নন্দীগ্রাম: বরাবর তিনি লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন সকলের সামনে দাঁড়িয়ে। এবারও এক সময়ের প্রাক্তন সহযোগী ও এখনকার প্রবল প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে পশ্চিমবঙ্গ দখলের লড়াইটা পৌঁছে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের জনসভায় দাঁড়িয়ে আজ মমতা ঘোষণা করেছেন, আগামী বিধানসভা ভোট নন্দীগ্রাম থেকে লড়বেন তিনি।

দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র মমতাকে কখনও খালি হাতে ফেরায়নি। প্রথমে কংগ্রেস আর পরে তৃণমূলের হয়ে এখান থেকে বারবার সংসদে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু ২০১১-য় তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর ২০১২-র বিধানসভা উপনির্বাচন আর ২০১৬-র বিধানসভা ভোট- দুবারই মমতা লড়েন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ঘাসফুলের ফাঁকে ফাঁকে দক্ষিণ কলকাতায় হয়েছে পদ্মফুলের চাষ। ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৫ হাজার ৭৮টি ভোট। কিন্তু, ২০১৬-য় তা একলাফে বেড়ে হয় ২৬ হাজার ২৪৯। আর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের বিধানসভা ওয়াড়ি ফল অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রে এক্কেবারে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। তাদের ভোট বেড়ে হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৬৯। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে মুখ্যমন্ত্রীর ভবানীপুর কেন্দ্রে বিজেপির থেকে মাত্র ৩ হাজার ১৬৮ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে তৃণমূল। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে ছ’টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।

গত বিধানসভা ভোটে ক্লিন সুইপ করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের ভোটে তৃণমূলকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেবে বিজেপি। তৃণমূলের অনেক নেতাই বেসুরো গাইছেন, পূর্ব মেদিনীপুরে দল ছেড়েছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতার পাশাপাশি থেকে লড়াই করা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু, স্লোগান দিয়েছেন, তোলাবাজ ভাইপো হঠাও। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী আজ ঘোষণা করলেন, আগামী বিধানসভা ভোট তিনি লড়বেন নন্দীগ্রাম থেকে। তাঁর কথায়, নন্দীগ্রাম আমার লাকি জায়গা, আমিই যদি এখান থেকে ভোটে দাঁড়াই কেমন হয়? আমি হয়তো বেশি সময় দিতে পারব না, ২৯৪টা আসন থেকেই তো দাঁড়াতে হবে। আমার হয়ে আপনারা কাজটা করে দেবেন, পরের কাজটা আমি করে দেব। তাহলে কি এবার ভবানীপুর থেকে দাঁড়াবেন না মমতা? তিনি বলেছেন, ভবানীপুর আমার বড় বোন, নন্দীগ্রাম মেজো বোন। ভবানীপুর, নন্দীগ্রাম ২ কেন্দ্র থেকেই ভোটে দাঁড়াব।

বিজেপি অবশ্য মমতার ঘোষণাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ২০১৬ সালে উনি বলেছিলেন ২৯৪টি আসনেই আমি প্রার্থী ৷ একমাস আগে উনি বললেন, ২৯৪টি কেন্দ্রে আমিই অবজার্ভার৷ এখন উনি বললেন নন্দীগ্রামের প্রার্থী হবেন৷ এই তালিকা বাড়তেই থাকবে৷ এরপর বলবেন ডোমজুড়ে প্রার্থী হবেন, আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী হবেন, কোচবিহারের প্রার্থী হবেন, আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী হবেন, জঙ্গলমহল বা পাহাড়ের কোনও আসন থেকে প্রার্থী হবেন৷ আসলে বিষয়টা হল, তৃণমূল কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে বা নীচের তলার যে কর্মীরা চলে যাচ্ছেন, তাঁদের আটকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সব বলছেন৷ ২০০-র বেশি আসনে জিতে রাজ্যে বিজেপিই ক্ষমতায় আসবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷