উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, অর্ণব মুখোপাধ্য়ায় ও শুভেন্দু ভট্টাচার্য, কলকাতা : নৌশাদ বলেছিলেন, '২০২৪-এ ভাইপোকে পরাজিত করে কালীঘাটে পাঠাব। কাশফুলের বালিশ তার পিসি তৈরি করবে। বিক্রি করার জায়গা করে দেব।' তর্জন-গর্জন করেও শেষমুহূর্তে রহস্য়জনকভাবে ভোটের লড়াই থেকে সরে গেলেন নৌশাদ সিদ্দিকি। এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, 'আমরা ডায়মন্ড হারবারেও এমন প্রার্থী দেব যে, ওই সিট বিজেপি জিতবে'। তারপর অভিষেকের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করল এমন একজনকে যিনি এর আগে ২ বার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা ভোটে লড়েছিলেন। দু বারই পরাজিত হয়েছেন। কোনওবার রানার্সও হননি। প্রতিবারই তৃতীয় স্থানে ছিলেন! কেন এমন প্রার্থীকে বেছে নিল বিজেপি ? তাই নিয়েই অন্য দল গুলির নিশানায় গেরুয়া শিবির।
দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা-বৈঠক-শলা পরামর্শের পর লোকসভা ভোটের প্রথম দফার ৩দিন আগে ডায়মন্ড হারবারে ববির নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করল বিজেপি। যা দেখে, একযোগে সেটিং কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস। 'বিজেপি এমন করছিল যেন মোদি-অমিত শাহ প্রার্থী পাঠাবে। প্রার্থী দেখেই স্পষ্ট সেটিং কাকে বলে। এই জন্য় কেজরিওয়াল গ্রেফতার হয়, ভাইপো হয় না। তুমি আমায় সিট দাও, আমি তোমায় গ্রেফতার করব না' বললেন সিপিএম প্রার্থী প্রতীক উর রহমান। মহম্মদ সেলিম বলছেন, 'অভিষেক হচ্ছে ভবিষ্যতের শরদ পওয়ারের যেমন অজিত পওয়ার ভাইপো, ওরম মমতার ভাইপো। ভবিষ্যতের একনাথ শিণ্ডে। সে এখন বিজেপির কাছে জমা আছে। ওইজন্য বিজেপি চাইছে তার বিরুদ্ধে যেন কেউ না লড়ে।' তাহলে কি নৌশাদ সিদ্দিকির রহস্য়জনক প্রস্থানের পর এবার 'কমজোরি' প্রার্থী দাঁড় করিয়ে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে 'ওয়াকওভার' দিল বিজেপিও? প্রশ্নটা উঠছেই।
কে এই বিজেপির ববি ?
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সোমেন মিত্র ও সিপিএমের শমীক লাহিড়ির বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন এই অভিজিৎ দাস। মাত্র সাড়ে সাঁইত্রিশ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ফের তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। এবার ভোট আগের তুলনায় বেশি পেলেও, ফের তৃতীয় হন অভিজিৎ। ২০১৯ সালে আর তাঁকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। এবার ফের তাঁকে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করাল বিজেপি।
কাদের কাদের নাম ঘুরছিল বিজেপির অন্দরে ?
যে ডায়মন্ড হারবার নিয়ে এত তর্জন-গর্জন করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীও , যেখানে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে কৌস্তভ বাগচী, শঙ্কুদেব পণ্ডা, প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল, রুদ্রনীল ঘোষের মতো নেতা-নেত্রীদের নাম ঘোরাফেরা করছিল, সেখানে থার্ড বয়কে কেন দাঁড় করাল বিজেপি ? এমনকী দিলীপ ঘোষ পর্যন্ত বললেন, 'একমাস আগেই দিতে পারত। অভিজিৎ দাস যে হয়েছে, আগের নির্বাচনে সেই প্রার্থী ছিল'। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলছেন, 'তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। পুরনো লোকের ওপর আমরা ভরসা করছি।' এখন সব জল্পনার অবসান হবে ৪ জুনই।
আরও পড়ুন, লোকসভা নির্বাচনে রেকর্ড আসনে জয় বিজেপির? কত আসন পেতে পারে কংগ্রেস? কী বলছে সমীক্ষা?