সৌভিক মজুমদার ও অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: তিনি একজন পাবলিক সার্ভেন্টেরও চেয়েও, বেশি করে নিজেকে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের ভৃত্য হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন। ভবানীপুর উপ নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় মুখ্যসচিবের ভূমিকা সম্পর্কে এরকমই কড়া মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট। যদিও, এরইসঙ্গে তারা এও জানিয়ে দিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভবানীপুরে উপনির্বাচন করাতে কোনও বাধা নেই।


৪ সেপ্টেম্বর, ভবানীপুরে উপনির্বাচন এবং মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে বকেয়া ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু, বাংলায় তিনটি কেন্দ্রে উপ নির্বাচন বাকি থাকলেও, শুধুমাত্র ভবানীপুরে কেন উপ নির্বাচনের দিন ঘোষিত হল, এই প্রশ্নে তুঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক চাপানউতোর। 


এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন বিবৃতি দিয়ে বলে, মুখ্যসচিব কমিশনের নজরে এনেছেন যে, সংবিধানের ১৬৪(৪) ধারা অনুযায়ী, একজন মন্ত্রী যদি ৬ মাসের মধ্যে বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য না হন, তাহলে মেয়াদ শেষে তাঁর মন্ত্রী পদ আর থাকবে না। ফলে দ্রুত নির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট ও সরকারের শীর্ষ পদে শূন্যতা তৈরি হবে। তাই প্রশাসনিক প্রয়োজনীয়তা, জনস্বার্থ এবং রাজ্যের শীর্ষ পদে শূন্যতা এড়াতে ভবানীপুরে উপনির্বাচন করানো যেতে পারে। যেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।


কিন্তু, একটি মাত্র কেন্দ্রে ভোট করানোর জন্য এভাবে মুখ্যসচিব তদ্বির করতে পারেন কী করে? এই প্রশ্ন তুলে, ভবানীপুর উপনির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। 


সেই মামলায় এদিন মুখ্যসচিবকে উদ্দেশ্য করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, তিনি (মুখ্যসচিব) একজন পাবলিক সার্ভেন্টের চেয়েও বেশি করে নিজেকে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের ভৃত্য হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন। 


ভবানীপুরে উপনির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সঙ্কট হবে বলে  জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। কিন্তু, একজন প্রার্থী ভোটে জিতলে বা হারলে কী ধরনের সাংবিধানিক সঙ্কট হয়? সেটা মুখ্যসচিব স্পষ্ট করে বলেননি। পর্যবেক্ষণে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, মুখ্যসচিব কী করে জানলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর থেকে লড়বেন? তিনি তো কোনও দলের মুখপাত্র বা রিটার্নিং অফিসার নন। 


মুখ্যসচিব একজন সরকারি কর্মচারী যিনি আইন অনুযায়ী নিজের কর্তব্য পালন করেন। ক্ষমতায় কে আছে সেটা তাঁর কাছে বড় বিষয় নয়। একজন ব্যক্তি, যিনি না জিতলে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে, তাঁর জেতা নিশ্চিত করাটা মুখ্যসচিবের কাজ নয়।


নির্বাচন কমিশনকে ভুল তথ্য দিয়েছেন মুখ্যসচিব। কমিশনকে বলা হয়েছে, যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অথচ রাজ্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে যে, রাজ্যে করোনার বিধিনিষেধ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।  মুখ্যসচিব বলেছেন যে, বন্যা পরিস্থিতি নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে না। অথচ, এখনও দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। 


হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ভৃত্য বলা হাইকোর্টের সম্মানের সঙ্গে যায় না। সিএস কোনও অন্যায় করেননি। হাইকোর্টের মন্তব্য অনভিপ্রেত। 


উপনির্বাচনের খরচ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে ১৭ নভেম্বর।


আরও পড়ুন: নির্দিষ্ট সূচি মেনেই হবে ভবানীপুরের উপনির্বাচন, জানিয়ে দিল হাইকোর্ট


আরও পড়ুন: গ্রেফতারের পরেই ভবানীপুরকাণ্ডে ধৃত ৮ অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর