দীপক ঘোষ, রাজীব চৌধুরী, আশাবুল হোসেন, নয়া দিল্লি: শনিবার  বিকেলে বৈঠকে বসবে কংগ্রেসের সংসদীয় দল। কংগ্রেসের নব নির্বাচিত প্রার্থীরা সংসদীয় দলের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। ঠিক করে নেবেন লোকসভায় দলের নেতা কে হবেন।  সূত্রের খবর, ইতিমধ্য়েই দলরে অন্দরে রাহুল গাঁধীকে লোকসভার নেতা করার দাবি উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে কি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে অন্য সমীকরণ। এই সম্ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। 


লোকসভা ভোটের ফল বেরনোর পর দিনই ইন্ডিয়া ব্লকের বৈঠকে তৃণমূলের হয়ে হাজির ছিলেন অভিষেক। তারপর জোট ঠিক করে তারা বিরোধী আসনেই বসবে। এরপরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে কিছু তৎপরতা চোখে পড়ে। তিনি প্রথমেই যান সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের দিল্লির বাড়িতে। সেখানে দীর্ঘ বৈঠক হয় দুজনের। তারপর দিল্লির বাসভবনে আম আদমি পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। রাতে দিল্লি থেকে মুম্বই উড়ে গিয়ে শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা সারেন তিনি। এক দিনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের এই গতিবিধি দেখে, রাজ্য শুধু নয়, জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন।


রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি 'INDIA' জোটের মধ্য়েই 'কংগ্রেস-বিরোধী জোট' তৈরির চেষ্টা করছেন অভিষেক? কংগ্রেসকে চাপে রাখতেই কি অভিষেকের দিল্লি-মুম্বই দৌত্য়? জাতীয় রাজনীতিতে কি তৃণমূল নিজেকে 'INDIA' জোটের কাণ্ডারী হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে? প্রদেশ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, 'যেতেই পারে কেউ কোথাও, এদিক-ওদিক যেতে পারে, ঘুরতে পারে, বেড়াতে পারে, সর্বভারতীয়স্তরে যারা নেতৃত্ব আছে, তাদের স্ক্য়ানারে সবই ধরা পড়বে। কিন্তু যে যাই করুক, কংগ্রেস দল, এ নিয়ে তার মাথাব্য়াথাও নেই' 


এবারের লোকসভা নির্বাচনে 'INDIA' জোটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন পেয়েছে কংগ্রেস। ইতিমধ্য়েই মহারাষ্ট্রের সাংলির সাংসদ কংগ্রেসকে সমর্থনপত্র দিয়েছেন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে তাদের শক্তি বেড়ে ১০০ হয়েছে। বিহারের নব নির্বাচিত সাংসদ পাপপু যাদবেরও কংগ্রেসকে সমর্থনেরই সম্ভাবনা জোরাল। সেক্ষত্রে তাদের শক্তি আরও বেড়ে ১০১ হতে পারে। এরপর ইন্ডিয়া জোটের দ্বিতীয় শরিক অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল। তাদের সাংসদ সংখ্য়া ২৯। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডিএমকে। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাদের মিলিত শক্তি তৃণমূলের ২৯ প্লাস, অখিলেশের ৩৭ প্লাস, উদ্ধব ঠাকরের ৯ এবং কেজরিওয়ালের ৩ সাংসদ সহ মোট ৭৮। উল্টোদিকে কংগ্রেসের ৯৯।


আবার অন্যদিকে অখিলেশের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের জোট রয়েছে। মহারাষ্ট্রে উদ্ধবের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট রয়েছে। লোকসভা ভোটে কেজরিওয়াল এবং কংগ্রেস পাঞ্জাব বাদে সর্বত্র জোট বেধে লড়েছে। একমাত্র তৃণমূল এককভাবে লড়াই করেছে। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন হল, তৃণমূল নেতৃত্ব যদি, কংগ্রেস বিরোধী কোনও ম়ঞ্চ তৈরির চেষ্টা করেও, তাহলে কি ফলপ্রসূ হবে?


বুধবার ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে প্রিয়াঙ্কা গাঁধীর পাশেই বসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এমনকি এই বৈঠকের পর মল্লিকার্জুন খাড়গে যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন,  তখন তাঁর ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সনিয়া গাঁধী, পিছনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বিরোধী জোটের এহেন ঐক্যের ছবি সামনে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই,
দিল্লি এবং মুম্বইয়ের মাটিতে সমান্তরাল সমীকরণের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই। আগামী দিনে তৃণমূলের এই আঞ্চলিক ঐক্য় গড়ার চেষ্টা কোন পথে এগোয়, সেটাই দেখার।


আরও পড়ুন : 


আমন্ত্রণ তালিকায় চমক ! মোদির শপথগ্রহণে নেমন্তন্ন পেয়েছেন বহু সাফাইকর্মী থেকে নির্মাণকর্মী 

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে