কলকাতা: রাজ্যে  দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে অডিও বার্তা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। অডিও বার্তায়  বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘রাজ্যে এবারের বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। এ এক সন্ধিক্ষণ। বিগত বামফ্রন্টের আমলে আমাদের স্লোগান ছিল- কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। কৃষিতে সাফল্য এসেছিল, শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।  অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। হতাশা দেখা দিয়েছে। কৃষিতে সংকট, কৃষকদের সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষিজাত দ্রব্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে। শিল্প ও শিল্পায়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গত ১০ বছরে কোনও উল্লেখযোগ্য শিল্পই আসেনি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে শ্মশাণের নীরবতা।...গণতন্ত্র আক্রান্ত। মহিলাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত। এই পরিস্থিতি চলতে পারে না’।তাঁর দাবি,  তৃণমূলের আমলে  তরুণদের সামনে কোনও আশার আলো নেই।


 


তিনি বলেছেন, তৃণমূলের স্বৈরাচারী আচরণ ও বিজেপির আগ্রাসনে সংকটে পড়েছে রাজ্য।  বাম-ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির পাশে দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস তৈরির জন্য তিনি সাধারণের কাছে আর্জি জানিয়েছেন।অডিও বার্তায় বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি জয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।


 


গতকাল  প্রেস বিবৃতি দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। প্রেস বিবৃতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য  বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময় থেকেই যে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ভাবনা আমরা রাজ্যের মানুষকে বলার চেষ্টা করেছি তা হল, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। আমরা সেই পথে এগিয়েছি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমান সরকারের হাতে গত দশ বছরে সেই কৃষিতে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। উল্লেখযোগ্য কোনও শিল্প আসেনি এক দশকে। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে শ্মশানের নীরবতা। সে সময়ের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন বাংলার যুব সমাজ। সরকারি ক্ষেত্রে কোনও নিয়োগ নেই। বাংলার মেধা ও কর্মদক্ষতা যা আমাদের সম্পদ - তা আমাদের রাজ্য ছেড়ে ভিনরাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।...একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের স্বৈরতান্ত্রিক দাপাদাপি অন্যদিকে বিজেপির বৃহৎ‍ পুঁজির স্বার্থে সর্বনাশা আর্থিক নীতি, বিভেদের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ - যার পেছনে রয়েছে আরএসএস-এর ভয়ঙ্কর মতাদর্শ। এরই পরিণতিতে আজকের এই ধ্বংসচিত্র।...বর্তমান অবস্থার অবসান ঘটাতেই হবে। আজ বাংলার মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।


 


উল্লেখ্য,   নন্দীগ্রামে ভোটের মুখে ফিরেছে ১৪ বছর আগেকার গুলিকাণ্ডের স্মৃতি। তা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অধিকারী পরিবারের চরম সংঘাত বেধেছে। নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বলেছিলেন,  বাপ ব্যাটা সেদিন সিপিএম-কে ডেকে এনেছিল। সিপিএম-এর ক্যাডাররা পুলিশের ড্রেস পরে গুলি চালিয়েছিল।


 


পাল্টা নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী  বলেন, ‘ফেরেব্বাজ মুখ্যমন্ত্রী। ওঁর নন্দী মা বইটি পড়ুন। তা হলেই বুঝতে পারবেন ওঁর দ্বিচারিতা’।


 


এভাবে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দুই কাণ্ডারী এখন দু’পথে।তাদের নিজেদের এখন মধ্যেই সংঘাত।আর এই প্রেক্ষাপটেই মুখ খুললেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।সেই উত্তপ্ত সময়ে তখন বাংলার রাশ ছিল তাঁর হাতেই।সিঙ্গুরে রতন টাটার সঙ্গে চুক্তি করে গাড়ি কারখানা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।নন্দীগ্রামে শুরু হয়েছিল কেমিক্যাল হাবের তোড়জোড়।


 


কিন্তু, আন্দোলনের জেরে দু’জায়গাতেই আর শিল্প হয়নি!এই দুই আন্দোলনের অভিঘাতে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা হারান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।জমি আন্দোলন ঘিরেই রাজ্যজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন শুভেন্দু অধিকারী।


 


আর সেই সময় শিল্পস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন যিনি, সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখন অশক্ত শরীরে পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটে শয্যাশায়ী! আর সেই অবস্থাতেই, তাঁর স্বপ্নের সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম নিয়ে গতকাল প্রেস বিবৃতিতে মুখ খোলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।


 


বিস্তারিত আসছে.....