সুনীত হালদার, সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমনাথ মিত্র, হুগলি : হুগলির শ্রীরামপুরে তিন বারের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই এবার বিজেপির কবীরশঙ্কর বসুর এবং সিপিএমের দীপ্সিতা ধরের সঙ্গে। কয়েকদিন আগেই প্রচারে গিয়ে তৃণমূল প্রার্থীকে মিস্টার ইন্ডিয়া বলে কটাক্ষ করেন দিপ্সিতা। বুধবার ডোমজুড় বিধানসভার লিলুয়ায় প্রচার করতে গিয়ে বাম প্রার্থীর খোঁচার উত্তর দিলেন রসিকতা করেই। দীপ্সিতার 'মিস্টার ইন্ডিয়া' কটাক্ষের জবাব কল্যাণ দিলেন মিস ইউনিভার্স বলে ! সব মিলিয়ে বাগযুদ্ধে জমে উঠেছে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রচার।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৭০৭টি ভোট পেয়ে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী দেবজিৎ সরকার পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৭১টি ভোট। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনেও ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩৩টি ভোট পেয়ে শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বছর দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিআইএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায়। এবার তাঁর বিরুদ্ধে সিপিএমের দীপ্সিতা ও বিজেপির কবীরশঙ্কর। শ্রীরামপুরকে অনেকে কল্যাণগড়ই বলে থাকেন। সেখানে দাঁড়িয়েই কল্যাণের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দীপ্সিতা।
প্রচারে বেরিয়ে সিপিএমের তরুণ তুর্কী দীপ্সিতা ধর খোঁচা দিয়ে বলেছেন, 'এমন একজন MP রেখে লাভ কী, যাঁকে চোখে দেখা যায় না। ওই একটা সিনেমা ছিল না, মিস্টার ইন্ডিয়া। তাতে হাতে ঘড়ি পরলে অনিল কপূর অদৃশ্য হয়ে যেত। আমাদের এমপির অবস্থাও তাই। '
ভোটের ময়দানে অপেক্ষাকৃত অনেকটাই নবীন সিপিএম প্রার্থীর মিস্টার ইন্ডিয়া-কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন 'মিস ইউনিভার্স'শব্দবন্ধে। কল্যাণ বলেন, 'মিস ইউনিভার্স দেশ-বিদেশ সমস্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন, মিস ইউনিভার্স। তো মিস ইউনিভার্স ঘুরে বেড়িয়ে শ্রীরামপুরে এসে মিস্টার ইন্ডিয়াকে দেখতে পেয়েছেন উনি। ওঁর সারা জীবনে ঘাসের ওপর শিশিরবিন্দু দেখার সৌভাগ্য এখানে হয়েছে।'
প্রচারে বেরিয়ে কিছুদিন আগেই সিপিএম প্রার্থী বলেন, '১৫ বছরে এক দিনের জন্যও আমি কল্যাণবাবুকে আমার বাড়ির সামনে ঘুরতে দেখিনি। ভোটের আগে হাতজোড় করে ঘোরা ছাড়া আর কখনও আমার এলাকার কোনও সমস্যায় ওঁকে পাশে পাইনি। এমন একজন MP রেখে লাভ কী, যাঁকে চোখে দেখা যায় না ! '
বুধবার ডোমজুড় বিধানসভার লিলুয়ায় প্রচার করেন কল্যাণ বন্দ্যোপ্যাধ্যায়। সেখানেই, রবীন্দ্রনাথের কবিতার উল্লেখ করে নিজেকে শিশিরবিন্দুর সঙ্গে তুলনা করেন সাংসদ। তিনি বলেন, 'কোনও একজন নাকি আমাকে মিস্টার ইন্ডিয়া বলেছেন। মিস ইউনিভার্স দেশ-বিদেশ সমস্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন, মিস ইউনিভার্স।'
দীপ্সিতা ধর তার উত্তরে বলেন, 'আমি যতবার বিদেশে গেছি আমি তো চুরির টাকায় যাই়নি, ডাকাতির টাকায় যাই়নি, এমনকী সরকারি টাকাতেও যাইনি। আমার পড়াশোনার কাজে আমার পেপার প্রেজেন্ট করতে বিদেশে গেছি। কল্যাণ ব্যানার্জিরা বিজেপি-তৃণমূল-এরা চায় না, সাধারণ ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করে এই দেশের নাম, এই রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করুক। ওঁরা চান, ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা না করে ওঁর মতো, মিথ্যেবাদী, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ডাকাত, চোর তৈরি হোক। ওদের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই'
একজন প্রবীণ রাজনীতিক। বারবার শ্রীরামপুরের মাটি তাঁকে জয়ের হাসি উপহার দিয়েছে। অপরজন অনেকটাই তরুণ ভোট রাজনীতিতে। ২০২১ সালে বালির সিপিএম প্রার্থী ছিলেন দীপ্সিতা । তবে জয় পাননি। এখন দেখার ৪ জুন কে জয়ের হাসি হাসে।