বিটন চক্রবর্তী ও সোমনাথ মিত্র: তৃণমূলের উত্থানের নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল নন্দীগ্রামের (Nandigram News)। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানে শাসকদলকে টেক্কা দিল বিজেপি (BJP)। নন্দীগ্রামের মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি ন'টিতে জয়ী হয়েছে (Panchayat Elections Result 2023)। সাতটি গিয়েছে তৃণমূলের (TMC) দখলে। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু। জমি আন্দোলনের আর এক কেন্দ্র সিঙ্গুরে (Singur News) ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবক'টিই তৃণমূলের দখলে। সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতিতে খাতা খুলেছে সিপিএম (CPM)।



রাজ্য রাজনীতির মোড় ঘোরানো দুই অধ্যায়, সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম, তিন দশকের বাম সরকারের বিসর্জনের দুই অনুঘটক বলে ধরা হয় যাদের। এই দুই এলাকাই তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। তার পর তিন দফায় একটানা রাজ্যে ক্ষমতায় শাসকদল। কিন্তু এবছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই দুই জায়গায় বিপরীতমুখী ফল হল তৃণমূলের।

তৃণমূলকে কার্যত কোণঠাসা করে নন্দীগ্রামের মাটিতে জমি আরও শক্ত করল বিজেপি। বিধানসভার পরে নন্দীগ্রামে ফের ধাক্কা খেল শাসকদল। 
নন্দীগ্রামে মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বিজেপি জিতল ন'টিতে। তৃণমূল সাতটিতে জয়ী হয়েছে। নন্দীগ্রামের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু। তবে সেখানে আসন সংখ্যা বিজেপি-রই বেশি।

তবে তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রইল সিঙ্গুরে। শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক নন্দীগ্রামে এবার বিজেপি-র ফল হয়েছে চমকপ্রদ। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রাম ১ ও ২ নম্বর ব্লকের মোট ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতই গিয়েছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু এবার হলদি নদীর তীরে কার্যত গেরুয়া ঝড়।


আরও পড়ুন: Panchayat Election Result : 'আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গকে পথ দেখাবে নন্দীগ্রাম', দাবি বিরোধী দলনেতার

নন্দীগ্রামের ১ নম্বর ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ম্যাচ ড্র হয়েছে। তৃণমূল এবং বিজেপি, দু-পক্ষই পাঁচটি করে গ্রাম পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছে। নন্দীগ্রাম ২ নম্বর ব্লকে মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা সাত। এর মধ্যে বিজেপি চারটিতে এবং তৃণমূল জিতেছে দু'টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। আমদাবাদ ২ নম্বর পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু।

নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, ২০০৭ সালে গোকুলনগরের অধিকারীপাড়া এবং সোনাচুড়া - এই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় গুলি-রক্তপাত-মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, এই দুই পঞ্চায়েতই এবার বিজেপি-র দখলে।


আর ন্যানো বিদায়ের ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হুগলির সিঙ্গুর ব্লকে কার্যত ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত-ফলেরই পুনরাবৃত্তি হল।  সিঙ্গুরের
মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৬। তার সবকটিই এবারও দখলে রেখেছে তৃণমূল। গতবারের মতো এবারও সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতিতেও জয়ী হয়েছে শাসকদল। গতবার সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতিতে শূন্য হয়ে গিয়েছিল সিপিএম। এবার তারা সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতিতে খাতা খুলতে পেরেছে।

রাজ্য-রাজনীতিতে এখন একটাই প্রশ্ন, জমি আন্দোলনের দুই এপিসেন্টার সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রাম। লোকসভা নির্বাচনের আগে দুই জায়গায় শাসকদলের এই বিপরীত ফল ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।