উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কোচবিহার : রক্তস্নাত পঞ্চায়েত ভোট। বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছিল কোচবিহার ( Cooch Behar ) । বেঘোরে গিয়েছে নিরীহ ভোটারের প্রাণ। মায়ের সঙ্গে দিনহাটার ( Dinhata ) কালীরপাট মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন বছর তেইশের চিরঞ্জিত। দাঁড়িয়ে ছিলেন ভোটের লাইনে। সেই সময়, ভোট কেন্দ্রে আক্রমণ করে দুষ্কৃতীরা। মুড়ি মুড়কির মতো বোমাবাজি চলছিল। প্রাণ বাঁচাতে মাকে পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু মাকে সেখানে রেখে ভোট কেন্দ্রে এলে চিরঞ্জিত বুলেটবিদ্ধ হন।  রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে ১ ঘণ্টার ওপর পড়ে ছিলেন। সেই কেন্দ্রে সোমবার আবার ভোট।                       



কার হাত ধরে ভোট দিতে যাবেন?


সন্ত্রাসের পঞ্চায়েত ভোট ( Panchayat Poll 2023 ) কেড়ে নিয়েছে তাঁর ছেলেকে। তাই আর পুনর্নির্বাচনে ভোট দিতে গেলেন না, নিহত চিরঞ্জিৎ কারজির মা। সেদিন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়েও প্রাণ ছিল শরীরে। কিন্তু, আর বেশিক্ষণ জীবনের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। ছেলেই নেই। কার হাত ধরে ভোট দিতে যাবেন? তাই আর পুনর্নির্বাচনে গেলেন না মা !

চিরঞ্জিতের জনমজুরির আয়েই চলত পরিবারের


বাড়িতে অসুস্থ বাবা, বৃদ্ধা মা। দাদা ব্যাঙ্গালোরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করলেও ছোট ভাই চিরঞ্জিতের জনমজুরির আয়েই দিন গুজরান হত দিনহাটার কারজি পরিবারের। মায়ের আশা ছিল, বিয়ে দিয়ে ছেলের সংসার গুছিয়ে দেবেন। কিন্তু তা আর হল কই ? চোখের জল বাধ মানছিল না। আবেগতাড়িত গলায় বললেন, ' আমার মনে খুব দুঃখ। আর যাবই না আমি ভোট দিতে। আমার বাড়ির কেউই যাবে না।ছেলেই তো নিয়ে গেছে সাধ করে। এই রকম করে বাবা। এরম করে ঘাড়ে হাত ধরে বাবা। ' অপারেশনের পর ছেলে বাবাকে বলেছিল ... 'বাবা আমি আর বাঁচব না', বললেন চিরঞ্জিতের মা। 

নিহত চিরঞ্জিতের বাবাও বললেন, ' না। ভোট দিতে যাব না। আমার ছেলে চলে গেল। ভোট দিতে যাওয়ায় আমার ছেলের প্রাণ চলে গেল।'

সন্তানহারার আক্ষেপ, সেদিনও যদি এরকম নিরাপত্তা থাকত, অকালে চলে যেতে হত না তাঁর ছেলেকে।                    




 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial