অর্ণব মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া: আজ, বৃহস্পতিবার ফের রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। পুরুলিয়ায় নির্বাচনী সভা করবেন তিনি। ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন সাংসদ। এভাবেই বাইরে থেকে সভায় লোক আনতে হবে। খোঁচা তৃণমূলের। পুরুলিয়ার লোকই সভা ভরাবে। পাল্টা দাবি করেছে গেরুয়া শিবির।


২৭ মার্চ প্রথম দফাতেই ভোট হবে গোটা পুরুলিয়া জেলায়। তার আগে, বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভাঙড়ায় নির্বাচনী সভা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নবকুঞ্জের মাঠে তাঁর সভার জন্য তুঙ্গে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।


১৯ জানুয়ারি হুটমুড়ার যে ফুটবল মাঠে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করেছিলেন, সেই মাঠে নামবে প্রধানমন্ত্রীর কপ্টার। মোদির এই সভার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের কোডার্মা লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ রবীন্দ্রকুমার রায় এবং পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোর্তিময় মাহাতো। এমনিতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিরাগত বলে নিশানা করে তৃণমূল, সেখানে মোদির সভায় একজন ভিন রাজ্যের নেতাকে দায়িত্ব দেওয়ায়, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।


আরও পড়ুন: WB Election 2021: ভোট আসে-যায়, রাস্তা সেই বেহাল, ক্ষুব্ধ বাঁকুড়ার এই গ্রামের বাসিন্দারা


পুরুলিয়ার তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আসবে, দেখছেন তো ঝাড়গ্রাম থেকে লোক আনছে, এই ভাবেই সভায় লোক আনবে। মুখ্যমন্ত্রীর সভা যেখানে হয়েছিল, সেখানে চপার নামাচ্ছে, মমতার যা লোক হয়েছিল, তারা সিকিভাগও হবে না।’’


মোদির সভা আয়োজনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রবীন্দ্রকুমার রায় জানান, ‘‘পুরুলিয়ায় বিজেপির যারা শহিদ হয়েছেন ৬টি পরিবার, তাঁরা আসবেন, যারা থাকবেন কোভিড টেস্ট হবে। সমস্ত পুরুলিয়া থেকেই লোক আসবে। কিছু কার্যকর্তা ঝাড়খণ্ড থেকে আসতে পারেন ৷’’


২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ৫ হাজার ভোটে জিতেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ১৯-এর লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্রটি তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি। সেইসঙ্গে বিধানসভাভিত্তিক ফল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, পুরুলিয়ার ৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৮টিতেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। শুধুমাত্র মানবাজারের এগিয়ে তৃণমূল। এদিক গত ১৯ ডিসেম্বর, শুভেন্দু অধিকারীদের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ও।


ফলে ২১-এর ভোটে পুরুলিয়ায় বিজেপির কাছে যেমন ভোট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ, তেমনি প্রেস্টিজ ফাইট তৃণমূলের কাছে। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার পুরুলিয়ার জনসভা থেকে বিজেপি সাংসদকে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘জ্যোতির্ময় তো এলাকায় থাকেন না, উনি শুধু প্রধানমন্ত্রীকে সি ওফ করতে যায়, মোদি তো ১৯-এর আগে এসেছিলেন, এখন আবার আসছেন ভোট হলে ৷’’


এদিন যার পাল্টা জবাব দিলেন বিজেপি সাংসদ। সেই সঙ্গে মাওবাদী ইস্যু তুলে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা সবসময় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। ওরা ভয় পেয়েছে বলে গতকাল মানবাজারে গন্ডগোল করেছে। তৃণমূল যেভাবে আগেও মাওবাদী কার্ড খেলার চেষ্টা করেছে, এখনও সেভাবে জেতার চেষ্টা করেছে।’’


পুরুলিয়ার তৃণমূল প্রার্থী সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাওবাদীদের কথা বলছেন, মাওবাদীদের যে আশ্রয়স্থল ছিল, সেখানে এত উন্নয়ন করেছি, যে আর সেসব নেই, আর তাস খেলার কথা বলছেন মনে হচ্ছে মাওবাদীদের কিছু বলে ওরাই ফায়দা নিতে চাইছে ৷’’


গত সোমবার পুরুলিয়ায় জোড়া সভা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু-দিনের মধ্যেই এই জেলার মাটিতে পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রীও। বিধানসভা ভোটে শেষমেশ কার দখলে থাকবে পুরুলিয়া, উত্তর মিলবে দোসরা মে।