আলিপুরদুয়ার: লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে গত ১৬ মার্চ। এবার সাত দফায় ভোট হবে, জানিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে প্রথম দফার ভোট আগামী ১৯ এপ্রিল। পশ্চিমবঙ্গের যে তিনটি লোকসভা আসনে প্রথম দফায় ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম আলিপুরদুয়ার। আপনি কি এই কেন্দ্রের ভোটার? একনজরে জেনে নেওয়া যাক এই লোকসভা আসনের খুঁটিনাটি।

আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসন...
পশ্চিমবঙ্গে যে ৪২টি লোকসভা আসন রয়েছে, তার মধ্যে আলিপুরদুয়ার আসনটি তফশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র এর আওতায় রয়েছে। এর মধ্যে ছটি আসন জলপাইগুড়ি জেলার, একটি আসন কোচবিহারের। কী কী বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে? দেখে নেওয়া যাক।

বিধানসভা আসন  জেলা
তুফানগঞ্জ  কোচবিহার   
কুমারগ্রাম  আলিপুরদুয়ার
কালচিনি          আলিপুরদুয়ার
আলিপুরদুয়ার    আলিপুরদুয়ার
ফালাকাটা  আলিপুরদুয়ার
মাদারিহাট    আলিপুরদুয়ার
নাগরাকাটা   আলিপুরদুয়ার

২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে, এই লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিল ১৬ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬১৬। ভোটদানের হার ছিল ৮৩.৫শতাংশ। গত বার এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন, বিজেপির জন বার্লা। এবার কোন দলের প্রার্থী কারা? 

আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী:

বিজেপি: ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী জন বার্লাকে প্রার্থী না করে মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে এই লোকসভা আসন থেকে এবার প্রার্থী করেছে বিজেপি। এই নিয়ে অবশ্য কম জলঘোলা হয়নি। প্রার্থী তালিকায় মনোজের নাম দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বার্লা। জানিয়েছিলেন, তাঁর জন্যই টিকিট পাননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভার পরে অবশ্য সুর নরম করেন। বলেন, আলিপুরদুয়ারে বিজেপির 'অভিভাবক' তিনি। সকলের জন্যই প্রচার করবেন। যদিও মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় মনোজের সঙ্গে তাঁকে দেখা না যাওয়ায় জল্পনা বেড়েছে।  

তৃণমূল কংগ্রেস : গত ১০ মার্চ, জনগর্জন সভা থেকে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল। সেখানে দেখা যায়, আলিপুরদুয়ার থেকে প্রকাশ চিক বরাইককে প্রার্থী করেছে তারা। গত বার এই আসনে তাদের প্রার্থী ছিলেন দশরথ তিরকে যিনি ২০১৪ সালে জয়ী হন। কিন্তু ২০১৯ সালে, বার্লার কাছে ২ লক্ষ ৪৩ হাজারের কিছু বেশি ভোটে হেরে যান। 

বামফ্রন্ট: অন্দরের দরকষাকষির পর এই আসনে আরএসপির প্রার্থী মিলি ওরাওঁ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে সিদ্ধান্ত নেয় বামফ্রন্ট। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনও খোলা রেখেছে বামফ্রন্ট। সেক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত কিছু বদল হয় কিনা, সেটি দেখার।

কী নিয়ে ভোট?
চা বাগানের সমস্যা এখানে ভোটের অন্য়তম বড় ইস্যু হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, বাম আমলে বন্ধ একের পর এক চা-বাগান খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে। গত ডিসেম্বরের উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, চা বাগানের শ্রমিকদের প্রত্যেককে জমির পাট্টা দেবেন। আলিপুরদুয়ারে ৪ হাজার ৬৪২ জন চা শ্রমিককে পাট্টা দেওয়ার কথা সে বার জানিয়েছিলেন তিনি। বাকি জায়গায় যত দ্রুত সম্ভব পাট্টার ব্যবস্থা করা হবে। শুধু তাই নয়। তাঁর আশ্বাস ছিল , পাট্টার সঙ্গে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেবেন, বাড়ি করে নেওয়ার জন্য। এর ফলে আলিপুরদুয়ারের প্রায় ২৬ হাজার মানুষ পরিষেবা পাবেন, আশ্বাস ছিল তাঁর। অন্য দিকে, মাসদুয়েক আগে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী চা বাগানের মানুষের উদ্দেশে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিজেপিকে ক্ষমতায় আনলে চা বাগানের মালিকানা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। শুধু তাই নয়। পাকা বাড়ি, শৌচালয়, গ্যাসের কানেকশন--চা বাগানের শ্রমিক-সহ সীমান্ত এলাকার মানুষদের জন্যও এই সমস্ত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছিলেন শুভেন্দু। নজরে থাকবে স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টিও। কারণ গত ডিসেম্বরে, আলিপুরদুয়ারেরই মাদারিহাটে অ্যাম্বুল্যান্স না পাওয়ায় চা শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। অন্য দিকে, গত বিধানসভা ভোটের পর পর পৃথক রাজ্যের দাবি তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে আলিপুরদুয়ার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল দুই বিজেপি সাংসদের নামে। এই বিষয়টি নিয়ে কে কী বলছেন, সেটিও ভোটের আগে নজরে থাকতে পারে। পাশাপাশি, পর্যটনে উন্নয়নও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে। 

২০১৯ সালের নির্বাচনের ফলাফল (প্রথম চার স্থানে যে প্রার্থীরা...) 

প্রার্থীর নাম                দল প্রাপ্ত ভোট ভোট শতাংশের হার (%)
 জন বার্লা  বিজেপি  ৭৫০৮০৪ ৫৪.৪
দশরথ তিরকে তৃণমূল ৫০৬৮১৫ ৩৬.৭
মিলি ওরাওঁ আরএসপি ৫৪০১০ ৩.৯
মোহনলাল বসুমাতা কংগ্রেস ২৭৪২৭

 

২০১৪ সালের নির্বাচনের ফলাফল (প্রথম চার স্থানে যে প্রার্থীরা...) 

প্রার্থীর নাম                দল প্রাপ্ত ভোট ভোট শতাংশের হার (%)
 দশরথ তিরকে তৃণমূল ৩৬২৪৫৩ ২৯.৬
মনোহর তিরকে আরএসপি ৩৪১০৫৬ ২৭.৯
বীরেন্দ্র বরা (ওরাওঁ) বিজেপি ৩৩৫৮৫৭ ২৭.৪
জোসেফ মুন্ডা কংগ্রেস ১১৬৭১৮ ৯.৫

 

আলিপুরদুয়ার জেলার ভৌগোলিক অবস্থান ও জনবিন্যাস...
২০১৪ সালের ২৫ জুন আলাদা জেলা হিসেবে আলিপুরদুয়ার তৈরি হয়। আলিপুরদুয়ার মিউনিসিপ্যালিটি এবং ছটি কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ব্লক নিয়ে এই জেলা তৈরি। জেলার সদর দফতর আলিপুরদুয়ার। এখানকার ৮০ শতাংশের বেশি তফশিলি জাতি-উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ। রাজবংশী, রাভা, সাঁওতাল, মদেশীয়, টোটো এবং ওঁরাওদের মতো জনজাতিরাও এই জেলার বাসিন্দা। আলিপুরদুয়ারের পশ্চিম দিকে জলপাইগুড়ি, পূর্বে অসম এবং দক্ষিণে কোচবিহার। ভুটানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্তও রয়েছে এই জেলার। একাধিক নদী, পাহাড়, জঙ্গল ও চা-বাগানে ঘেরা উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় জায়গা।    

(তথ্যসূত্র: alipurduar.gov.in)

(তথ্যসূত্র: ceowestbengal.nic.in)

(তথ্যসূত্র: indiavotes.com)

আরও পড়ুন:চায়ের পর চপ ! প্রচারে বেরিয়ে ঢাক বাজালেন সুজাতা