বিজেন্দ্র সিংহ ও সুদীপ চক্রবর্তী: কর্নাটক বিধান সৌধের বাইরে এখনও রয়েছে রাজীব গাঁধীর হাত ধরে উন্মোচিত হওয়া দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মূর্তি। কর্নাটকে কংগ্রেসের (Congress) বিপুল জয়ের দিনে, এই মূর্তিই যেন জানান দিল কয়েক যুগের বহু ওঠাপড়া, বহু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির (Karnataka Elections Result 2023)। 


দেওয়ালে কারও মুখের ছবি উল্টো করে টাঙিয়ে রাখলেই ইতিহাস বদলে ফেলা যায় না। আরও একবার তা প্রমাণিত হয়ে গেল কর্নাটকে। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে কর্নাটক বিধানসভায় পা রাখতে চলেছে কংগ্রেস। শনিবার বিপুল ভোটে রাজ্যে জয়লাভ করেছে তারা। আর সেই দিনই,
কর্নাটক বিধান সৌধের সামনে থাকা জওহরলাল নেহেরুর মূর্তি যেন নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে অনেক কিছুরই, অনেক ইতিহাসের তো বটেই।

১৯৯১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কর্নাটক  বিধান সৌধের সামনে এই নেহেরুর এই মূর্তি উন্মোচন করেছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাজীব গাঁধী।
এর তিনমাসের মধ্যেই ২১ মে, হত্যা করা হয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীবকে। এর পর কাবেরী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) বয়স তখন ছিল মাত্র ২১ বছর। বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা তখন সদ্য ১৮ পেরিয়েছেন। সেই সময় দল পরিচালনার দায়িত্ব একে একে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বর্ষীয়ান নেতারা। চালকের আসনে ছিল গাঁধী পরিবারই।


আরও পড়ুন: Karnataka Election Results 2023: ‘আজও ভালবাসার কদর রয়েছে এই দেশে’, কর্নাটকে জয়ের পর প্রতিক্রিয়া রাহুলের

এর পর দীর্ঘদিন ক্ষমতার মসনদে থেকেছে কংগ্রেস। কিন্তু ইউপিএ সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর, কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে একাধিক আঞ্চলিক দল। বিরোধীদের এককাট্টা করার স্ট্র্যাটেজি কংগ্রেসের হলেও, লাইমলাইট থেকে সরে যেতে শুরু করেছিল দল। জাতীয় স্তরে অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়েছিল কংগ্রেসের। কর্নাটকের জয় যে কংগ্রেসকে ভরপুর অক্সিজেন জোগাল, তা বলাই বাহুল্য।

শনিবার কর্নাটক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিধান সৌধের সামনে নেহরুর মূর্তির ফলকের লেখাগুলি যেন এক লহমায় ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েক দশক আগে। মাঝে ক্ষমতার হাতবদল হলেও, জনমানসে 'হাত' যে আজও প্রাসঙ্গিক সেই কথাই যেন বার বার প্রতিফলিত হচ্ছে।

কর্নাটক বিধান সৌধের ডানদিকে নেহরুর মূর্তি রয়েছে। আর ঠিক বাঁ দিকে মূর্তি রয়েছে বিআর আম্বেদকরের। বিধান সৌধের সামনে অশোক স্তম্ভের নীচে আজও জ্বলজল করছে একটি লেখা, 'Government Work is God's work.' আর কর্নাটকের সঙ্গে গাঁধী পরিবারের সম্পর্কও বহু পুরনো। ১৯৭৭ সালে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরাজিত হয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী (Indira Gandhi)। এর পর ১৯৭৮ সালে  চিকমাগালুর লোকসভা থেকে উপ নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।


তাই স্মৃতিচারণ করতে শোনা যায় বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীকে। তিনি বলেন, "এই কর্নাটক একদিন চিকমাগালুর হয়েছিল। সেই নির্বাচনে জিতেছিলেন ইন্দির। কর্নাটক কখনও কংগ্রেসকে হারায়নি।" অধীরের কথায় ভুল নেই। আরও এক বার, সঙ্কটের মুহূর্তে সেই কর্নাটকই কংগ্রেসকে অক্সিজেন জোগাল।