ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর: সত্যিই কি গণতন্ত্রের উৎসব? নাকি রক্তের হোলি? সকাল থেকে রাজ্যের নানা প্রান্ত হতে যে ভাবে রক্তগঙ্গা বয়ে যাওয়ার খবর আসছিল, তাতে সংযোজন উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinjapur) চাকুলিয়া। সেখানে তৃণমূল প্রার্থীকে (TMC Candidate Murdered) কুুপিয়ে খুনের অভিযোগ ঘিরে তুমুল হইচই। নিহতের নাম মহম্মদ শাহেনশা। বিদ্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেবরা অঞ্চলের ১৯২ নম্বর বুথের ওই প্রার্থীকে খুন করেছে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা (Congress Led Miscreants), অভিযোগ এমনই।
কী ঘটেছিল?
প্রাথমিক ভাবে যা শোনা যাচ্ছে, তাতে বুথের বাইরে এনে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মহম্মদ শাহেনশাকে খুন করে বলে অভিযোগ। স্বয়ং জেলা তৃণমূল সভাপতি কানহাইয়ালাল আগরওয়াল এই অভিযোগ এনেছেন। গোটা ঘটনায় আরও ১০ থেকে ১২ জন তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। আজ সকাল থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্ত হতে কোথাও প্রাণহানি, কোথাও দেদার ছাপ্পা ভোট, কোথাও আবার ব্যালট বাক্স নষ্টের অভিযোগ ওঠে। দুপুরের মধ্যেই অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর এসে যায়। নিহতদের সিংহভাগই শাসকদলের। বেশিরভাগ জায়গাতেই ভোটারদের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি ঠুঁটো জগন্নাথ? প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তাদের ভূমিকায়। এমনকি রাজ্য় নির্বাচন কমিশনারকেও দীর্ঘক্ষণ পরে তাঁর অফিসে ঢুকতে দেখা যায়। অনেকক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। বেলার দিকে বিবৃতি দিলেও মূলত রাজ্য প্রশাসনের উপর যাবতীয় অশান্তির দায় ঠেলতে চেয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা। বলেন,
'ঘটনা ঘটছে, অপরাধীদের কাজ। পুলিশ দেখবে।'
কড়া বার্তা রাজ্যপালের: এদিকে এদিনও রাস্তায় নেমে একেবারে সরেজমিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস (Governor C V Anand Bose)। পরে বললেন,' শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আশা করেছিলাম। কিন্তু চতুর্দিকে খুন হচ্ছে। মানুষ জানিয়েছে গুন্ডারা ভোট দিতে যেতে বাধা দিচ্ছে। প্রিসাডিং অফিসারও কোনও কোনও সময় সহায়তা করছেন না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। ভোট ব্যালটে হওয়া উচিত, বুলেটে নয়। সকলকে বলব গণতন্ত্রের নিয়ম মেনেই ভোট দিন।' লাগাতার হানাহানি। মুহুর্মুহু বোমা। চলল গুলি। জখম বহু। ব্যালট লুঠ, বুথ জ্যামের অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। রক্তস্নাত ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোট।উত্তর থেকে দক্ষিণ, জেলায় জেলায় অশান্তির ছবি। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের। ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দিকে দিকে অব্যাহত হিংসা। পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Poll 2023) বাংলা যেন কার্যত কুরুক্ষেত্র। ভোট ঘোষণা থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত, অর্থাৎ ভোট পর্বের আগে এক মাসে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। আর ভোটের দিনও পরপর খুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ভোটের দিন সকালে মৃত্যু হল ১২ জনের। ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে এই মৃত্যুমিছিল? অবাধ নির্বাচনের জায়গায় ভোটলুঠের অভিযোগ আর কত উঠবে?