পায়েল মজুমদার, বীরভূম: এবারের লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election 2024) হচ্ছে সাত দফায়। তার মধ্যে চতুর্থ দফা অর্থাৎ ১৩ মে পশ্চিমবঙ্গের মোট ৮টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ যার মধ্যে রয়েছে বীরভূমও (Birbhum Lok Sabha Constituency)। আপনি কি লালমাটির জেলার এই লোকসভা কেন্দ্রটির ভোটার? তা হলে কিছু তথ্য় একনজরে জেনে নেওয়া যাক ?    

বীরভূম লোকসভা আসন...
পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের অন্যতম বীরভূম। এর মধ্যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। কী কী সেগুলি?   একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

বিধানসভা কেন্দ্র   জেলা
দুবরাজপুর     বীরভূম
সিউড়ি  বীরভূম
সাঁইথিয়া বীরভূম
রামপুরহাট বীরভূম
হাঁসন       বীরভূম
নলহাটি বীরভূম
মুরারই  বীরভূম

এই বিধানসভা আসনগুলির মধ্যে দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া এবং মুরারই--এই তিনটি আসন তফশিলি জাতিদের জন্য় সংরক্ষিত। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুবরাজপুর বিধানসভা আসনটি জিতেছিলেন বিজেপি। বাকি ছটি বিধানসভা আসনই ঝুলিতে পোড়ে তৃণমূল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই আসনের মোট ভোটার ছিলেন ১৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮০২ জন। ভোটদানের হার ছিল ৯২.১ শতাংশ। জিতেছিলেন তৃণমূলের শতাব্দী রায়। এবার কোন দলের প্রার্থী কারা? 

বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী:

বিজেপি: গত বছরখানেকেরও বেশি সময় ধরে নানা কারণে শিরোনামে লালমাটির জেলা। সেখানকার অন্যতম লোকসভা আসনে কোচবিহারের প্রাক্তন পুলিশ সুপার দেবাশিস ধরকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তার পর থেকেই অন্দরে এবং বাইরে তীব্র সমালোচনার মুখে গেরুয়া শিবির। দলের অন্দরে অস্বস্তি কারণ বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। গত লোকসভা ভোটের শতাব্দী রায়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে গিয়েছিলেন দুধকুমার। এই বছর দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। সেই জায়গায় সদ্য পদত্যাগী দেবাশিস ধরকে প্রার্থী করায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছেন দুধকুমার। জানিয়েছেন, স্থানীয় কাউকে প্রার্থী করলে অ্যাডভান্টেজ পেত বিজেপি। সঙ্গে সতর্কবার্তা, সাধারণ মানুষ এবং বিজেপি কর্মীদের কথা না শোনার খেসারত দিতে হবে দলকে। দেবাশিস ধরের নাম ঘোষণার সঙ্গেই শীতলকুচিতে গুলি চালানোর ঘটনাও তুলে এনেছেন তৃণমূল নেতারা। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট চলার সময় কোচবিহারের শীতলকুচিতে যে গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছিল, সে জন্য তাঁকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছে জোড়াফুল শিবির। যদিও তাঁর বক্তব্য, শীতলকুচি নয়। ভোট পরবর্তী হিংসার জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। 

তৃণমূল কংগ্রেস : গত ১০ মার্চ, জনগর্জন সভা থেকে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সেখানেই দেখা যায়, বীরভূমের প্রার্থী হিসেবে শতাব্দী রায়ের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শতাব্দী তিন বারের সাংসদ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৬.১ শতাংশের ব্য়বধানে জিতেছিলেন ওই আসন থেকে। কিন্তু এবার?এক্ষেত্রে অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতি যদি একটি চিন্তার বিষয় হয়, তা হলে অন্য একটি চিন্তার বিষয় হতে পারে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে স্বয়ং শতাব্দীকে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের একাধিক দলীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল। বলেছিলেন,' আপনাদের স্ত্রী, ভাই,আত্মীয়রা যে ওয়ার্ডে জেতেন,সেখানে আমি হারি কী করে? তা হলে নিজেদের ক্ষেত্রে যে গুরুত্ব দিয়ে ভোট করান, আমার বেলায় সেটা হয় না কেন?' বস্তুত, গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর যে ভাবে লালমাটির জেলায় তৃণমূলের অন্দরে কাজল শেখ ও তাঁর অনুগামীদের দাপট বাড়তে থাকে, তাতে আশঙ্কার মেঘ দেখেছিলেন দলেরই অনেকে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে বীরভূমের জেলা সভাধিপতির পদে বসেন একদা অনুব্রত বিরোধী বলে পরিচিত কাজল শেখ। তারপরেই কার্যত জেলাজুড়ে কোন ঠাসা হয়ে যায় অনুব্রত অনুরাগীরা। যদিও জেলে থেকেও জেলায় রয়েছেন বলে দাবি কেষ্ট-অনুরাগীদের। অনুব্রত-কাজল শিবিরের টানাপড়েন শেষমেশ তৃণমূলের ভোটবাক্সে ধাক্কা দেবে না তো? আপাতত সেই প্রশ্নেই জল্পনা নানা মহলে। 

বামফ্রন্ট: এখানে জোটের প্রার্থী হয়েছেন মিল্টন রশিদ। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বীরভূমের হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন এই কংগ্রেস নেতা। ২০২১ সালের ভোটে এই আসন 
'হাতছাড়া'  হয়। জেতেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী। এবার মিল্টনকেই জোটের প্রার্থী করা হয়েছে। ১৯৭১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বার এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ের স্বাদ পেয়েছিল সিপিএম। সিপিএম সাংসদ, রামচন্দ্র ডোম, এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে টানা ছ'বার জিতেছিলেন। তবে ২০০৯ সালে প্রথম বার এই আসনটি তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন শতাব্দী রায়। তার পর আরও দুবার ওই আসনে জিতেছেন তিনি। এবারও কি ট্রেন্ড থাকবে নাকি কেষ্টহীন-বীরভূম অস্বস্তিতে পড়তে পারে জোড়াফুল শিবির? 

কী নিয়ে ভোট?
যে দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলকে চাঁচাছোলা বিঁধে ভোটবাক্সে ধাক্কা দিতে চাইছে বিজেপি, তাতে অন্যতম 'হাতিয়ার' হতে পারে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি। বীরভূমের ডাকসাইটে তৃণমূল নেতা গরু পাচার  গ্রেফতারির পর
তিহাড় জেলে। তাঁর অনুপস্থিতি টের পেতে পারে জোড়াফুল শিবির, এমন জল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ রয়েছে সে সবও হাতিয়ার করতে পারেন বিরোধীরা। তা ছাড়া, পানীয় জল, রাস্তা ও বাড়ি নিয়ে হালেই সাঁইথিয়ার একটি গ্রামে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিদায়ী সাংসদ ও তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়। এটি প্রথম বার নয়। বছরখানেক আগেও দিদির দূত কর্মসূচিতে গিয়ে একাধিক বার ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে শতাব্দী রায়কে। অন্যদিকে,  বিজেপির বিরুদ্ধে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে অর্ন্তর্দ্বন্দ্ব। তা ছাড়া প্রাক্তন আইপিএস অফিসার দেবাশিস ধরকে নিয়ে শীতলকুচি-বিতর্ককেও অস্ত্র করতে ছাড়ছে না তৃণমূল শিবির। গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল, অর্থাৎ গত ৩ মাস ধরে এবিপি সি-ভোটার যে সমীক্ষা চালিয়েছিল, তাতে ইঙ্গিত এই হাইভোল্টেজ কেন্দ্রে এবার জোর টক্করের সম্ভাবনা। ৩ শতাংশ ভোট স্যুইং হলেই ফলাফল বদলে যেতে পারে।  তবে তা না হলে সম্ভাব্য জয়ী হতে পারেন শতাব্দী রায়।

২০১৯ সালের নির্বাচনের ফলাফল...
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৫ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮০২। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছিলেন ৮ লক্ষ ৩ হাজার ৮৪২ জন, মহিলা ভোটারের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯২৮। ভোট পড়েছিল ১৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪২৩ জনের। আসনটি জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। জয়ী প্রার্থী ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রার্থীর মধ্যে  প্রাপ্ত ভোট শতাংশের হারে ফারাক ছিল ৬.১ শতাংশ। একনজরে পরিসংখ্যান...

(প্রথম চার স্থানে যে প্রার্থীরা...)

প্রার্থীর নাম   দল       প্রাপ্ত ভোট   ভোট শতাংশের হার
শতাব্দী রায়   তৃণমূল কংগ্রেস  ৬৫৪,০৭৭   ৪৫.১
দুধকুমার মন্ডল   বিজেপি  ৫৬৫,১৫৩     ৩৯
রেজাউল করিম   সিপিআইএম           ৯৬,৭৬৩    ৬.৭
ইমাম হোসেন কংগ্রেস  ৭৫,৫৪৬  ৫.২

                                                             
                                                                  
২০১৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল...
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৪ লক্ষ ৯৫ হাজার ১০৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৫৭, মহিলা ভোটার ছিলেন ৭ লক্ষ ২১ হাজার ৬৫১ জন। ভোট পড়েছিল ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮১৯ জনের। আসনটি তৃণমূল কংগ্রেস জেতে। জয়ী প্রার্থী ও দ্বিতীয় স্থানাধিকারী প্রার্থীর মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের হারে ফারাক ছিল ৫.৩ শতাংশ।একনজরে পরিসংখ্যান...


(প্রথম চার স্থানে যে প্রার্থীরা...)

প্রার্থীর নাম   দল       প্রাপ্ত ভোট   ভোট শতাংশের হার
শতাব্দী রায়   তৃণমূল কংগ্রেস  ৪৬০,৫৬৮   ৩৬.১
ডাঃ এলাহি কমরে মহম্মদ   সিপিআইএম    ৩৯৩,৩০৫    ৩০.৮
জয়  বন্দ্যোপাধ্য়ায়        বিজেপি       ২৩৫,৭৫৩   ১৮.৫
সৈয়দ সিরাদ জিম্মি   কংগ্রেস ১,৩২, ০৮৪ ১০.৪

  

এবার কী হয় ফলাফল? জানা যাবে ৪ জুন।

(তথ্যসূত্র:ceowestbengal.nic.in)

(তথ্যসূত্র:indiavotes.com)

(তথ্যসূত্র:birbhum.gov.in)

(তথ্যসূত্র:www.eci.gov.in)

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে  

আরও পড়ুন:আপনি কি আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার? যে কয়েকটি বিষয় না জানলেই নয়...