অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ সরকার ও প্রদ্যোৎ সরকার, কলকাতা: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জয় শ্রীরাম স্লোগান ঘিরে তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূলের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে অপমান করা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নেতাজিকে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনীতির অভিযোগ করেছে তৃণমূল। পাল্টা হুঁশিয়ারির সুরে দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, এবার তৃণমূল নেতাদের বাড়ির সামনে উঠবে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির ১২৫ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের সরকারি অনুষ্ঠান। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী-রাজ্যপাল। পোডিয়ামের দিকে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক সেই মুহূর্তেই দর্শকাসন থেকে উঠল ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আর বক্তব্য রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী। এখানেই শেষ নয়। মুখ্যমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর ছাড়ার মুহূর্তেও জয় শ্রী রাম ধ্বনি দেওয়া হয়!
যথারীতি ভোটমুখী বাংলায় এই নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়েছে। প্রতিবাদে পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আজ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বক্তব্য রাখতে বাধা দেওয়া হয়। ভিক্টোরিয়ায় তেমনই পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। বক্তৃতা না দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ও মণীষীদের অপমান করলে গর্জে উঠবেন, ভিক্টোরিয়ার সভাস্থল থেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা।’
সুর চড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর ট্যুইট, ‘একঝাঁক বাঁদরের মধ্যে একা সিংহীর মতো দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। মমতাদির দলের সদস্য হিসেবে এতটা গর্বিত আগে হইনি।’
বিজেপিও নিজেদের মতো যুক্তি-জাল বোনার চেষ্টা করে চলেছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘আমি তো যেখানে যাই কালো পতাকা দেখায়, জয় শ্রী রাম বললে উনি জেলে ভরেন। ওঁর কিছু বলার ছিল না তাই বলেননি। রাম নাম শুনে ভয় পাচ্ছেন। মানে অন্তিম সময় এসে গেছে।’
রাজ্যের শাসকদলের স্পষ্ট কথা, নেতাজির সম্মানে সরকারি অনুষ্ঠান, দেশের প্রধানমন্ত্রী যেখানে উপস্থিত আছেন, সেখানে কেন এই ধরনের স্লোগান উঠবে? এটা কি দেশনায়ককে অবমাননা করা নয়? তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘জাতীয় ছুটি এখনও ঘোষণা করেননি, নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ফাইল দিলেন না, এমনকী কয়েকজন বানর সেনা যা করল, তার নিন্দাটুকুও প্রধানমন্ত্রী করলেন না।’
প্রবল বিতর্কের মুখে পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে বিজেপিও। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘জয় শ্রী রাম নামে স্বাগত জানানো হয়েছে। মমতা বক্তব্য বয়কট করে নেতাজিকে অপমান করেছেন।’
পাল্টা জৈব প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বক্তব্য, ‘অসভ্যতা দেখল বাঙালি। নেতাজির সঙ্গে রামের সম্পর্ক কী?’
নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে জয় শ্রী রাম ধ্বনি ঘিরে বিতর্ক! নেতাজিকে কেন্দ্র করে রাজনীতির দড়ি টানাটানি। এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠলেও, তাতে আমল দিচ্ছে না বিজেপি।
ধর্ম ও রাজনীতি প্রসঙ্গে নেতাজি বলেছিলেন, ধর্মকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া উচিত। ধর্ম ব্যক্তি বিশেষের বিষয় হওয়া উচিত, ব্যক্তি হিসাবে মানুষ যে ধর্ম পছন্দ করে তাহা অনুসরণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকিবে। কিন্তু ধর্মীয় কিংবা অতীন্দ্রিয় বিষয়ের দ্বারা রাজনীতি পরিচালিত হওয়া উচিত নয়। ইহা পরিচালিত হওয়া উচিত শুধু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক বিচারবুদ্ধির দ্বারা।
আজকের রাজনীতির নেতারা কি একথা মনে রেখেছেন? নেতাজির ১২৫ তম জন্মজয়ন্তীর প্রেক্ষাপটে জয় শ্রী রাম স্লোগান ঘিরে যে বিতর্ক ও তরজা চলছে, তাতে এই প্রশ্ন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
BJP vs TMC: নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তৃণমূলের, এবার তৃণমূল নেতাদের বাড়ির সামনে উঠবে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান, পাল্টা দিলীপ ঘোষ
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
24 Jan 2021 09:41 PM (IST)
Parakram Diwas at Victoria Memorial: তৃণমূলের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে অপমান করা হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
NEXT
PREV
নির্বাচন ২০২৩ (elections) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -