নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। একমাসও আর বাকি নিয়েই ভোটগ্রহণে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনার নিযুক্তির উপর স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হল না সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচনের আগে কমিশনারের নিযুক্তিতে স্থগিতাদেশ দিলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে জানাল শীর্ষ আদালত। তবে আদালত প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে। যে আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে, সেই নিয়ে শুনানির প্রয়োজন রয়েছে বলে জানাল আদালত। (Election Commissioners Appointment)
বৃহস্পতিবার বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি চলছিল। আদালত বলে, “নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। সামনেই নির্বাচন। তাই সুবিধা-অসুবিধার দিকটি মাথায় রাখতে হবে। তাই সুবিধা-অসুবিধার দিকটি মাথায় রাখতে হবে। সদ্য নিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগও নেই।” (Supreme Court) তবে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যে আইন পাশ করিয়েছে কেন্দ্র, তার বৈধতা নিয়ে কেন্দ্রকে নোটিসও দেওয়া হয়েছে। আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে চাওয়া হয়েছে জবাব।
কেন্দ্রের হয়ে আদালতে সওয়াল করছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। আইন কার্যকর হওয়ার পর পরই। কিন্তু ওই আইন নিয়ে দু’জায়গায় সমস্যা রয়েছে বলে জানায় আদালত। আদালত জানায়, আইনটি আদৌ সাংবিধানিক কি না, যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে, সেই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আরও সময় নিয়ে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেত, নামগুলি খতিয়ে দেখতে দু’-তিন দিন সময় দেওয়া যেত বলে মন্তব্য করে আদালত। (Lok Sabha Elections 2024)
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: মন্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ রাহুলের, তাঁর বিরুদ্ধে কমিশনে নালিশ বিজেপি-র
কেন্দ্রের উদ্দেশে আদালত বলে, “একটি শূন্যপদের জন্য পাঁচটি নাম। দু’টি শূন্যপদের জন্য মাত্র ছ’টি নাম পাঠান আপনারা। ১০টি নাম কেন পাঠালেন না? সব তো রেকর্ডেই রয়েছে। ২০০ নামের সুপারিশ করে কত সময় দিয়েছিলেন আপনারা? দু’ঘণ্টা হয়ত? দু’ঘণ্টায় ২০০ নাম কী করে যাচাই করে দেখা সম্ভব? স্বচ্ছতা থাকা উচিত ছিল।” বিচারপতি দত্ত বলেন, “প্রক্রিয়াটি দেখছি আমরা। ন্যায়বিচার শুধু কাম্যই নয়, ন্যায় বিচার হয়েছে কি না, তা দেখাও প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধি আইনের আওতায় পড়ে এটি, যা সংবিধানের পর আমার কাছে সর্বোচ্চ বিধান।”
২০২৩ সালের মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, দেশের প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কমিটিই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করতে পারবেন। সেই মতো নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন কার্যকর হয়।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পর পর গত বছর ডিসেম্বরে সংসদে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার (নিযুক্তি, কার্যকালের শর্তাবলী এবং মেয়াদ) বিল ২০২৩ পাশ করিয়ে নেয় কেন্দ্র। নয়া ওই বিলে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করার পর, সেটি আইনে পরিণত হয়। নয়া আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ কমিটি থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক সদস্যকে যুক্ত করা হয়, যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁদের সামনে বিরোধী দলনেতার সুপারিশ ধোপে টিকবে না, পক্ষপাতহীন কমিশনার নিয়োগে সমস্যা হবে বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই নয়া আইনের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (ADR) এবং আরও কয়েক জন। সদ্য নিযুক্ত দুই নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবীর সিংহ সাধুর নিযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও। তাঁর দাবি ছিল, বৈঠকের আগের রাতে ২১২টি নাম ধরানো হয় তাঁকে। বৈঠকের ১০ মিনিট আগে জানতে পারেন, সম্ভাব্য ছ'জনের বাছাইও হয়ে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছিলেন। লোকদেখানো ওই বৈঠকের প্রয়োজনই ছিল না বলে দাবি করেন অধীর। তাই এই নিয়োগপ্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে যায় ADR.