কলকাতা: ১১ ঘণ্টার মধ্যেই ইউ টার্ন নিলেন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। সব মিটে গিয়েছে, তৃণমূলেই আছি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর জানিয়ে দিলেন বীরভূমের সাংসদ। বিক্ষুব্ধদের জল ঢেলে ঠান্ডা করার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল। কটাক্ষ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।


এর আগে প্রশ্ন উঠেথিল এবার কি বিজেপিতে যাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়? দলের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশের পরই এই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। জানা যায়,   আগামীকাল  দিল্লি যাচ্ছেন বীরভূমের সাংসদ। সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে তাঁর কথা হতে পারে । এর আগে তৃণমূল সাংসদ বলেন, যেখানে যেতে চাই পৌঁছতে পারিনি। শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়ে লাভ হয়নি।

১৭ দিন আগে রবীন্দ্রনাথের ছবি বুকে নিয়ে বোলপুরে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে রোড শোতে হেঁটেছিলেন! আর আজ সেই শতাব্দী রায়েরই বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়।

বৃহস্পতিবার ফ্যান ক্লাবের ফেসবুক ওয়ালে, একটি পোস্ট ঘিরেই জল্পনা শুরু হয়। তবে সেটি তাঁর নিজের বক্তব্য কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবার প্রকাশ্যেই দলের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়।  দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি অমিত শাহ-র সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ!

দিল্লি যাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শতাব্দী বলেছেন, হ্যাঁ মোটামুটি যাচ্ছি। কেন? ৩ বারের সাংসদ, যেতে পারি না!! ঘরবাড়ি, মিটিং থাকে, স্যান্ডিং কমিটি, বন্ধুবান্ধব থাকে, অস্বাভাবিক কিছু নয়।

অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করবেন?

জবাবে শতাব্দী বলেছেন, পরিচিতদের সঙ্গে দেখা হতেই পারে। মিটিং করব এমন কোনও ব্যাপার নয়। জানি না, কিছুই ঠিক নেই।

রাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বললেন, কাল দিল্লি যাচ্ছি না।

আপাতত দেখে মনে হল, দিল্লিমুখী শতাব্দী এক্সপ্রেসকে কলকাতার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন পুরনো বন্ধু কুণাল ঘোষই। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল বললেন, শতাব্দী তৃণমূলেই ছিল, তৃণমূলেই থাকবে।

ক্ষোভ প্রকাশ্য আসার পরই শতাব্দীর মানভঞ্জনে নেমে পড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব। ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন সৌগত রায়। অভিনেত্রী সাংসদের বাড়িতে চলে যান কুণাল ঘোষ।

এরপর শতাব্দী রায়কে নিয়ে সোজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে চলে যান কুণাল ঘোষ। তিনজনের মধ্যে প্রায় আধঘণ্টা কথা হয়।

এরপরই শতাব্দীর সুর বদলে যায়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে শতাব্দী রায় জানান, সমস্যা মিটে গেছে।শতাব্দী বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই তৃণমূলে রয়েছি।এই লড়াই আমাদের সবার লড়াই।একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।

কিন্তু, এর আগে শতাব্দী যেভাবে দলের একাংশের ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন, তেমন সেই ক্ষোভের কথা জানিয়ে যে কার্যত কোনও লাভ হয় না, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।

এরই মধ্যে বীরভূমের রাজনীতিতে শতাব্দীর বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত অনুব্রত মণ্ডল নরম সুরে হলেও শতাব্দীর সম্পর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন।

এরপরই কুণাল ঘোষ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শতাব্দী রায়ের বৈঠক এবং আপাতত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা। শতাব্দী বলেছেন, সব সমস্যা মিটেছে। তৃণমূলেই থাকছি।

এরপর চিত্রনাট্যে নতুন মোড় আসে কিনা, সেই উত্তর দেবে সময়।