কলকাতা: হিংসা, হানাহানি, গুলি, বোমা, মৃত্যু মিছিল......শেষ হল ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোট। বিরোধীরা অবশ্য দাবি করছে, এটা ভোট নয়, ভোটের নামে প্রহসন। ভোটের ফলে আর যাই হোক, মানুষের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না। উল্টোদিকে, তৃণমূলের দাবি, ২-১টি ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা লুকনোর চেষ্টা করছে বিরোধীরা। তবে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেই সম্ভাব্য ফলাফলের একটা আঁচ পাওয়ার চেষ্টা করেছে সমীক্ষক সংস্থা সি ভোটার।
ভোটের দিন ২০টি জেলা পরিষদের ১৩ হাজার ২৮৯ জন ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছেন সমীক্ষকরা। বিকেল ৪টে পর্যন্ত করা সমীক্ষায় যা উঠেছে এসেছে, তার ভিত্তিতেই সার্ভের ফলাফল তুলে ধরেছে তারা। এই এক্সিট পোলে মার্জিন অফ এরর প্লাস মাইনাস পাঁচ শতাংশ। ওপিনিয়ন পোল হোক কিংবা এক্সিট পোল...কোনওটাই শেষ কথা নয়! গণতন্ত্রে শেষ কথা হল মানুষ ব্যালট বক্সে কিংবা ভোটযন্ত্রে কী রায় দিয়েছে।...সেটা একমাত্র তিনিই জানেন। সমপূর্ণভাবে যা গোপনীয়। আর তাই বাক্স কিংবা যন্ত্র খুললে তবেই বোঝা যায়, মানুষ কী চেয়েছে। এই এক্সিট পোলের সঙ্গে এবিপি আনন্দর এডিটোরিয়াল পলিসির কোনও সম্পর্ক নেই।
হুগলি
২০১৮ সাল অনুযায়ী হুগলিতে মোট আসন ছিল ৫০ টি। সেবার বাম-বিজেপি-কংগ্রেসকে হারিয়ে দিয়ে, ৫০ টি আসনেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এবার পঞ্চায়েত ভোট ২০২৩ সালে সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, মোট আসন ৫৩ টির মধ্যে ৪০ থেকে ৫০টি আসন পেতে পারে তৃণমূল, বিজেপির সম্ভাব্য আসন ৪ থেকে ১০টি, বাম-কংগ্রেস সর্বোচ্চ ৩টি আসনে জিততে পারে।
পশ্চিম বর্ধমান
২০১৮ সাল অনুযায়ী পশ্চিম বর্ধমানে মোট আসন ছিল ১৭ টি। বাম-বিজেপি-কংগ্রেসকে হারিয়ে দিয়ে, সবকটি আসনেই জয় এনেছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এবার কেমন হতে পারে ফলাফল ? সি ভোটারের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, এবার পশ্চিম বর্ধমানে মোট ১৮ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের সম্ভাব্য আসন ১২ থেকে ১৮ টি। বিজেপি ১ থেকে ৫ টি সম্ভাব্য আসন। শূন্য থেকে ১ টি আসন পেতে পারে বাম ও কংগ্রেস।
নদিয়া
২০১৮ সাল অনুযায়ী নদিয়ায় মোট আসন ছিল ৪৭ টি। তৃণমূল ৪৭ টি আসনের মধ্যে পেয়েছিল ৪৫ টি আসন, বিজেপি ২ টি আসন এবং শূন্য আসন পেয়েছিল বাম এবং কংগ্রেস। তবে এবার কেমন হতে পারে ফলাফল ? সি ভোটারের সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, এবার নদিয়ায় মোট ৫২ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের সম্ভাব্য আসন ৩০ থেকে ৪০ টি। বিজেপি ১২ থেকে ১৮ টি সম্ভাব্য আসন। শূন্য থেকে ৪ টি আসন পেতে পারে বাম ও কংগ্রেস।
পশ্চিম মেদিনীপুর
পশ্চিম মেদিনীপুরে মোট জেলা পরিষদ আসন ৬০টি। সেখানে সি ভোটারের এক্সিট পোল অনুযায়ী তৃণমূল পেতে পারে ৩১-৪১টি আসন। বিজেপির দখলে আসতে পারে ১৯-২৫টি আসন। বাম ও কংগ্রেসের ঝুলিতে আসতে পারে ০-৪ টি আসন।
মুর্শিদাবাদ
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ৭৮। সেখানে তৃণমূল পেতে পারে ৪৩-৫৩টি আসন। বিজেপি ৩টি আাসন পেতে পারে। বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতে ঢুকতে পারে ২৪-৩৪টি আাসন।
ঝাড়গ্রাম
ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদে মোট আসন সংখ্যা ১৯টি। ভোট শেষে সি ভোটার সমীক্ষা বলছে তৃণমূল এবারেও দৌড়ে এগিয়ে। শাসক দল পেতে পারে ১৩-১৭টি আসন। ঝাড়গ্রামে গেড়ুয়া শিবির ২-৬টি আসন পেতে পারে, বাম এবং কংগ্রেস পেতে পারে ০-১টি আসন।
পূর্ব মেদিনীপুর
পূর্ব মেদিনীপুরে মোট জেলা পরিষদ আসন ৭০টি। সেখানে সি ভোটারের এক্সিট পোল অনুযায়ী তৃণমূল ৩৭ থেকে ৪৭টি আসনে জিততে পারে। বিজেপি পেতে পারে ২৫ থেকে ৩১টি আসন। বাম ও কংগ্রেসের ঝুলিতে আসতে পারে ০-২টি আসন।
বাঁকুড়া
বাঁকুড়ার জেলা পরিষদে মোট আসন ৫৬। সি ভোটার ওপিনিয়ন পোল সমীক্ষায় উঠে এসেছে , তৃণমূল কংগ্রেসের সম্ভাব্য প্রাপ্ত আসন হতে পারে ৩৬ থেকে ৪৬ টি। বিজেপির সম্ভাব্য প্রাপ্ত আসন হতে পারে ৯ থেকে ১৫ টি। বাম এবং কংগ্রেস মিলিয়ে সম্ভাব্য প্রাপ্ত আসন হতে পারে ০ থেকে ৪ টি। উল্লেখ্য, রাজ্য়ের সবকটি জেলা পরিষদের সব কটি কেন্দ্রে পৌঁছে ১০ হাজার ৫৪৮ জনের জনের সঙ্গে কথা বলেছেন সমীক্ষকরা। সমীক্ষা চালানো হয়েছে ১৫ জুন থেকে ২৬ জনের মধ্য়ে। এই সমীক্ষায় মার্জিন অফ এরর প্লাস মাইনাস ৫ শতাংশ।
বীরভূম
সি ভোটার সমীক্ষার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বীরভূম জেলা পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ৫২। তার মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে যেতে পারে ৩৯ থেকে ৪৯টি আসন। ৩ থেকে ১২টি আসন পেতে পারে বিজেপি। বাম-কংগ্রেস জয়ী হতে পারে ০ থেকে ৫টি আসনে। এখানে উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, ২০২২ সালেই বীরভূমের আসনসংখ্যা বেড়ে ৪২ থেকে ৫২ হয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা
দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ৮৫টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে তৃণমূল ৬৬ থেকে ৭৬টি আসনে জিততে পারে। বিজেপি জিততে পারে ৯ থেকে ১৫টি আসনে। বাম-আইএসএফ ও কংগ্রেসের জোটের ভাগ্যে আসতে পারে ১-৫টি আসন।
পুরুলিয়া
সি ভোটারের সমীক্ষা অনুযায়ী, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের মোট আসন সংখ্যা ৪৫। এর মধ্যে ২৬ থেকে ৩৬টি আসন পেতে পারে তৃণমূল। বিজেপি পেতে পারে ১০ থেকে ১৬টি আসন। বাম-কংগ্রেস ০ থেকে ৪টি আসন পেতে পারে। এর আগে, ২০১৮ সালে পুরুলিয়ার মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩৮। সেবার তৃণমূল জয় পেয়েছিল ২৬টি আসনে। বিজেপি ন'টি আসন পেয়েছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল তিনটি আসন। খাতা খুলতে পারেনি সিপিএম। এবার পুনর্বিন্যাসের পর পুরুলিয়ার আসনসংখ্যা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪৫ হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে, জনসংখ্যাবৃদ্ধির নিরিখে আসনসংখ্যাবৃদ্ধির কথা জানায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
হাওড়া
হাওড়ায় মোট আসন সংখ্যা ৪২টি। ৩০ থেকে ৩৮টি আসনে জিততে পারে তৃণমূল। বিজেপি ৪ থেকে ৮টি। এবং বাম-কংগ্রেস সর্বোচ্চ ২টি আসনে জিততে পারে।
উত্তর ২৪ পরগনা
উত্তর ২৪ পরগনায় মোট জেলা পরিষদ আসন ৬৬টি। সেখানে সি ভোটারের এক্সিট পোল অনুযায়ী তৃণমূল পেতে পারে ৪৪-৫৪টি আসন। বিজেপির দখলে আসতে পারে ৫-১১টি আসন। বাম ও কংগ্রেসের ঝুলিতে আসতে পারে ৬-১০টি আসন। এর আগে ২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুরে ৫৭টি জেলা পরিষদ আসন ছিল। সেখানে ৫৭টিই পেয়েছিল তৃণমূল। বিরোধীশূন্য ছিল জেলা পরিষদ।
পূর্ব বর্ধমান
পূর্ব বর্ধমানের জেলা পরিষদে মোট আসন সংখ্যা ৬৬টি। সমীক্ষা বলছে সেখানে তৃণমূলের সম্ভাব্য ৪৩ থেকে ৫৩টি আসন পেতে পারে। বিজেপির ঝুলিতে থাকতে পারে ১১ থেকে ১৭টি আসন। বাম এবং কংগ্রেস পেতে পারে ১-৫টি আসন।