কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, ঋত্বিক মণ্ডল ও হিন্দোল দে, কলকাতা: বাংলায় কি এবার ধর্মভিত্তিক দলের উত্থান ঘটতে চলেছে? ব্রিগেডে আব্বাস সিদ্দিকির উপস্থিতিতে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে এই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে বিভিন্ন মহলে। যদিও, তৃণমূল এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে নারাজ। অন্যদিকে, বিজেপি পুরনো পথে হেঁটেছে।


ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকি বলেছেন, তৃণমূলের দাদাগিরিতে কেউ কথা বলতে পারে না। আমাদের মতো বাঘের বাচ্চারা কথা বলে। ২০২১-এ মমতাকে জিরো করে দেখিয়ে দেব।


 


মহম্মদ সেলিম থেকে অধীর চৌধুরী। বিমান বসু থেকে প্রদীপ ভট্টাচার্য। সীতারাম ইয়েচুরি থেকে ভূপেশ বাঘেল। রবিবার জোটের ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে ছিল এরকম সব হেভিওয়েট নাম। কিন্তু, তার মধ্যেও আলাদা করে নজর কাড়লেন একজন। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকি।


তিনি মঞ্চে পৌঁছতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁর সমর্থকরা। মঞ্চ থেকে নরেন্দ্র মোদি-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন আব্বাস সিদ্দিকি।জোট নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন কংগ্রেসকেও!এরইসঙ্গে প্রশ্ন উঠে গেল, তাহলে কি ধর্মভিত্তিক দলের উত্থান ঘটতে চলেছে বাংলায়?এই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিতেই পুরনো ছকে হাঁটতে শুরু করেছে বিজেপি!


বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ,বামেরা আর ধর্মনিরপেক্ষ বলবেন না... মুখ্যমন্ত্রী সেলিম আর আব্বাস হবেন উপমুখ্যমন্ত্রী।


 


তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, এখনই উত্থান বলা যাবে না। ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে দীর্ঘমেয়াদে কী হয়, সেটা দেখতে হবে।


যদিও, বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, দেশের মধ্যে জম্মু কাশ্মীর ও অসমের পর পশ্চিমবঙ্গেই মুসলিম ভোটারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।


 


কিন্তু, তাৎ‍পর্যপূর্ণ বিষয় হল, মুসলিমভিত্তিক কোনও রাজনৈতিক দলই বাংলার নির্বাচনে কখনও কোনও দাগ কাটতে পারেনি। ১৯৬৯ সালে প্রাদেশিক মুসলিম লিগ ৪০টি আসনে প্রার্থী দেয়। তিনটিতে জিতে তারা যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল।


১৯৭০ সালে অজয় মুখার্জির মন্ত্রিসভায় মুসলিম লিগ ছিল। কিন্তু ১৯৭১-এর নির্বাচনে তাদের জামানত জব্দ হয়। এখন সে দলের অস্তিত্ব এ রাজ্যে আর নেই।


জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া নামে একটা দল তৈরি করে ভোটে লড়েছিলেন। কিন্তু, ব্যর্থ হয়েছিলেন।শেষপর্যন্ত তৃণমূলের প্রতীকে লড়ে তিনি জিতেছিলেন।


ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া এবং সোশাল ডেমোক্রাটিক পার্টি অব ইন্ডিয়া নামে আরও দুটো মুসলিমভিত্তিক দলও বাংলায় লড়ে কোনও সুবিধা করতে পারেননি।


অর্থাত্, এর ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের একাংশের মত, পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান ভোটাররা নির্বাচনে মুসলিম পরিচিতির বদলে রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেন। তারা কংগ্রেস-বাম কিংবা তৃণমূলের মতো রাজনৈতিক দলের প্রতিই বারবার আস্থা দেখিয়েছে! তাই আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ কি ব্যাতিক্রমী কিছু করতে পারবে? উত্তর মিলবে ২ মে। ভোটের ফলাফলে।