নয়াদিল্লি: আনুষ্ঠানিক ভাবে লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে গেল। শনিবার নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশ করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ১৪০ কোটির দেশে, ৫৪৩টি আসনে নির্বাচন করানো যে সহজ কাজ নয়, সেকথা স্বীকার করে নিল কমিশন। তাই অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো চার প্রতিবন্ধকতাকে চিহ্নিত করেছে কমিশন। এই চার প্রতিবন্ধকতাকে 4Ms বলে উল্লেখ করেছে কমিশন, Muscle, Money, Misinformation, MCC Violation (পেশিশক্তি, অর্থশক্তি, ভুয়ো তথ্যের প্রচার এবং নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন)। (Lok Sabha Elections 2024)


শনিবার দিল্লির বিজ্ঞানভবনে লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এই 4Ms তত্ত্ব তুলে ধরেন সকলের সামনে। পাশাপাশি জানান, নির্বাচনে হিংসা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। দেশের কোনও প্রান্তে হিংসার খবর মিললে, কমিশন কঠোর পদক্ষেপ করবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। (4M Challenges of Election Commission)




ছবি: নির্বাচন কমিশন।



  • পেশিশক্তির মোকাবিলা করতে যথেষ্ট সংখ্যায় CAPF মোতায়েন করবে কমিশন।

  • ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হবে জেলায় জেলায়। স্পর্শকাতর ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি ডিজিটাল সম্প্রচার হবে।

  • গুরুত্ব বুঝে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে হবে।

  • অস্ত্রশস্ত্র সমর্পণ করাতে হবে।

  • অপরাধমূলক কাজকর্মের রেকর্ড রয়েছে যাঁদের, তাঁদের উপর বাড়ানো হবে নজরদারি।

  • দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চেকপোস্ট বসানো হবে।

  • সীমানা এলাকাগুলিতে ড্রোনের মাধ্যমে চলবে নজরদারি।




ছবি: নির্বাচন কমিশন।


আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2024 Date : কেন বেশি দফায় ভোট ? কী বলছে কমিশন


জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটদাতাদের বিশ্বাস অর্জন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে হিংসা তাই কোনও ভাবে কাম্য নয়। ছাপ্পাভোট, ভুয়ো ভোটারের খোঁজ মিললে, কড়া পদক্ষেপ করা হবে। ২০২২-'২৩ সালে ১১ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সময় নগদ ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়, যা আগের তুলনায় ৮৩৫ শতাংশ বেশি। নির্বাচনে কাউকে অর্থের অপব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে জানান রাজীব কুমার। 



  • ২০১৭-’১৮ বর্ষের তুলনায় ২০২২-’২৩ বর্ষে ১১ রাজ্যের নির্বাচনে নগদে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়, যা আগের তুলনায় ৮৩৫ শতাংশ বেশি।

  • এর মধ্যে রাজস্থান থেকে উদ্ধার হয় ৭০৪ কোটি টাকা। তেলঙ্গানা থেকে ৭৭৮ কোটি, গুজরাত থেকে ৮০২ কোটি, ত্রিপুরা থেকে ৪৫ কোটি, ছত্তীসগঢ় থেকে ৭৮ কোটি টাকা উদ্ধার হয়।

  •  মেঘালয় থেকে ৭৪ কোটি, কর্নাটক থেকে ৩৮৪ কোটি, মিজোরাম থেকে ১২৩ কোটি, হিমাচলপ্রদেশ থেকে ৫৭ কোটি, মধ্যপ্রদেশ থেকে ৩৩২ কোটি, নাগাল্যান্ড থেকে ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়।








ছবি: নির্বাচন কমিশন।


নির্বাচন একসময় কাগজনির্ভর ছিল। কালেক্রমে আমদানি ঘটেছে ভোটযন্ত্র EVM-এর। তার উপর সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত নির্বাচনী উত্তাপকে আরও বাড়িতে তোলে। নির্বাচনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন হাজারো তথ্য উঠে আসে, যা একেবারেই সারবত্তাহীন এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে মিথ্যে দাবি। নির্বাচনের সময় এই ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ নতুন নয়। তাই ভুয়ো খবর রোখার উপর জোর দিয়েছে কমিশন। 


কমিশন জানিয়েছে-



  • সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু পোস্ট করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

  • যে বা যাঁরা ভুয়ো তথ্য এবং ভুয়ো খবর ছড়াবেন, আইন অনুযায়ী কড়া পদক্ষেপ করা হবে তাঁদের বিরুদ্ধে।

  • তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৭৯ (৩) (বি) ধারায় রাজ্যের নোডাল অফিসারদের বেআইনি পোস্ট সরানোর ক্ষমতা রয়েছে।

  • ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে SOP আনা হবে।

  • ভুয়ো তথ্য যাচাই করার ক্ষেত্রে কমিশনে ওয়েবসাইট eci.gov.in-এ গিয়ে অভিযোগ জানানো যাবে।




ছবি: নির্বাচন কমিশন।


নির্বাচনী ভাষণ এবং বক্তৃতার সময় প্রায়শই শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করেন প্রার্থী, প্রচারকরা। নির্বাচন যত এগিয়ে আসে, কুকথার ফুলঝুরি ছোটে মুখে। উস্কানিমূলক মন্তব্যও করা হয় প্রকাশ্য সভায়, যা নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধির পরিপন্থী। প্রার্থীদের সংযত থাকতে আর্জি জানিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি আচরণবিধি লঙ্ঘনের মোকাবিলা করতে প্রযুক্তির সাহায্য় নিচ্ছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনে ২৭টি অ্যাপ এবং ওয়েব পোর্টাল সক্রিয় রয়েছে। cVigil-এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারেন নাগরিকরা। টাকা দিয়ে ভোট কেনা থেকে নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন, ছবি তুলেও পাঠাতে পারেন ভোটাররা। সেক্ষেত্রে অভিযোগকারীর মোবাইল ট্র্যাক করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে কমিশন। 


কমিশন জানিয়েছে-



  • বিভাজনমূলক রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হবে।

  • ইস্যু ধরে চলুক প্রচার।

  • কোনও ঘৃণা-ভাষণ নয়।

  • জাত এবং ধর্মীয় আবেদন নয়।

  • ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ চলবে না।

  • আগে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রচারের কৌশল ঠিক করতে হবে।

  • ভিত্তিহীন দাবি, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো যাবে না।

  • বিজ্ঞাপনকে খবর হিসেবে তুলে ধরা যাবে না।

  • প্রতিদ্বন্দ্বীদের কালিমালিপ্ত করতে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • তারকা প্রচারকদের শালীনতা মেনে চলতে হবে।


কমিশন জানিয়েছে, অবাধ, শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠ নির্বাচন করাতে বদ্ধপরিকর তারা। এ ব্যাপারে দেশের সাধারণ নাগরিকদের যোগদান কাম্য।