কলকাতা: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তৃণমূল সাংসদের ট্যুইট, একঝাঁক বাঁদরের মধ্যে একা সিংহির মতো দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। মমতাদির দলের সদস্য হিসেবে এতটা গর্বিত আগে হইনি। ট্যুইটে লিখলেন মহুয়া মৈত্র।


অন্যদিকে, বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, বক্তৃতা বয়কট করে নেতাজিকেই অপমান করেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, অনুষ্ঠানে নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। কেউ জয় হিন্দ বলছিলেন, কেউ বন্দেমারতম, আবার জয় শ্রী রাম স্লোগানও দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সামনে এই স্লোগানে আপত্তির কী তা বোধগম্য নয়। বিজয়বর্গীয় বলেছেন, মমতার আগে থেকেই অ্যাজেন্ডা ছিল। তিনি মঞ্চের অপব্যবহার করে কিছু সংখ্যক মানুষকে খুশি করতে চেয়েছেন। ভারতে রাম-রাম বলে একে অপরকে অভিবাদন করা হয়। শ্রী রামের নাম নেওয়ায় কারুর আপত্তি করা উচিত নয়।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে। ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে তৃণমূল ও বিজেপির তরজা। এরইমধ্যে গতকাল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও ঘটল রাজনীতির অনুপ্রবেশ।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই। শুরুটা হয়েছিল ভালভাবেই। প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা একসঙ্গে ঘুরে দেখেন নেতাজি গ্যালারি। দেখেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু এরপর মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য পেশ করার জন্য মঞ্চে উঠতেই দর্শকাসন থেকে ভেসে আসে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। এই স্লোগান থামানোর অনুরোধ করেন আয়োজকরা। কিন্তু এই স্লোগানে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এভাবে অপমান করা যায় না। এটা রাজনৈতিক নয়, সরকারি অনুষ্ঠান। সরকারি অনুষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করা উচিত। এটা কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান নয়। কলকাতায় এই অনুষ্ঠান করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতি মন্ত্রককে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু প্রতিবাদ জানিয়ে আমি বক্তব্য রাখছি না।’ এরপর ‘জয় হিন্দ, জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে নিজের আসনে গিয়ে বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী।

এই ঘটনায় শুরু হয়ে যায় রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান তথা রাজ্যের বিজেপির সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য ট্যুইট করে বলেন, বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদ্যানপনের অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যকে অপমান করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা না দিয়ে ফের একই কাজ করলেন তিনি।
এদিনের ঘটনার পাল্টা আক্রমণ করে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন ট্যুইট করে বলেন,মর্যাদা কথার অর্থ কাউকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানানো। লুম্পেনদের মর্যাদার অর্থ শেখাতে পারবেন না।

এদিনের ঘটনার সমালোচনা করেছে কংগ্রেসও।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে শুধু ডেকে অপমান নয়, পরিকল্পিত ভাবে অপমানিত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানের মধ্যে জয় শ্রী রাম ধ্বনি তোলা ঠিক নয়।’’ তবে বিজেপি-র এই উত্থানের পিছনে যে মমতাই দায়ী, সেই অভিযোগও করেন অধীর।

এ নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষকেই আক্রমণ করেছে বামেরা।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘মমতার সঙ্গে আমাদের মতান্তর থাকতেই পারে। কিন্তু তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যখন সরকারি মঞ্চে বক্তৃতা দিতে উঠলেন তখন দৃষ্টিকটু ভাবে স্লোগান দেওয়া হল। সরকারি মঞ্চকে দলীয় কর্মসূচিতে রূপান্তরের ঘটনা নিন্দনীয়।
ঘটনার নিন্দা করে রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও মনে রাখতে হবে সরকারী অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে পরিণত করা ঠিক নয়।
যদিও শনিবার যাঁরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন, তাঁরা এতে অন্যায় কিছু দেখছেন না!
এমনকি অনুষ্ঠান শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় বেরিয়ে যাওয়ার সময়েও একই স্লোগান শোনা যায়।

তবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালই নয়। নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে এদিন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ওঠে নেতাজি ভবনেও। শনিবার দুপুরে দিকে নেতাজি ভবনে পৌঁছয় নরেন্দ্র মোদির কনভয়।
প্রধানমন্ত্রী ভিতরে গেলেও, বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিজেপি নেতারা। নেতাজি ভবন ঘুরে মোদি বাইরে বেরনোর পরই শোনা যায় জয় শ্রী রাম ধ্বনি।

এ নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক!

নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর চেয়ারম্যান সুগত বসু বলেন, আজ বোধহয় আমাদের ধ্বনি দেওয়া উচিত নেতাজি জিন্দাবাদ এবং জয়হিন্দ।

উপলক্ষ্য নেতাজির জন্মজয়ন্তী! আর সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বারবার তাল কাটে অনুষ্ঠানের!
এই বিতর্ক এদিনও অব্যাহত। এরই জের টেনে বিজেপিকে নিশানা করলেন মহুয়া মৈত্র।