বহরমপুর : গড় কি এবার অক্ষত রাখতে পারবেন অধীর চৌধুরী (Baharampur Congress Candidate Adhir Chowdhury) ? এই প্রশ্ন উঠছে কারণ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের (2021 West Bengal Assembly Election) নিরিখে এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ৬টিতেই জয়লাভ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। একটি আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। কংগ্রেসের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। যদিও গত পাঁচ-পাঁচটি লোকসভা ভোটে অপরাজেয় অধীর। ১৯৯৯ থেকে টানা ৫ বার এই কেন্দ্র থেকে জিতে সংসদে গিয়েছেন তিনি। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে একদশক কেটে গেলেও বহরমপুরে দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বহরমপুর থেকে নট আউট কংগ্রেস সাংসদের তথা এবারও টিকিট পাওয়া অধীরের উইকেট নিতে ২০১১-র ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠানকে (Yusuf Pathan) মাঠে নামিয়েছে তৃণমূল। বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই এবার ত্রিমুখী। বহরমপুর বিজয়ে বিজেপির বাজি প্রবীণ চিকিৎসক নির্মল সাহা। রাজনীতির ময়দানে নতুন ইউসুফ প্রচারে কোনো খামতি রাখছেন না। এমনকী তাঁকে দল প্রার্থী ঘোষণার পর কার্যত 'বিদ্রোহ' ঘোষণা করা ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরও এখন তাঁর প্রচারসঙ্গী হচ্ছেন একের পর এক কর্মসূচিতে। শুধু কি তাই, ভোটে জিতলে তাঁকে বহরমপুরে বাড়ি বানানোর 'আশ্বাস'ও দিয়ে ফেলেছেন। নিজস্ব স্টাইলে প্রচারের ময়দান কাঁপাচ্ছেন বঙ্গ রাজনীতির পোড়-খাওয়া মুখ তথা বাম আমলেও নিজের জেলায় দলীয় সংগঠন চাঙ্গা রাখা অধীর। এরকম একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদনে আমরা দেখে নেব পরিসংখ্যানগত দিকে থেকে কোথায় দাঁড়িয়ে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র (Baharampur Lok Sabha Constituency)। 

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় কোন কোন বিধানসভা এলাকা ?

১. বড়ঞা (এসসি)
২. কান্দি
৩. ভরতপুর
৪. রেজিনগর
৫. বেলডাঙা
৬. বহরমপুর
৭. নওদা

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে উপরের ৭ কেন্দ্রে জয়ী কোন দল ?

বিধানসভা কেন্দ্র বিধায়ক রাজনৈতিক দল
১. বড়ঞা (এসসি) জীবনকৃষ্ণ সাহা তৃণমূল কংগ্রেস
২. কান্দি অপূর্ব সরকার (ডেভিড) তৃণমূল কংগ্রেস
৩. ভরতপুর হুমায়ুন কবীর তৃণমূল কংগ্রেস
৪. রেজিনগর রবিউল আলম চৌধুরী তৃণমূল কংগ্রেস
৫. বেলডাঙা হাসানুজ্জামান শেখ তৃণমূল কংগ্রেস
৬. বহরমপুর সুব্রত মৈত্র (কাঞ্চন) বিজেপি
৭. নওদা শাহিনা মমতাজ খান তৃণমূল কংগ্রেস

শেষ ৩ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী কে বা কারা ?

২০০৯ অধীররঞ্জন চৌধুরী কংগ্রেস
২০১৪ অধীররঞ্জন চৌধুরী কংগ্রেস
২০১৯ অধীররঞ্জন চৌধুরী কংগ্রেস

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য-

১. বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে সাক্ষরতার হার ৫৭.০৯%
২. এসসি ভোটারের হার ১৩.২% (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৩. এসটি ভোটারের হার ০.৯ % (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৪. মুসলিম ভোটারের হার ৫২ % (ভোটার তালিকা অনুযায়ী)
৫. গ্রামীণ এলাকায় ভোটার ৮১.৯% (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৬. শহর এলাকার ভোটার ১৮.১ % (২০১১ জনগণনা অনুযায়ী)
৭. ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্রে মোটার ভোটার ১৬৩২০৮৭
৮. ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্রে মোট বুথ ছিল ১৮৪৪
৯. ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৯.১%

বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে কোন ধর্মে কত শতাংশ ভোটার ?

বৌদ্ধ ০%
ক্রিশ্চান ০.২৫%
জৈন ০.০৪%
মুসলিম ৫২%
এসসি ১৩.২%
এসটি ০.৯%
শিখ ০.০১%

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে প্রতিন্দ্বন্দ্বী করা মূল রাজনৈতিক দলগুলির ভোট শতাংশ-

কংগ্রেস ৪৬%
তৃণমূল ৩৯.৮%
বিজেপি ১১%

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে এই লোকসভা কেন্দ্রে কোন দলের কত শতাংশ ভোট ?

তৃণমূল ৫০.১%
বিজেপি ৩১.৬%
কংগ্রেস ১৫.১%

বহরমপুরে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট-

২০১১-র ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ভারতকে জিতিয়েছিলেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। বহরমপুর লোকসভায় ডবল হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রদেশ কংগ্রেসের ক্যাপ্টেন অধীর চৌধুরী কি পারবেন বিপক্ষের বাউন্সার-কে বাউন্ডারির ওপারে পাঠাতে ? IPL-এর বাজারে তা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে বহরমপুরের আনাচ-কানাচে। 

লোকসভা নির্বাচনে ব্রিগেডের ময়দান থেকে একাধিক নতুন মুখ এনে চমক দিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তার মধ্য়ে অন্য়তম গুজরাতের বরোদার বাসিন্দা বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার ১১ দিনের মাথায় বহমপুরে পা রেখে প্রচারে নামেন তিনি। বহিরাগত নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষের জবাবও দেন। বলেন, 'আমাকে বহিরাগত বলা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদিও তো গুজরাতের বাসিন্দা হয়ে বারাণসী থেকে ভোটে লড়েন। কিন্তু ওঁকে কি বহিরাগত বলা হয় ? আমিও গুজরাত থেকে বাংলায় এসেছি ভোটে লড়তে, তা হলে আমি কেন বহিরাগত হতে যাব ! আমি বাংলারই ছেলে। এখানে থাকতেই এসেছি। আমার জন্মভূমি গুজরাতে আর এটা আমার কর্মভূমি। এখানে আমি অনেক কাজ করেছি এবং এরপরও আমাকে অনেক কাজ করতে হবে।'

বহরমপুর থেকে তৃণমূল ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করা মাত্রই কার্যত 'বিদ্রোহ' ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বলেছিলেন, 'অধীর চৌধুরীকে অন্য় রাজ্য় থেকে খেলোয়াড় এনে বা কলকাতা থেকে গায়ক নিয়ে গিয়ে যে পরাস্ত করা যাবে না সেটা এর আগে প্রমাণিত।' তৃণমূল বিধায়ক কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, 'এর আগে ২০১৪ সালে এক গায়ককে আনা হয়েছিল প্রার্থী করে। সেবার ৩ লক্ষের বেশি ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এবার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করেই বহরমপুর লোকসভা আসনে এক খেলোয়াড়কে প্রার্থী করা হয়েছে।'  কিন্তু, প্রার্থী হওয়ার ১১ দিন পর ইউসুফ যেদিন প্রথম এই কেন্দ্রে প্রচারে আসেন ইউসুফ সেদিন থেকেই  হুমায়ুন কবীরকে দেখা যায় ইউসুফ পাঠানের ছায়াসঙ্গী হিসেবে ঘুরতে। শুধু তা-ই, দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে একাধিক জায়গায় ঘুরছেন তিনি।

বহরমপুরের ভূমিপুত্র। শহর থেকে গ্রাম অলি-গলিতে ঘুরে প্রচার সারছেন কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী। চেনা পিচে চালিয়ে খেলছেন তিনি। তবে, পিচ চেনা হলেও, প্রচারে কোনোও খামতি রাখছেন না। সম্প্রতি প্রচারের ময়দান থেকে ক্ষমতায় এলে বেকারদের জন্য নয়া প্রকল্প নিয়ে আসা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন কংগ্রেস প্রার্থী। তিনি বলেন, 'আগামী দিনে আমরা আরেকটা প্রকল্প নিয়ে আসছি। সেটা হল রাইট টু জব। অর্থাৎ, একটা ছেলে বেকার হলে তাঁর চাকরির গ্যারান্টি। সেটা কীভাবে? একটা শিক্ষিত যুববকে একটা বছর ট্রেনিং দেওয়ার জন্য এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ হবে তাঁর জন্য। সেই টাকা বরাদ্দ করে কী করা হবে? তাঁকে ট্রেনড করা হবে যাতে কোনও সরকারি অথবা বেসরকারি কোম্পানিতে তাঁর চাকরি নিশ্চিত হয়।'

ত্রিমুখী লড়াই হলেও বহরমপুরে ফ্রন্টফুটে খেলছে তৃণমূল ও কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে এর আগে বহরমপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী হওয়ার চ্যালেঞ্জও ছোড়েন অধীর চৌধুরীর। নাম না করে ইউসুফ পাঠানকে শিখণ্ডী বলে কটাক্ষও করেন। অর্থাৎ, বহরমপুরে এবার খেলোয়াড় বনাম খেলোয়াড়... একজন বাইশ গজে খেলে পাকিয়েছেন হাত তো অন্য়জন রাজনীতির ময়দানে। তবে নির্বাচন শেষে কার বলে ছক্কা আসে তা বলবে সময়।

১৩ মে, চতুর্থ দফায় বহরমপুরে ভোট। শেষ হাসি কে হাসবেন, তা জানা যাবে ৪ জুন ভোটের ফল ঘোষণার দিন।

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।