রাজীব চৌধুরী, আশাবুল হোসেন ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী: কংগ্রেস-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার পাল্টা তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে আরএসএসের যোগাযোগের অভিযোগে সরব প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলকেও কাঠগড়ায় তোলেন অধীর। পাল্টা সমালোচনা করেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।  


রবিবারই ভবানীপুরের প্রচারে কংগ্রেস-বিজেপি ও সিপিএমের বিরুদ্ধে আঁতাঁতের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, আমি কংগ্রেস ছেড়েছিলাম কারণ, সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাঁত ছিল। এখনও আছে। বিজেপির সঙ্গেও আঁতাঁত আছে।


এবার তার পাল্টা জবাব দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। মমতার উদ্দেশে বললেন, আপনার সঙ্গে আরএসএস-এর বহু পুরনো সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক আজও আছে, আরএসএস-এর সঙ্গে আপনি মিলে মিশে চলেন। বিজেপি, আর এস এস কে ধ্বংসের কথা আপনি বলছেন না। কি করে বলবেন? আর এস এস-এর সঙ্গে যে আপনার সুসম্পর্ক রয়েছে। আরএসএস আপনাকে বলছে দুর্গা মাতা। আমার কথা যদি ভুল হয় চ্যালেঞ্জ থাকল- রাজনীতি করা ছেড়ে দেব। 


এই নিয়ে অধীরকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ওর (অধীর) কাছে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই শিখতে চাই না, গত লোকসভা নির্বাচনের সময় ব্যাপক প্রচার হয় যে অধীর বিজেপিতে যাচ্ছেন, শেষ মুহূর্তে রয়ে গেছেন, এখন উনি যাবেন না, এটা জোর করে বলতে পারি না, কারণ ওর জেলায় শূন্য হয়ে গেছে, অধীর চৌধুরীর বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি, ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছি।


আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের পর্ব এখানেই শেষ হয়নি। বাংলায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সরাসরি তৃণমূলকেই দায়ী করেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ। বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আপনার হাত ধরে বিজেপি এ বাংলায় প্রবেশের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হল। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আপনিও কিন্তু জন্মদাত্রী। কারণ সেদিন আপনি বিজেপির সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাত করে এ বাংলায় সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আপনি এখানটায় বড় হওয়ার সুযোগ দিলেন। আপনি বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক! কংগ্রেসের সঙ্গে নাকি বিজেপির আঁতাত! ভিক্টোরিয়ার সামনের ঘোড়াগুলোও আপনার কথায় হেসে উঠবে।


অবশ্য কিছুদিন আগে অবধি পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। সংসদে বাদল অধিবেশনে এককাট্টা প্রতিবাদ থেকে শুরু করে মোদি বিরোধী জোট শক্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক, দিল্লিতে সনিয়া-মমতা সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী না দেওয়া। সর্বত্রই, কংগ্রেস ও তৃণমূলের পারস্পরিক সৌজন্যের নিদর্শন দেখতে পাওয়া গিয়েছে। 


কিন্তু, হঠাৎই প্রচার মঞ্চ থেকে লাগাতার কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষাপটেই তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করতে দেরি করেননি অধীর চৌধুরী। প্রদেশ সভাপতি বলেন, সৌজন্য দেখিয়ে, রাজনৈতিক শিষ্টাচার দেখিয়ে, যেহেতু তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস। সনিয়া গাঁধী তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে অনীহা প্রকাশ করলেন। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো, তাঁরা ঘটা করে পালা করে কংগ্রেসকে গালাগালি দিয়ে চলেছে যেন কংগ্রেসকে তাঁরা কোনদিন চিনতেনই না, জানতেনই না, বুঝতেনই না।  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব, আপনার রাজনৈতিক জন্ম হয়েছে কংগ্রেসের কোলে।


রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের মতে, আপাতত দুই দলের মধ্যে সম্পর্কের সন্ধি ঠাণ্ডা ঘরে। বরং প্রশ্ন উঠছে, সর্বভারতীয় স্তরে মোদি বিরোধী মুখ কে, তা নিয়েই কি মূল দ্বন্দ্ব? যেমনটা সৌগত রায় মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতাই আছেন, মুখ তিনি, আমরা লড়াইয়ে সবাইকে চাই।


কটাক্ষ করেন অধীর। বলেছেন, কংগ্রেসের কোলে আপনার রাজনৈতিক জন্ম। ২০১১ সালে সনিয়া গাঁধীর দয়াতে কংগ্রেসের সমর্থনে আপনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আপনার ঈর্ষা, আপনার লোভের কোনও সীমা-পরিসীমা নেই, আমরা সবাই জানি। আপনি বিদ্বেষ এবং ঈর্ষার একটা মডেল। সর্বগ্রাসী রাজনীতি করতে আপনি ভালোবাসেন।


আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্কের সমীকরণ, কোন পর্যায়ে পৌঁছয়, সেটাই দেখার।


আরও পড়ুন: ভবানীপুরে প্রচারে তুমুল উত্তেজনা, দিলীপের কর্মসূচিতে হামলা, জখম এক বিজেপি কর্মী


আরও পড়ুন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ায় প্রচারে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে বাম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস