রাজীব চৌধুরী, ঝিলম করঞ্জাই ও দীপক ঘোষ, কলকাতা : অধীর চৌধুরীর প্রসঙ্গে কি এবার সুর নরম করলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ? বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে অধীর চৌধুরীর অনমনীয় মনোভাবের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি তাঁকে কার্যত হুঁশিয়ারি দেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। যদিও আজ তিনি বলেন, 'অধীর চৌধুরী কংগ্রেসের লড়াকু সৈনিক। পশ্চিমবঙ্গের নেতা।'
মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বিরোধিতার প্রশ্নে অধীর চৌধুরীর কট্টর অবস্থানের সামনে কি শেষ পর্যন্ত সুর নরম করতে বাধ্য় হলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ? অধীর চৌধুরীর কট্টর মমতা বিরোধিতার কথা পশ্চিমবঙ্গের সকলেই জানে। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড আবার তৃণমূল নেত্রী সম্পর্কে বারবরই নরম অবস্থান নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি নাম না করেই অধীর চৌধুরীকে কার্যত হুঁশিয়ারি দেন কংগ্রেস সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনি বলেছিলেন, 'অধীররঞ্জন চৌধুরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমি আছি, কংগ্রেস দল আছে, হাইকমান্ড আছে। তাই আমরা যেটা ঠিক করব সেটাই সঠিক। আমরা যা সিদ্ধান্ত নেব সেটা মেনে চলবেন। যদি কেউ না মানেন, তাহলে তিনি বাইরে যাবেন।'
কিন্তু অধীর চৌধুরীও পাল্টা বুঝিয়ে দেন বাংলায় কংগ্রেসকে শেষ করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। তাই কোনওভাবেই তিনি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে আপোসের রাস্তায় হাঁটবেন না। অধীরের কথায়, "এ বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসকে খতম করা হয়েছে। একদিন নয়, বছরের পর বছর ধরে। এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে কংগ্রেসের সহযোগিতায় ক্ষমতায় আসার পরের দিন থেকে কংগ্রেসকে হত্যা করার অভিযানে নেমেছেন। তাই কংগ্রেস কর্মী হিসাবে, একজন পদাতিক সৈনিক হিসাবে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমরা এই বাংলায় যেখানে প্রতিদিন অত্যাচারিত হচ্ছি, সেখানে কখনও আমরা তাঁর দয়া নিতে পারি না, পারি না , পারি না। এখানে লড়াইটা নৈতিকতার। এখানে লড়াইটা কংগ্রেসকে রক্ষা করার। এখানে লড়াইটা অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিত মানুষের লড়াই। এ বাংলায় যে মহিলা আমাদের খতম করেছেন, তাঁর সঙ্গে দোস্তি করতে পারি না। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা কোনও মতে খাতির করতে পারব না।"
এই পরিস্থিতিতে এবার অধীর চৌধুরীর ভূয়সী প্রশংসা করলেও, ইন্ডিয়া জোট ইস্যুতে তৃণমূলের পাশেই ফের একবার দাঁড়িয়েছে কংগ্রেসের হাইকমান্ড। সোমবার খাড়গে বলেন, "কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিবিশেষকে নিয়ে বলতে চাই না। উনি আমাদের লড়াকু সৈনিক। পশ্চিমবঙ্গের নেতা।কিছু লোক দাবি করছিলেন যে, তৃণমূল চায় না আমরা বামপন্থীদের সঙ্গে জোট করি, তাঁরা এটাকে অন্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এটা হবে না। কংগ্রেস পার্টি মজবুত। একে অপরকে বোঝে। এখানে যে হয়েছে সেটা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। বামেদের সঙ্গে জোট হওয়া উচিত। সেই মতোই আমরা চলছি।"
আজ অধীরকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার সম্পর্কে কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্য এবং আপনার বক্তব্য নিয়ে একটা বিতর্ক চলছে। আপনার কি মনে হয় যে জাতীয় স্তরে জোটের বাধ্যবাধকতা রক্ষার্থেই কংগ্রেস সভাপতি আপনার সম্পর্কে এমন মন্তব্য করলেন? উত্তরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, 'বলতে পারব না। সেটা কংগ্রেস সভাপতিকে জিজ্ঞেস করবেন। তিনি ভাল উত্তর দিতে পারবেন। আমি কংগ্রেস সভাপতির মুখপাত্র তো নই।'
প্রেক্ষাপট-
I.N.D.I.A জোটের সরকার তৈরি হলে, তাতে থাকবেন কি থাকবেন না, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, 'I.N.D.I.A জোটকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সবরকম সাহায্য করে আমরা সরকার গঠন করে দেব যাতে বাংলায় আমার মা বোনেদের কোনওদিন অসুবিধা না হয়।' তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক জোরালো হতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন তৃণমূল নেত্রী। বলেন, 'সর্বভারতীয় স্তরে অনেকে আমাকে ভুল বুঝেছেন। সর্বভারতীয় স্তরে I.N.D.I.A জোট আমি তৈরি করেছিলাম এবং I.N.D.I.A জোটে আমরা থাকব।' এরপরই অধীর চৌধুরীকে কার্যত হুঁশিয়ারি দেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি। তারপরই শুরু হয় অধীর-খাড়গে দ্বৈরথ।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।