পটনা: লোকসভা নির্বাচনের আড়াই মাস আগে আচমকা শিবির বদলে ফেলেন নীতিশ কুমার। I.N.D.I.A শিবিরের হাত ছেড়ে পুরনো শরিক, BJP নেতৃত্বাধীন NDA-এর হাত ধরেন তিনি। BJP-র হাত ধরে নতুন করে সরকার গড়েন রাজ্যে। বার বার শিবির বদলাতে অভ্যস্ত নীতীশের এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক মহল যদিও অবাক হয়নি। কিন্তু দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেও নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ ফের নীতীশের হাত ধরলেন কেন, ওঠে প্রশ্ন। চতুর্থ সর্বোচ্চ লোকসভা আসনের অধিকারী বিহারে নীতীশ এবং তাঁর সংযুক্ত জনতা দলের (JD-U) সাহায্য ছাড়া পরীক্ষায় উতরনো সম্ভব নয় আঁচ করেই মোদি-শাহ সিদ্ধান্ত বদলেছেন বলে যদিও যুক্তি দেন কেউ কেউ। কিন্তু নীতীশের হাত ধরেই BJP বিহারে কতটা সফল হতে পারবে, সেই নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। (Bihar Lok Sabha Elections 2024)


উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হওয়া মাত্রই নতুন করে BJP-র হাত ধরেন নীতীশ। পড়শি রাজ্যে নির্মিত রামমন্দিরের জিগির তুলে বিহারবাসীর মনজয় কতদূর সম্ভব হবে, সেই নিয়ে যদিও প্রশ্ন রয়েছে BJP-র অন্দরেই। কারণ রামমন্দির উদ্বোধনের মাসেই বিহারে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা চালায় BJP, তাতে দেখা যায় রামমন্দির আবেগ বিহারে গেরুয়া শিবিরের পক্ষে নাও কাজ করতে পারে। তাই নীতীশকে পাশে পেলেও, লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মোকাবিলা করতে হলে BJP-কে সেখানে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। (Lok Sabha Elections 2024)


এর আগে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিহারের ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৯টিতেই যদিও জয়লাভ করে NDA. BJP সেবার বিজয়ী হয় ১৭টি আসনে, JD (U) ১৬টি আসনে, LJP ছয়টি আসনে। সব মিলিয়ে ৫৩ শতাংশ ভোট পায় NDA. কিন্তু গত পাঁচ বছরে গঙ্গার বুক দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। হিন্দি বলয়ের অন্তর্গত বিহারে মোদির সমর্থকের অভাব নেই যদিও। কিন্তু গত কয়েক বছরে নীতীশের ভাবমূর্তি বেশ ক্ষুণ্ণ হয়েছে সেখানে। নীতীশের মিটিং মিছিলে লোক না হওয়ার কারণও তাঁর এই ঘন ঘন ডিগবাজি খাওয়ার অভ্যাস বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।


আরও পড়ুন: World Air Quality Report 2023: বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ঠিক পরেই স্থান, পৃথিবীর তৃতীয় সবচেয়ে দূষিত দেশ ভারত


এ নিয়ে BJP-কে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ভোটকুশলী তথা ‘জনসূর্য’ দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর। তাঁর দাবি, বিজেপি-র বলে বলীয়ান হয়ে হয়ত কিছু আসনে জয়ী হবে নীতীশের দল। রাজনৈতিক কেরিয়ার যে শেষ হওয়ার মুখে, তা বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন  নীতীশও। সাহস থাকলে BJP নীতীশকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনে নামুক। শুধু তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনে বিহারে যতটুকু সম্ভাবনা ছিল BJP-র, ফের নীতীশের হাত ধরার পর বিহারে গেরুয়া শিবিরের ক্ষতিই হবে, লাভ নয়।


পাশাপাশি, রামবিলাস পাসোয়ান চলে গেলেও, তাঁর ছেলে চিরাগ পাসোয়ানকে নিজেদের ছত্রছায়ায় টেনে নিয়েছে BJP. কিন্তু দলির ভোটের উপর রামবিলাসের যে আধিপত্য ছিল, চিরাগ তার ধারেকাছেও নেই। বরং বিহারে তুলনামূলক ভাবে খুঁটি শক্ত হচ্ছে CPM-ML, CPM, CPI-এর। RJD এবং কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলস্তরের মানুষজনকে ‘মহাজোটে’র প্রতি সহমর্মী করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। তাদের ১০ শতাংশ ভোটও যদি ‘মহাজোটটে’ চালান হয়ে যায়, তাহলেই BJP এবং নীতীশের থেকে দৌড়ে এগিয়ে যাবে RJD-কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘মহাজোট’।


তবে লোকসভা নির্বাচনে বিহারে BJP এবং JD(U)-কে যদি একাই কেউ মাত দিতে পারেন, তা আর কেউ নন, লালুপুত্র তেজস্বী যাদব বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তেজস্বীর উপর ভর করেই বিহারে একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছিল RJD. সেবার কর্মসংস্থানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তেজস্বী, উপমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর, তা অনেকাংশে পূরণও করেন তিনি। তেজস্বীর উদ্যোগে মাত্র ১৭ মাসে বিহারে ৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান উঠে আসে। তেজস্বীর এই ভাবমূর্তি তরুণ সমাজের কাছে তাঁকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে যেমন, তেমনই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সাধারণ মানুষজনও তেজস্বীর সমর্থনে এগিয়ে আসছেন। তাই নীতীশকে পাশে নিয়ে এবছর বিহারে BJP-র লড়াই কঠিনতর হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।