নয়াদিল্লি: দিল্লির রাইসিনা হিলস তখন জমকালো আলোয় ভূষিত। তেরঙ্গা ছটা, সোনালি-রূপালি আলো, লাল গালিচা, দৃশ্যতই ‘নৈস্বর্গিক বিস্ময়’। গোধূলি পেরিয়ে ঘোর সন্ধ্যা একেবারে নিশ্চুপে কালো ঘন অন্ধকার রাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানও তখন প্রায় শেষলগ্নে। নরেন্দ্র মোদির শপথ শুরুতেই হয়ে গিয়েছে। তারপর এক এক করে রাজনাথ সিংহ, অমিত শাহ, নিতিন গডকড়ী, এস জয়শঙ্করের মতো হেভিওয়েট মন্ত্রীদের শপথগ্রহণও হয়ে গিয়েছে। সবার শপথ বাক্যেই একই কথা। কেবল মানুষগুলো বদলে যাচ্ছেন একের পর এক। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা সময় পর  নীরস হয়ে যায় এই দীর্ঘ অনুষ্ঠান। তবে ৫৭ জনের যে মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার শপথ নিল তার ঠিক শেষের আগের মুহূর্তেও যে এমন চমক থাকতে পারে, তা ছিল অনেকেরই কল্পনাতীত। শেষের দিক থেকে তিন নম্বরে শপথ নিতে আসা প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গীর নাম ঘোষণা হতেই করতালিতে ফেটে পড়ল গোটা রাইসিনা হিলস। হাততালি দিয়ে ওড়িশার বালাসোর থেকে নবনির্বাচিত সাংসদকে হাততালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেল সদ্য শপথ নেওয়া মন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকেও।


সাদা পাঞ্জাবি। সাদা পাজামা। চোখে অতীব সাধারণ মানের একটা চশমা, পায়ে তেমনই সাধারণ একটি জুতো। মাথার অর্ধেকটা চুল নেই। আর যা রয়েছে তাও এলোমেলো। একগাল দাড়ি নিয়ে তিনি উপস্থিত রাইসিনা হিলসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। ফোন গিয়েছিল সকালেই। সেইমতো প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ‘ওড়িশার মোদি’ হিসেবে খ্যাত প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গী।





সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। এই নিয়ে পরপর ২ বার। গতবারের তুলনায় এবার তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে তিনশোর গণ্ডি ছাড়িয়েছে। দেশজোড়া এই সাফল্যের মধ্যেই সবথেকে বেশি চর্চায় ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির সাফল্য। গতবার যেখানে একটি মাত্র আসন ছিল বিজেপির, সেখানে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ৮টি লোকসভায় পদ্ম ফুটিয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবাংলায় ২ থেকে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮ করতে পেরেছে তারা।


এই সাফল্যের পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গীর ছবি। একেবারে সাধারণ জীবন। বিয়ে করেননি। পরিবার বলতে কেবল মা-ই রয়েছেন। বাড়িও নাম মাত্র।  মন্ত্রীর বাড়ি দেখলে চোখ কপালেও উঠতে পারে! লোকসভা ভোটের প্রচারে যেখানে লাখো লাখো টাকা উড়েছে সেখানে প্রচারের বেশিরভাগটাই সাইকেল-এ চেপেই ঘুরেছেন। কখনও ব্যবহার করেছেন টেম্পো, আবার কখনও সওয়ার হয়েছেন জিপেও। তবে এই সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর জয়।





দুই কোটিপতি প্রার্থীকে হারিয়ে প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কংগ্রেস প্রার্থী এন পটনায়েক সহ বিজু জনতা দলের রবীন্দ্র কুমার জেনা, ২ জনকেই পরাজিত করেছেন এই বিজেপি নেতা। ১২ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতে বালোসোরে গেরুয়া নিশান উড়িয়েছেন প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গী। এবার তাঁকেই মন্ত্রিসভায় এনে চমক দিল মোদি-শাহ জুটি।