দিনহাটা: ব্যালট নয়, মৃতদেহ গুনেই হল পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন পার। কোচবিহারের দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হলেন একজন সাধারণ ভোটার। নিহত ভোটারের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে উদয়ন গুহ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সামনেই শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিল গোটা পাড়া। দোষীর কঠোর শাস্তির দাবি। শেষপর্যন্ত বিক্ষোভের মুখে ফিরতে হল উদয়ন গুহকে।


কী ঘটল?
নিহতের পরিবারের দাবি একটাই, বিচার চাই। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়েই তাঁদের অভিযোগ, যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা তৃণমূল। কিন্তু উদয়ন তাঁদের অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে নিহতের ভাই বলে দেন, 'নাম বলবো না।' তাতে মন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, 'তা হলে যে বলছ, তৃণমূল এমন করেছে?' নিহতের পরিবারের দাবি, তাঁদের ছেলে কোনও দল করতেন না। পরে সাংবাদিকদের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, 'কে কাকে কী শিখিয়েছে, সে তো জানি না। কিন্তু ওরা মুখ বেঁধে এসেছিল বলছে নিহতের পরিবার। তা হলে জানল কী করে, যে তৃণমূল করেছে?' প্রসঙ্গত, এদিন দিনভরই একের পর এক প্রাণহানির ঘটনায় তেতে উঠেছে গোটা রাজ্য।


পর পর প্রাণহানি...
শনিবার ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই খবর। উত্তর ২৪ পরগনার কদম্বগাছিতে নির্দল প্রার্থীর সমর্থককে খুন করা হয়েছে। অভিযোগের নিশানায় শাসকদলের কর্মীরা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে। সেই শুরু। তার পর, একের পর এক, প্রাণহানির খবর। হিসেব বলছে, স্রেফ ভোটের দিনেই বিভিন্ন জেলায় খুন হয়েছেন ১৬ জন! সাধারণ ভোটার থেকে রাজনৈতিক দলের কর্মী - কাউকে ছাড়ল না সন্ত্রাস! এই ১৬ জনের মধ্যে ৫ জনই মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। গত রাত থেকে এদিন পর্যন্ত এই ৫ জনের প্রাণ গিয়েছে। এদিন সকালের দিকে কদম্বগাছির ঘটনার পর পরই খবর আসে, মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে ফের খুন হয়েছে।  কংগ্রেস কর্মী খুনে অভিযুক্তর দেহ উদ্ধার হয় এদিন। ধাতস্থ হয়ে ওঠার আগেই রাজ্যবাসী জানতে পারেন মালদার মানিকচকে বোমার আঘাতে প্রাণ গিয়েছে এক তৃণমূল কর্মীর। কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষে বোমাবাজি শুরু হয় এদিন সকালে, তাতেই প্রাণ হারান তিনি। রক্তাক্ত হয়েছে কোচবিহারও। সেখানে মারা যান বিজেপির পোলিং এজেন্ট মাধব বিশ্বাস। শাসকদলের বিরুদ্ধে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে। দুপুরের দিকে মুর্শিদাবাদের নওদা থেকে ফের রক্তপাতের খবর আসে। নিহত কংগ্রেস কর্মীকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। আবার উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ায় মারা যান এক তৃণমূলকর্মী। বস্তুত, শুক্রবার রাত থেকে এখনও পর্যন্ত যে ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১০ জনই তৃণমূল কর্মী। বাকিদের মধ্যে ২ জন সিপিএমের, ২ জন কংগ্রেসের, ২ জন বিজেপির এবং ১ জন সাধারণ ভোটার বলে জানা যায়। মুর্শিদাবাদ ছাড়াও মালদা, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, রক্তের ছিটে লেগেছে জেলায় জেলায়।  


আরও পড়ুন:লাশের সারি বাংলায় ! ৬০ নয় মাত্র ১৫ হাজার বুথে হাজির ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী, জানালেন রাজীব সিনহা