বিটন চক্রবর্তী, কোলাঘাট: পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দিন এগিয়ে আসছে (Panchayat Elections 2023)। তার আগে চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে। তৃণমূল (TMC), বিজেপি (BJP), কংগ্রেস (Congress), সিপিএম (CPM), নিজের মতো করে প্রচার চালাচ্ছে সব দলই। সেই আবহেই পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে বেনজির সমীকরণ চোখে পড়ল। সেখানে বিজেপি-কে রুখতে অলিখিত ভাবে হাত মেলাল তৃণমূল এবং সিপিএম। নির্দল প্রার্থীর সমর্থনে দুই দলের কেউই প্রার্থী দাঁড় করাল না (Kolaghat News)। 


কোলাঘাটের কোলা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৬ নম্বর আসনের জন্যই তৃণমূল এবং সিপিএম একজোট হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে স্থানীয় সূত্রে (Purba Medinipur News)। সেখানে নির্দল হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন অনিন্দিতা পাল। বিজেপি-র তরফে প্রার্থী করা হয়েছে মিতা পালকে। বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থীকে জয়ী করতেই ওই আসনে তৃণমূল এবং সিপিএম প্রার্থী দাঁড় করায়নি বলে জানাচ্চেন স্থানীয়রা। তা নিয়ে বিজেপি কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে। যদিও তৃণমূল এবং সিপিএম-এর দাবি, মানুষের জোট হয়েছে সেখানে। 


আগামী বছর কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচন। তার জন্য বিজপি বিরোধী শিবির হিসেবে জাতীয় স্তরে একজোট হয়েছে তৃণমূল এবং কংগ্রেস। বাংলায় যদিও প্রতিপক্ষ হিসেবেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নাম লিখিয়েছে দুই দল। তবে কোলাঘাটের ঘটনায় জাতীয় জোটকে অগ্রাধিকার দেওয়র প্রবণতা দেখছেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি পটনায় লোকসভার জন্য বিজেপি বিরোধী শিবিরের বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন ছিলেন, ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি, রাহুল গাঁধীরাও। 


আরও পড়ুন: Firhad Hakim: ‘মহব্বত এক হোতি হ্যায়, হাজারোঁ সে নহি, আমাদের কাছে মমতাই ওহ্ এক’, বীরভূম থেকে বার্তা ফিরহাদের


বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জাতীয় স্তরের সেই জোটের প্রসঙ্গ এসে পড়েছে বার বার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তা নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন দুই দলকে। মমতা-সীতারাম একসঙ্গে বসে ফিশফ্রাই খেয়েছেন বলে খোঁচা দিয়েছেন তিনি। তার জন্য বিজেপি-র হাত শক্ত করতে বামেদের ভোট রামের ঝুলিতে পোরার আর্জি জানিয়েছেন। সেই আবহেই কোলাঘাটে দুই দলের অলিখিত সমঝোতার বিষয়টি সামনে এল। 


বিজেপি-র দাবি, তাদের হারাতেই একজোট হয়ে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে তৃণমূল এবং সিপিএম। তার জন্য নিজেদের কোনও প্রার্থী দাঁড় করায়নি। শুধু তাই নয়, নির্দল প্রার্থীর দেওয়াল লিখনের জায়গাতেও 'জোটের পথে গ্ৰাম' লেখা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বুথে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলাপরিষদের প্রার্থীর প্রচারের ফ্লেক্সেরর উপর তৃণমূল এবং সিপিএম-এর দলীয় পতাকা, আর তার নীচে নির্দল প্রার্থীর প্রতীকচিহ্ন আম আঁকা থাকতে দেখা গিয়েছে।


গত নির্বাচনে এই  ৯৬ নং বুথ ছিল বিজেপি-র দখলে। তবে গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে ছিল তৃণমূলের। এবারে সেখানকার ছবিটা একেবারেই আলাদা। বিজেপি ভোট প্রচারে গিয়ে তৃণমূল-সিপিএম জোটের কথা বলছে। অন্য দিকে, নির্দল প্রার্থী দাবি করেছেন, কোনও দলের জোট নয়, এটি মানুষের মহাজোট। যদি সত্যিই মানুষের মহাজোট হয়, তাহলে শাসকদল এবং সিপিএম কেন প্রার্থী দিল না, প্রশ্ন তুলছে বিজেপি।  তাই বাড়ি বাড়ি প্রচারে তাদের বার্তা, "ভোটটা আমাদের দেবেন। কারণ তৃণমূল এবং সিপিএম জোট বেধে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে।"


যদিও এই অভিযোগ স্বীকার করতে চাননি নির্দল প্রার্থী। তাঁর কথায়, "এটা মানুষের জোট। এই জোটে সবাই আছে, সিপিএম, তৃণমূল এবং বিক্ষুব্ধ বিজেপি-রা। আসলে মানুষ চাইছেন একত্রিত হয়ে বিজেপি-কে হারাতে।" এ নিয়ে তৃণমূল এবং সিপিএম-কে কড়া ভাষায় কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, "তৃণমূল-সিপিএম যতই জোট করুক না কেন, ভারতবর্ষে আর জোট রাজনীতি চলে না। প্রধানমন্ত্রী যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তাতে যে যতই জোট করুক না কেন, বিজেপি-কে হারাতে পারবে না।"


তবে বিজেপি-র তরফ থেকে যে মহা জোটের কথা বলা হচ্ছে, তা স্বীকার করতে চাননি তৃণমূল এবং সিপিএম নেতৃত্ব। কোলাঘাট ব্লক তৃণমূল সভাপতি অসীম মাঝি বলেন, "২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর বিজেপি মানুষের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা কেউ মেনে নিতে পারেননি। দলের পক্ষ থেকে আমরা মনোনয়ন দিয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের মানুষ বললেন, তৃণমূলের নেতৃত্বে মহাজোট করতে চান। তাই মানুষের মহাজোট গড়ে যে নির্দল প্রার্থী হিসেবে যিনি দাঁড়াবেন, তাঁকে ভোট দিয়ে জয়লাভ করাব আমরা। এখানে সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস বা বিজেপি বলে কিছু নেই। তৃণমূলের নেতৃত্বে মানুষের জোট হয়েছে।" 


সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সিহির বক্তব্য, "তৃণমূল এবং সিপিএম-এর জোট প্রার্থী নয়। সিপিএম পরিবারের প্রার্থী। সিপিএম পরিবারের সদস্য। নিজে থেকেই সিপিএম দলের সাথে যুক্ত হন। কিন্তু গ্রামের মানুষ তাঁকে বলেছিলেন, যদি নির্দল হয়ে দাঁড়ান, তাহলে গ্রামের সবাই ভোট দেবেন।" তবে তৃণমূল এবং সিপিএম মানুষের জোট বলে দাবি করলেও, ভিতরে ভিতরে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে দাবিতে অনড় বিজেপি।