সুদীপ চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুর:  সাম্প্রতিককালে ইসলামপুর তথা উত্তর দিনাজপুর জেলায় বিজেপির আন্দোলনের পীঠস্থান দাড়িভিট। আর এই দাড়িভিটের নাম শুনলেই মনে পরে যায় গুলিতে নিহত দুই ছাত্রের কথা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্য়ু হয় তাঁদের। কিন্তু বিজেপির আন্দোলনের পীঠস্থান হলেও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দেবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে আহত দুই ছাত্রের পরিবার। শুধু ভোটই নয়, ইসলামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে ওই ছাত্রদের সমাধিস্থলে পর্যন্ত ঢুকতে দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।


ইটাহার ও করনদিঘি আসন বাদে বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। ইসলামপুর আসন থেকে স্থানীয় চিকিৎসক সৌম্যরুপ মণ্ডলকে প্রার্থী করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ও প্রার্থী বদলের দাবিতে এদিন দুপুরে দাড়িভিট এলাকায় বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দলীয় সমর্থকরা। এই বিক্ষোভ আন্দোলনে সামিল হয়েছে দাড়িভিট কাণ্ডে নিহতদের পরিবার।


নিহত এক ছাত্র তাপস বর্মনের মায়ের অভিযোগ, চিকিৎসক সৌম্যরুপ মণ্ডল কোনও যোগাযোগ রাখেন না। উনি বলেছেন আমাদের ছেলের সমাধিস্থলে এসে শপথ নিয়ে প্রচার শুরু করবেন। কিন্তু সেটা হতে দেব না। আমরা বিজেপির সঙ্গে আছি কিন্তু প্রার্থী পছন্দ নয়। শুধু তাই নয়, দেবশ্রী চৌধুরীকেও তাঁরা প্রার্থী অপছন্দের বিষয়টি জানিয়েছেন বলে দাবি তাপস বর্মনের মায়ের।


২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইসলামপুরের দাড়িভিট হাই স্কুলে বাংলা ভাষায় শিক্ষকের দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। সেই আন্দোলন আয়ত্বে আনতে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। অভিযোগ পুলিশের গুলিতে রাজেশ সরকার ও তাপস বর্মন নামে দুই ছাত্র মারা যায়। আরেক ছাত্র গুলিতে মারাত্মক আহত হয়। দোষী পুলিশদের শাস্তি ও সিবিআই তদন্তের দাবিতে এলাকার বাসিন্দারা আন্দোলন শুরু করে।


বিজেপি প্রথম থেকেই এই আন্দোলনের পুরোভাগে থাকে। এই আন্দোলনের জেরে ওই স্কুল প্রায় ৩ মাস বন্ধ থাকে। বিজেপি এর প্রতিবাদে রাজ্যে ধর্মঘট পর্যন্ত ডেকেছিল।  পুলিশের সঙ্গে বিজেপির আন্দোলনকারীদের একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। ওই আন্দোলন চলাকালীন বিজেপি  বাদে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এলাকায় ঢুকতে পারেনি। রাজ্য সরকার ঘটনার তদন্তের ভার সিআইডি-কে দেয়। কিন্তু সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড় পরিবার নিহত দুই ছাত্রের মৃতদেহ সৎকার না করে এলাকার নদীর পাড়ে সমাধিস্থ করে রাখে। লোকসভা নির্বাচনে দেবশ্রী চৌধুরী প্রার্থী হয়ে সেই সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে নিহত দুই ছাত্রের পরিবারের সাথে দেখা করে তার প্রচার শুরু করে। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি শপথ নেওয়ার সময়ও ওই দুই নিহত ছাত্রের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই দুই পরিবারকে সিবিআই তদন্তের আশ্বাসও দেওয়া হয়। সেই থেকেই দাড়িভিট এই জেলায় বিজেপির শক্ত ঘাটি তথা পীঠস্থান হয়ে ওঠে।