কলকাতা: সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন করতে তিনি টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগে সাংসদ পদ চলে যাওয়ার পাশাপাশি, তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তদন্তও। তবে দমবার পাত্রী যে তিনি নিন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মহুয়া মৈত্র। তৃণমূলের তরফেও আবার কৃষ্ণনগরেই প্রার্থী করা হয়েছে তাঁকে। চতুর্থ দফায় আগামী ১৩ মে ভোটগ্রহণ সেখানে। আপাতত নির্বাচনী প্রচারেই ব্যস্ত মহুয়া, তার মধ্যেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মহুয়া, তাতে নিজের সম্পত্তির খতিয়ান তুলে ধরেছেন। (Mahua Moitra Assets)
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামায় মহুয়া জানিয়েছেন, ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে তাঁর আয় ছিল ১২ লক্ষ ৭ হাজার ৫৪১ টাকা, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ১১ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৭৮ টাকা, ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে ৯ লক্ষ ২৯ হাজার ৬৪০ টাকা, ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষে ৯ লক্ষ ২৫ হাজার ৭০ টাকা এবং ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষে আয় ছিল ৫ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা। সাংসদ হিসেবে পাওয়া বেতন, বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সুদ এবং পেশাগত পারিশ্রমিককে নিজের আয়ের উৎস বলে জানিয়েছেন মহুয়া। (Mahua Moitra Affidavit)
নিজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অপরাধ মামলার খতিয়ানও তুলে ধরেছেন মহুয়া। তিনি জানিয়েছেন, দিল্লিতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, যাতে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ঘুষের ধারা যুক্ত রয়েছে।
সম্পত্তির খতিয়ান দিতে গিয়ে মহুয়া জানিয়েছেন, ১৮ এপ্রিলের নিরিখে তাঁর হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা রয়েছে। কলকাতার ভবানীপুরে ICICI ব্যাঙ্কের শাখায় জমা রয়েছে ১৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। ওই ব্যাঙ্কেই আরও দু’টি অ্যাকাউন্টে ১৩৯ এবং ২৯ হাজার ৯৯০ টাকা করে পড়ে রয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা হাইকোর্ট শাখার অ্যাকাউন্টে ৫২ হাজার ৭৪০ টাকা রয়েছে, দিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট শাখার অ্যাকাউন্টে ৩ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫১৯ টাকা রয়েছে মহুয়ার। নির্বাচনী খরচ-খরচার জন্য কৃষ্ণনগরের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় ৪ হাজার টাকা রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি লন্ডনের ন্যাটওয়েস্ট ফ্লি স্ট্রিটের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৮৫০ টাকা।
কোথায়, কত বিনিয়োগ করেছেন, তা-ও জানিয়েছেন মহুয়া। কমিশনকে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতার গড়িয়াহাটের ICICI ব্যাঙ্কে ৩৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৯২৬ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে মহুয়ার। সেখানে ১ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪৯২ টাকার আরও একটি ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। SBI-এর নিফটি ইনডেক্স ফান্ডে ৭ লক্ষ ৩১ হাজার ৬০৮ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে মহুয়ার। SBI মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন ৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৫ টাকা। PPF অ্যাকাউন্টে মহুয়ার ৩ লক্ষ ৭২ হাজার ১৮৪ টাকা রয়েছে। কোনও জমি-বাড়ি নেই মহুয়ার নামে।
২০১৬ সালে Mahindra Scorpio M-Hawk গাড়ি কেনেন মহুয়া, বর্তমানে তার বাজারমূল্য ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা। সোনা-গহনার হিসেব দিতে গিয়ে মহুয়া জানিয়েছেন, ৩.২ ক্যারাটের হিরে বসানো একটি আংটি রয়েছে তাঁর, যার দাম ৮০ লক্ষ টাকা বর্তমানে। ৯ লক্ষ ৪১ কোটি টাকার সোনা রয়েছে, রুপোর ফুলদানি রয়েছে ২ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের। রুপোর একটি ডিনার সেট রয়েছে তাঁর কাছে, যার দাম ২ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। একটি রুপোর উরুলি রয়েছে ১ লক্ষ ১৭ টাকা মূল্যের। মহুয়ার কাছে থাকা রুপোর একটি টি-সেটের দাম ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। পাশাপাশি, ২ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের আরও রুপোর জিনিসপত্র রয়েছে। সবমিলিয়ে গহনা রয়েছে ৮ লক্ষ টাকার। ৩০ লক্ষ টাকার শিল্পকর্ম রয়েছে মহুয়ার সংগ্রহে। সঞ্চয়, বিনিয়োগ, নগদ, সোনা-রুপো এবং মূল্যবান শিল্পকর্ম, সবমিলিয়ে মহুয়ার কাছে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৬৬ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।
একনজরে মহুয়ার সম্পত্তি-
- স্থাবর সম্পত্তি নেই
- অস্থাবর সম্পত্তি ৩ কোটি ৫০ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৬৬ টাকার
- মামলা রয়েছে মহুয়ার নামে
কৃষ্ণনগরে এবার মহুয়ার বিরুদ্ধে রাজ পরিবারের সদস্যা অমৃতা রায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাঁদের মধ্যে জোর লড়াই হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সমীক্ষায়। শেষ পর্যন্ত কার মুখে হাসি ফুটবে, তা জানা যাবে ফলঘোষণার পরই।