কেরল: ওয়েইনাড়। এই লোকসভা কেন্দ্র জন্মলগ্ন থেকেই কংগ্রেসের গড়। ২০০৯ সালে তো বটেই ২০১৪ সালে কংগ্রেসের দুর্দিনেও এই কেন্দ্র থেকে জিতেই সংসদ হয়েছিলেন কেরলের কংগ্রেস নেতা এম আই শাহনাভাস। দীর্ঘ রোগভোগের পর গত বছর নভম্বরে প্রয়াত হয়েছেন হন তিনি। তারপর থেকেই এই কেন্দ্র কার্যত ‘অভিভাবকহীন’। এবার এই কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। আর রাহুল প্রার্থী হওয়া মাত্রই লোকচর্চায় চলে এসেছে ওয়েইনাড়।
কেরলের এই কেন্দ্রে এবার বামফ্রন্ট থেকে প্রার্থী করা হয়েছে সিপিআই নেতা পি পি সুনীরকে। বিজেপি এখানে প্রার্থীই দিতে পারেনি। এনডিএ প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বিডিজেএসের তুষার ভেল্লাপল্লি। উপজাতি অধিষ্ঠিত এই অঞ্চলে লড়াই মূলত দ্বিমুখীই। কংগ্রেস বনাম বাম।
এখানে দেশপ্রেমের কোনও হাওয়াই এখনও সঞ্চারিত হয়নি। বরং ভোট হবে উন্নয়নের ইস্যুতেই। এতদিন যা হয়নি, সেই খাদ্য, পানীয় জলের বন্দোবস্ত ও বাসস্থান সুনিশ্চিত করার আশাতেই ভোট দেবেন ওয়েইনাড়ের আদিবাসী মানুষ। বিশেষ করে সুলতান বাথরে ও মননথাবাদি-সংরক্ষিত এই দুই বিধানসভার মানুষ রাস্তা, পানীয় জলের সংকটে ভুগছেন। এখানকার সিংহভাগ মানুষের বক্তব্য, তাদের ঘরবাড়ি জঙ্গলের মধ্যে হওয়ায়, বেশিরভাগ সময়ই হাতির হানায় সব তছনছ হয়ে যায়। প্রাণ বাঁচাতে বাঁশঝাড়ের মধ্যে দিয়েই পালাতে হয়। যেখানে জীবনই বিপন্ন, সেখানে ভোটে অংশগ্রহণ করে কী হবে? এই প্রশ্নটাই আদিবাসী মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে সবসময়। আর সেকারণেই শহরাঞ্চলে রাহুলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে উন্মাদনা থাকলেও আদিবাসীদের কাছে তার কোনও তাপ উত্তাপই নেই।
ওই অঞ্চলের চিকিত্সক ডঃ জিতেন্দ্রনাথ রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনুরোধ করেছেন, তাঁরা যেন ওয়েইনাড়ের মানুষের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন, আর সেটা করতে পারলেই সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হবে। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ডঃ জিতেন্দ্রনাথ এই অঞ্চলে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, “এখানকার মানুষ এখনও স্রেফ মাংস ও ফল খেয়েই বাঁচে। সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েও তাদের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করাতে পারেনি। পাউডার দুধ, চালের কোনও ব্যবহারই তারা জানেনা। আর সে কারণেই এখানকার মানুষ অপুষ্টিতে ভোগেন।” ডঃ জিতেন্দ্রনাথের আবেদন, এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রয়োজন, আদিবাসী মানুষগুলোকে কেবল ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে দেখবেন না।