কলকাতা: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের (WB Lok Sabha Elections 2024) আগে বাংলার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন সিরাজউদ্দৌলার (Siraj-ud-Daulah)।  ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের সময় সিরাজউদ্দৌলার উল্লেখ কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারের সদস্যা তথা বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়ের (Amrita Roy)।  রাজ পরিবার ইংরেজদের সঙ্গে হাত না মেলালে সনাতন ধর্ম ধ্বংস হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্যে নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। 


সন্দেশখালির রেখা পাত্রের পর কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতাকে ফোন করেন নরেন্দ্র মোদি। দুর্নীতি মামলায় তদন্তকারী সংস্থাগুলির হাতে বাজেয়াপ্ত টাকা বাংলার মানুষকে ফেরানোর উপায় খুঁজছেন বলে অমৃতাকে জানান তিনি। সেই বার্তা বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বলেন। সেই নিয়েই কথায় কথায় সিরাজের প্রসঙ্গ পেড়ে ফেলেন অমৃতা। 


মোদির সঙ্গে কথোপকথন চলাকালীন অমৃতা বলেন, "আমরা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পরিবারের সদস্য। এটারও বিরোধিতা করছে এখন। বলছে, উনি ইংরেজদের সঙ্গে ছিলেন। আমাদের গদ্দার মনে করা হচ্ছে। কেন উনি (হাত মিলিয়েছিলেন) করেছিলেন, সেটা বলছে না। এত জমি দান করেছিলেন, মানুষের মঙ্গলের জন্য় কী কাজ করেছিলেন, সেটা বলছে না ওরা।"


আরও পড়ুন: AFSPA In JK: ভূস্বর্গ থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে কী বললেন অমিত শাহ? কটাক্ষ ওমর আবদুল্লার


অতীত প্রসঙ্গে অমৃতা আরও বলেন, "আমি বলছি, ওই সময় (হাত না মেনালে) না করলে সনাতন ধর্ম শেষ হয়ে যেত। হ্যাঁ কি না! তখন যিনি নবাব ছিলেন, সিরাজউদ্দৌলা, তিনি অত্যাচারী, ভ্রষ্টাচারী ছিলেন। আর উনি (কৃষ্ণচন্দ্র) একা তো (হাত মেলাননি) করেননি? অনেকে এক হয়েছিলেন। জগৎ শেঠও ছিলেন। সবার পরিশ্রমেই সাফল্য মেলে। নইলে আজ হিন্দু থাকতে পারতাম না আমরা। ভাষা অন্য হতো, পোশাক আলাদা হতো। অন্যের অধীনে থাকতে হতো আমাদের।"


অমৃতার এই অনুযোগ শুনে মোদি বলেন, "ছোটবেলায় আমরাও কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সমাজ সংস্কার নীতি, বাংলার উন্নয়নের মডেলের কথা পড়েছি। যাঁরা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেন, তাঁরা এসব ভুলভাল অভিযোগ করবেন। ৩০০, ২০০ বছর আগের ঘটনা খুঁজে বের করবেন, বদনাম করতে চাইবেন ওঁরা। এখনকার পাপ লুকোতে এসব খুঁজে বেড়ায়। অথচ ভগবান রামের কথা উঠলে তখন প্রমাণ চায়। অথচ কৃষ্ণচন্দ্রের সময়কার কথা বের করে আনে। এদের দ্বিচারিতা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না।"


অমৃতা এবং মোদির এই কথোপকথনই এই মুহূর্তে বাংলার রাজনীতিতে চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু'জনের এই কথোপকথনকে হাতিয়ার করে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। তাদের মতে, রাজা যে বাংলা তথা ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তা রাজ পরিবারের বধূ নিজেই গর্বের সঙ্গে স্বীকার করে নিলেন। 


সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল লেখে, 'যে রাজ পরিবারের বধূ তিনি, সেই রাজ পরিবারের পূর্বতন রাজা যে বাংলা তথা ভারতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, গর্বের সঙ্গে সেকথা স্বীকার করে নিলেন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে গর্বের সঙ্গে সেই বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস ব্যক্ত করছেন তিনি। স্বীকার করেছেন, তাঁর পরিবারের পূর্বপুরুষ ইংরেজ শাসকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না হলে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাস্ত করা যেত না। বিশ্বাসঘাতকতা যাঁদের পারিবারিক ঐতিহ্য, সেই অমৃতা রায়কে কৃষ্ণনগরের প্রার্থী করেছে বিজেপি, যাতে কৃষ্ণনগরে আবারও অত্যাচারী রাজতন্ত্র কায়েম করা যায়। তার জন্যই কি এই মনোনয়ন? নাকি বাংলার মাটি আবারও বিদেশি শক্তির হাতে বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি'?


পলাশির যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। এর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলার বুকে নেমে এসেছিল পরাধীনতার অন্ধকার। সেই সময় সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন মীরজাফর, ঘসেটি বেগম, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদরা। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও গুরুতর অভিযোগ ছিল। ১৭৫৭ সালের সেই বাংলা আর নেই, নেই  রাজতন্ত্রও। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশ। সেই আবহেই বাংলার রাজনীতিতে আবারও প্রত্যাবর্তন ঘটল সিরাজউদ্দৌলার। পাশাপাশি মোদি যেভাবে রামের প্রসঙ্গ টেনেছেন, তাতে বিজেপি-র মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগও উঠছে আরও একবার।