নয়াদিল্লি: একার ক্ষমতায় ৪০০-র বেশি না হলেও, ৩০০-র বেশি আসনে বিজেপি-র জয় নিশ্চিত বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এক নম্বর দল হিসেবে উঠে আসবে বলেও দাবি ছিল তাঁর। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে হিসেব মেলাতে পারলেন না ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (Prashant Kishor)। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ পাওয়া তো দূর, একার ক্ষমতায় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনও জিততে পারেনি বিজেপি। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের ফলাফলও ছুঁতে পারেনি তারা। পশ্চিমবঙ্গেও সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়া শিবির।
নির্বাচনী কৌশল রচনাও জীবিকা হতে পারে, প্রশান্তকে দেখেই শিখেছে ভারত। ২০১৪ সাল থেকে যে পথে এগিয়েছে ভারতের রাজনীতি, তাতে 'কিং মেকার' হিসেবে প্রশান্তের ভূমিকা কায়, মন, বাক্যে মেনেও নিয়েছিলেন অনেকে। তাই খাতায়কলমে ভোটকুশলীর পেশা ছেড়ে দিলেও, নির্বাচন এলেই প্রশান্তের মতামতের দিকে তাকিয়ে থাকতেন সকলে। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রশান্তের ভবিষ্যদ্বাণী ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল। (Lok Sabha Elections 2024 Result)
মঙ্গলবার ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর গোড়ার দিকে বিজেপি যদিও এগিয়েছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার হয়ে যায়, লড়াই অত সহজ হবে না। বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোটকে কখনও ছাপিয়ে যাচ্ছিল I.N.D.I.A জোট, কখনও আবার সমানে সমানে চলছিল লড়াই। দিনের শেষে ম্যাজিক সংখ্যায় পৌঁছতেই পারেনি বিজেপি। তাদের ঘাড়ের কাছেই কার্যত নিঃশ্বাস ফেলছে I.N.D.I.A জোট, যাদের অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ প্রশান্তও।
আরও পড়ুন: Modi On Election Result 2024:ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে পোস্ট প্রধানমন্ত্রীর
ফলত, নির্বাচনী ফলঘোষণা হতেই প্রশান্তের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। কারণ ভোটগ্রহণের শেষ পর্যায়ে প্রশান্তের দাবি ছিল, একার ক্ষমতায় বিজেপি যদি ৩৭০ আসনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে নাও পারে, ২০১৯ সালে প্রাপ্ত ৩০৩ আসনের চেয়েও বেশি আসন পাবে তারা। দক্ষিণ এবং পূর্ব ভারতে বিজেপি অভূতপূর্ব ফল করবে বলেও দাবি করেছিলেন। হিমাচল প্রদেশ এবং তেলঙ্গানায় এর আগে হিসেব মেলাতে পারেননি প্রশান্ত। তাই এতটা নিশ্চিন্ত তিনি হচ্ছেন কীভাবে সেই প্রশ্নও করেছিলেন প্রশান্ত।
কিন্তু জবাব দিতে গিয়ে কার্যত আক্রমণাত্মক অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল প্রশান্তকে। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডল থেকে পোস্ট হওয়া আগের ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরলেও, নিজের ভুল স্বীকার করতে চাননি তিনি। এমনকি বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে বিরোধীরা যখন সরব, সেই সময়ও বিজেপি-র জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সুরই ধরা পড়েছিল প্রশান্তের কথায়। তির্যক কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছিলেন সমালোচকদের। কিন্তু মঙ্গলবার প্রশান্তের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল বলেই প্রমাণিত হল।
নরেন্দ্র মোদির ব্র্যান্ড ভ্যালু আগের জায়গায় নেই বলে যদিও মন্তব্য করেছিলেন প্রশান্ত, কিন্তু বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, ঘৃণাভাষণ নিয়ে মোদির বিরুদ্ধে সার্বিক ক্ষোভ নেই বলেও দাবি করেছিলেন প্রশান্ত। আগামী দিনে কেন্দ্রে সরকার চালাতে গিয়ে মোদিকে বাধার মুখে পড়তে হতে পারে, বিরোধিতা আরও বাড়তে পারে বলে যদিও সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু বিজেপি-র ভোটবাক্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ইঙ্গিত নেই বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার নির্বাচনের যে ফলাফল সামনে এসেছে, তাতে মানুষ যে অসন্তুষ্ট, তা স্পষ্টরূপে ধরা দিয়েছে। সেক্ষেত্রেও প্রশান্তের ভবিষ্যদ্বাণী ফলেনি।
এ নিয়ে আগেই যদিও প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন প্রশান্ত। প্রথম কয়েক দফার ভোটগ্রহণের হার নিয়ে যখন উদ্বেগ ছড়ায়, ঠিক সেই সময়ই প্রশান্ত বিজেপি-কে অদম্য, অজেয় হিসেবে তুলে ধরার গরজ কেন দেখালেন, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ভুল মানতে না চাওয়া এবং ভুল ধরিয়ে দেওয়া সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা নিয়ে নিন্দার মুখে পড়েন। NDA-র সঙ্গে হাত মেলানো চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে সেই সময়ই। মোদি যখন পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে ভাল হবে বলে দাবি করছেন, সেই একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এক নম্বর দল হিসেবে উঠে আসবে বলে যে মন্তব্য করেন প্রশান্ত, তাতে তাঁর রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর সেই তত্ত্ব আবারও তুলে ধরছেন অনেকেই।