সোমনাথ মিত্র, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, হুগলি: বিনা প্ররোচনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠল খানাকুলের বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত ব্য়বসায়ী, তাদের সমর্থক বলে দাবি করেছে তৃণমূল। অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কের পাল্টা দাবি, স্থানীয় বাসিন্দাদের হেনস্থার প্রতিবাদ করেছেন তিনি। সিসিটিভি ফুটেজের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
অভিযোগকারী ব্য়বসায়ী যে সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে আঙুল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরপরই দেখা গেল সপাটে চড় মারতে। অভিযোগ, যাঁকে আঙুল তুলে শাসাতে এবং চড় মারতে দেখা যাচ্ছে, তিনি খানাকুলের বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। লোকসভা ভোটের আবহে এই CCTV ফুটেজ ঘিরেই তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। যাঁর ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি, সেই ব্য়বসায়ীর নাম অরিন্দম ভৌমিক। তিনি হুগলির খানাকুলের ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা।
তাঁর অভিযোগ, বুধবার সন্ধেয় কোনও কারণ ছাড়াই, তাঁর দোকানে এসে আচমকা হামলা চালায় বিজেপি বিধায়ক ও তাঁর অনুগামীরা। তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁর দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরার ফুটেজকে হাতিয়ার করে খানাকুল থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযোগকারী ব্যবসায়ী অরিন্দম ভৌমিক বলেন, 'অকথ্য় ভাষায় গালাগালি করতে করতে আমার দিকে তেড়ে আসেন। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না কেন। ২০-২৫ জন লোক ছিল। এসে উনি আমাকে হঠাৎ করে গালে চড় মারেন। আরেক ব্য়ক্তি পিছন থেকে এসে আমাকে ধাক্কাধাক্কি করেন এবং দেখতে পাবেন গেঞ্জি ছেঁড়া হয়ে গেছে। কেনই বা করলেন, আমার সঙ্গে কীসের শত্রুতা? বিধায়ক আমার গায়ে হাত দিয়েছেন সেই ফুটেজ সহ থানায় অভিযোগ করছি।'
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিজেপি বিধায়ক। তাঁর দাবি, ভোটের আগে ইচ্ছা করে জল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করায় মহিলাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ বলেন, 'আমরা তো কিছুই করিনি। খুব তো সামান্য় একটু ধস্তাধস্তি হয়েছে, বা হাতটা তুলেছিলাম। তাও মারিনি ওকে। কিন্তু যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস বলার চেষ্টা করছে, আসলে মায়েদের বোনেদের ইজ্জত যেখানে হানি করার চেষ্টা করছে। এরা কোনওদিন ভাল মানুষ না। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। সামান্য় জল চাইতে গেলে এরা গালিগালাজ করে। জল চাইতে গেলে ইজ্জত হানি করার চেষ্টা করে। এদের সঙ্গে কী ধরনের ব্য়বহার করা উচিত?'
হামলার ঘটনার ছবি সোশ্য়াল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে তৃণমূল। সেখানে অভিযোগকারী অরিন্দম ভৌমিককে তৃণমূলের কর্মী বলে উল্লেখ করা হয়। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'আসলে গুন্ডা বলতে বিজেপি, গুন্ডামি বলতে বিজেপি, সন্ত্রাসবাদী বলতে বিজেপি, এদের কাজ হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে অত্য়াচার করা। বিভিন্ন জায়গায় ভয় দেখানো, এত কেন্দ্রীয় বাহিনী যেটা আসছে, নির্বাচন কমিশন পাঠাচ্ছেন, অমিত শাহর কেন্দ্রীয় বাহিনী, তাঁরাও মানুষকে ভয় দেখাতেই আসছে। আমরা এসব ভয় পাই না। তাই ওরা চেষ্টা করে যাক, আমরা প্রতিরোধ করব।'
বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, 'যে CCTV ফুটেজটা দেখা যাচ্ছে সেটা আদৌ সত্য় কিনা সেটা একটা বিষয় আছে। মূল যে ঘটনা PHE নিয়ে দীর্ঘদিন মানুষ জল পাচ্ছে না, জল না পাওয়ার ফলে বিধায়ক দীর্ঘদিন ধরে আবেদন করে জানিয়ে এসেছে ওখানে জলের ব্য়বস্থা করার জন্য়। বিজেপিকে ড্য়ামেজ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টটা বাড়ছে। যেটা CCTV ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সেটা আমি জানি না, ফুটেজটা পরীক্ষিত নয়। সেটা পরীক্ষিত হোক, বলতে পারব।' এই ঘটনায় বিজেপি বিধায়ক সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে খানাকুল থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ব্য়বসায়ী।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস শেয়ার করা যাবে ইন্সটাগ্রাম স্টোরিতে, আসছে নতুন ফিচার