেপথ্যেও সুনীলের মস্তিষ্ক রয়েছে বলে শোনা যায়।